পঙ্গু হাসপাতালে অনিয়ম

সুষ্ঠু চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত হোক

প্রকাশ | ২২ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। আর জনসাধারণের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করাই যেখানে একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের বিষয়, সে ক্ষেত্রে যদি অতিরিক্ত ব্যয়সহ নানা ধরনের অনিয়মের ঘটনা ঘটে তবে তা কতটা উদ্বেগের বলার অপেক্ষা রাখে না। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, টাকা ছাড়া সেবা মেলে না রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিকস হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান বা পঙ্গু হাসপাতালে