বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা পরবর্তী বিশ্বে চ্যালেঞ্জ আরও কঠিন

করোনাভাইরাস পরবর্তী পরিস্থিতিতে বহু দেশকে অনেক কিছু নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। বাজার অর্থনীতি বা নব্য উদারীকরণের বিকল্প নিয়ে ভাবনা-চিন্তা শুরু হবে। চীনই প্রথম করোনাভাইরাসকে মোকাবিলা করে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে চলেছে। সেখানে অর্থনীতির চাকা আস্তে আস্তে ঘুরা শুরু করেছে। জনসংখ্যা অনুপাতে এখন বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা উন্নত দেশগুলোর থেকে বেশ কম। একে যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে বাংলাদেশেও চীনের মতো দ্রম্নত স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
আরিফ আনজুম
  ২২ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

বিশ্বে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর প্রায় দশ মাস হতে চলল। প্রায় সব দেশে এ ভাইরাসের সংক্রমণ বা সংক্রমণে মৃতু্য বিদ্যমান। কোথায় গিয়ে থামবে, তা এখনো বলতে পারছেন না কোনো চিকিৎসাবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ কেউই। তবে প্রাকৃতিক নিয়মে একদিন এই সংক্রমণ বন্ধ হবেই। অনেক মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। অনেকের মৃতু্য হয়েছে। তবে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার সংখ্যাও কিন্তু কম নয়। বাংলাদেশে আক্রান্তের হার মৃতু্যর তুলনায় অনেক কম।

তবে কে করোনায় আক্রান্ত, কে আক্রান্ত নন, তা বোঝার জন্য প্রয়োজন পরীক্ষা। সেই পরীক্ষা না হলে বোঝা কঠিন, আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যাটা কত। আমাদের দেশও পরীক্ষার গড় হারে অনেক ফারাক আছে। আবার জেলায় জেলায় পার্থক্য আছে। ঢাকার তুলনায় চট্টগ্রামসহ বহু বিভাগে পরীক্ষা কম হয়েছে। আবার স্বাস্থ্য খাতে খরচের দিকে তাকালে দেখা যাবে, উন্নত দেশগুলোর তুলনায় মাথাপিছু খরচ উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশে অনেক কম। আমাদের দেশে বিভিন্ন জেলার মধ্যেও তারতম্য রয়েছে। নব্য উদারীকরণের যুগেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্বাস্থ্য খাতে খরচ জিডিপির ৮ থেকে ৯ শতাংশ। যদিও তা স্বাস্থ্যবিমাসহ। ইউরোপের দেশগুলোতে তা ৬ থেকে ৭ শতাংশ। সেই তুলনায় বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় জিডিপির নগণ্য শতাংশ। বাংলাদেশে প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থাই ভীষণ অবহেলিত। যেমন- প্রতি ১০ হাজার মানুষের জন্য হাসপাতালে শয্যার সংখ্যা এ দেশে মাত্র ৮। চীনে সেই সংখ্যা ৪২, ভিয়েতনামে ২৬।

অন্যদিকে, বাংলাদেশে চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা কেন্দ্রীভূত বড় বড় শহর এলাকায়, তা সরকারি হোক বা বেসরকারি হোক। চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদের মাত্র ৩১ শতাংশ নিযুক্ত গ্রামে। অথচ আমাদের দেশে ৬৭ শতাংশ মানুষ এখনও গ্রামে বসবাস করে। যদিও এখনো পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতু্যর সংখ্যায় বাংলাদেশ বা উন্নয়নশীল দেশগুলোর থেকে উন্নত ধনতান্ত্রিক দেশগুলো অনেক এগিয়ে রয়েছে। মানুষ এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে এখন। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো দেশে, যেখানে বিপুলসংখ্যক মানুষ গরিব ও অনগ্রসর। বাংলাদেশে রোজগারের সঙ্গে যুক্ত মানুষের ৯০ শতাংশের বেশি অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমজীবী। এদের বিপুলসংখ্যক পরিযায়ী বা মরশুমি। এ মুহূর্তে এ রকম কয়েক লাখ মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে বিভিন্ন জেলায়। এদের বেশির ভাগই এখন কর্মহীন। আজ হোক বা কাল হোক, করোনাভাইরাসের তান্ডব সাময়িকভাবে হলেও কমবে। কিন্তু স্বাভাবিক অবস্থা কি ফিরবে? এ প্রশ্নটা আজকে আমাদের দেশে মূল আলোচ্য এখন। অনেকে বিশেষ করে শিক্ষিত মধ্যবিত্তরা ভাবছেন, করোনাভাইরাস উঠে গেলেই সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে। বিষয়টি অত সহজ নয়। এটা ঠিক, এই যুদ্ধে করোনা নয়- মানুষই জয়ী হবে। কিন্তু শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর প্রায় সব দেশে মানুষ অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে হয়ে যাবে বিধ্বস্ত। অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করছেন, আসন্ন পরিস্থিতি প্রথম বা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর অবস্থা থেকেও খারাপ হবে। প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পৃথিবী এত বিশ্বায়িত ছিল না।

আজকের পৃথিবীকে বলা হয় গেস্নাবাল ভিলেজ। একে অন্যের উপর নির্ভরশীল। এরপর প্রায় সব দেশেই চাহিদা ও জোগানের সংকট দেখা দেবে। সংকট দেখা দেবে উৎপাদনেও। কমবে উপভোগ, আমদানি-রপ্তানি এবং মোট উৎপাদন বৃদ্ধির হার। কোনো দেশের পক্ষেই এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন। চিনের মতো দেশ অভ্যন্তরীণ বাজার সুবিধাজনক অবস্থায় থাকলেও এ পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন। ইতিমধ্যে সেখানে গাড়ি বিক্রি ৮০ শতাংশ কমে গিয়েছে। তারা নিশ্চিত নয়, গাড়ির চাহিদা নতুন করে বৃদ্ধি পাবে কিনা। বিশ্বে উৎপাদনভিত্তিক শিল্পই সব চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষেত্র হতে চলেছে। এ ক্ষতির ব্যাপক প্রভাব পড়বে পরিষেবা ক্ষেত্রে। বহু কর্মক্ষেত্র বন্ধ হয়ে গেছে। বিশেষ করে ওয়ার্কশপ, মেরামতি ক্ষেত্র, পরিবহণ, খুচরা ও পাইকারি ব্যবসা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জনপরিষেবা ব্যবস্থা। প্রভাব পড়েছিল সংবাদমাধ্যমেও। বাংলাদেশের মতো দেশে ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প, নির্মাণশিল্প, ছোট ছোট দোকান ইত্যাদি মুখ থুবড়ে পড়েছে। প্রতিটি দেশ চাইবে এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারি ব্যয় হ্রাস করতে। তার ফলে সরকারি ক্ষেত্রে নতুন কর্মী নিয়োগ হবে না। বহু রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্র বিলগ্নিকরণ করার চেষ্টা হলেও ক্রয় করায় উৎসাহী-উদ্যোগী পাওয়া যাবে না। সরকারি এবং বেসরকারি ক্ষেত্র বাংলাদেশের মতো দেশে চেষ্টা করবে সব সংকটের বোঝা শ্রমিকদের ওপর চাপিয়ে দিতে। অর্থাৎ শ্রমিকের সংখ্যা হ্রাস করতে, মজুরি কমাতে। সামগ্রিকভাবে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে শুধু মন্দা নয়, পরিণতি হলো চরম হতাশা। এ সময় বাংলাদেশসহ বহু দেশে রাষ্ট্রীয় খরচ বৃদ্ধি করতে হয়েছে। মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ নয়, দেশের সব সাধারণ মানুষের হাতে অর্থের ব্যবস্থা করতে হয়েছে।

এ সময় আবার দেশের রাজস্ব আয় ভীষণভাবে হ্রাস পাচ্ছে। কারণ সব দেশে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড অনেক কমে যাচ্ছে। সাধারণ বিমা বা স্বাস্থ্যবিমা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারি, বেসরকারি বিমান পরিবহণ ক্ষেত্র মুখ থুবড়ে পড়ছে। ফলে বাংলাদেশের মতো দেশে কোষাগারে ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। বৃদ্ধি পাচ্ছে অপ্রত্যক্ষ কর, যার বোঝা বইতে হচ্ছে গরিবদের। বহু অর্থনীতিবিদ বলছেন, এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারি খরচ এবং সাধারণ মানুষের জন্য দৈনন্দিন খরচ বৃদ্ধি করতে হবে। বাজারে অর্থের সরবরাহ বাড়াতে প্রয়োজনে নতুন করে নোট ছাপাতে হবে। এর ফলে মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকবে। এর সঙ্গে দেখা দিতে বাধ্য নতুন নতুন সামাজিক সমস্যা। দুটি কথা নতুন করে আমাদের দেশের মানুষ শুনছে, লকডাউন ও সোশ্যাল ডিসটেন্সিং। আমরা এতদিন শুনে আসছিলাম লকআউট এবং সোশ্যাল ইনক্লুশনের কথা। লকডাউন এবং সোশ্যাল ডিসটেন্সিং ক্রমে মানুষকে অমানবিক করে তুলতে পারে। মানুষকে করে তুলতে পারে স্বার্থপর। যাদের কিছু নেই, যারা আর্থিক ও সামাজিকভাবে দুর্বল, তাদের কাছে উন্নয়ন ও পরিষেবার সুফল পৌঁছে দেওয়া, দারিদ্র্য প্রশমন এবং অংশগ্রহণ ইত্যাদি ছিল সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্টের মূল কথা। এ পরিস্থিতিতে এ তত্ত্ব কতটা প্রাসঙ্গিক থাকবে, তা নিয়ে অনেকে সন্দিহান। ফলে এক স্বার্থপরতার অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থার জন্ম নিতে পারে। মানুষ সামাজিকভাবেও উদ্বিগ্ন এ সব আশঙ্কায়। কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণে তাই আক্রান্ত হতে পারে দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক ক্ষেত্র। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইটা যতটা কঠিন, তার থেকে বেশি কঠিন হবে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে বিপর্যয় মোকাবেলা, যা ভবিষ্যতে একটি স্থায়ী ক্ষতের সৃষ্টি করতে পারে।

ভাইরাসের ফলে দেশের অর্থনীতি ও জীবনের সুরক্ষার প্রশ্নের মুখে। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন সমাজে আর্থসামাজিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া অংশের মানুষের দিকে। বিশেষ করে প্রতিবন্ধী বা বিশেষভাবে সক্ষম, বৃদ্ধ, মহিলা, শিশু, দিনহাজিরার মজুর, বস্তিবাসী, কারাবন্দি, শহরের জঞ্জাল অপসারণ কর্মী, উভয় লিঙ্গ মানুষ, যৌনকর্মী, ক্ষুদ্র কৃষক বা খেতমজুররা সংকটে পড়ছে। আমাদের দেশে যত মানুষ কর্মহারা হচ্ছে, তাদের জন্য আমাদের দেশ বা বিভিন্ন জেলায় পে-প্যাকেট,র্ যাশন, মজুরি অব্যাহত রাখার যে পদক্ষেপ ঘোষণা করেছে, তা প্রকৃত প্রয়োজনের ধারে-কাছেও যাবে না। আমাদের মনে রাখতে হবে, প্রাকৃতিক ভারসাম্যের অবনতির সঙ্গে যুক্ত কোভিড-১৯ এর মতো ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব। একবিংশ শতাব্দী উন্নয়ন ও অগ্রগতির, নগরায়ণেরও। কিন্তু তা হচ্ছে প্রকৃতিকে ধ্বংস করে। চলছে নির্বিচারে বৃক্ষচ্ছেদন, পরিকাঠামো উন্নয়নের নামে খনিজ সম্পদের লুট ইত্যাদি। চলছে জলাভূমি বোজানো ও ভূমির অপব্যবহার। অতিরিক্ত লাভ, লোভ, মুনাফা অর্জনের স্বার্থে কিছু মানুষ পৃথিবীকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে। এ সবের বিরুদ্ধে দেশে দেশে মানুষকে সচেতন ও সংঘবদ্ধ করাও কিন্তু এখন তাই কোভিড মোকাবিলার অন্যতম অস্ত্র। এ রকম একটি সময়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা। বিশেষ করে গ্রাম বা এলাকার ওয়ার্ডকে সঙ্গে নিয়ে তৃণমূল স্তরের প্রয়োজনকে ভিত্তি করে স্থানীয় সম্পদের ব্যবহার ও গণউদ্যোগ সৃষ্টির মাধ্যমে উন্নয়ন করা হলে, তা অনেক বেশি সাসটেনেবল হবে। সরকারের উচিত তাই গ্রাম পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী বা ক্ষমতায়িত করা। এ রকম এক পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী এক নতুন সামাজিক ব্যবস্থা সৃষ্টির সম্ভাবনাও দেখা দিতে পারে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যদিয়ে বিশ্বের অনেক দেশে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল। তেমনই আবার পাশ্চাত্যের বহু দেশে কল্যাণকামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। এরপর পৃথিবীর সব দেশেই কিন্তু কিছু না কিছু উন্নয়ন বা অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু আবার সব দেশের মানুষই কিছু না কিছু জীবন ও জীবিকার সুরক্ষার অভাব বোধ করছে।

করোনাভাইরাস পরবর্তী পরিস্থিতিতে বহু দেশকে অনেক কিছু নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। বাজার অর্থনীতি বা নব্য উদারীকরণের বিকল্প নিয়ে ভাবনা-চিন্তা শুরু হবে। চীনই প্রথম করোনাভাইরাসকে মোকাবিলা করে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে চলেছে। সেখানে অর্থনীতির চাকা আস্তে আস্তে ঘোরা শুরু করেছে। জনসংখ্যা অনুপাতে এখন বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা উন্নত দেশগুলোর থেকে বেশ কম। একে যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে বাংলাদেশেও চীনের মতো দ্রম্নত স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

চীনের মতো বাংলাদেশেও রয়েছে বিপুল জনসংখ্যা ও অভ্যন্তরীণ উপভোক্তা। রয়েছে বিপুলসংখ্যক শহুরে মধ্যবিত্ত ও তরুণ প্রজন্ম। এরাই প্রকৃত পক্ষে উপভোক্তা। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রাজনৈতিক সদিচ্ছা। প্রয়োজন উন্নত চিন্তা ও আদর্শবোধ, চাই দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগের মানসিকতা। এর ওপর নির্ভর করে কতটা সময়ের মধ্যে আমাদের দেশে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

আরিফ আনজুম : কলাম লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<116025 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1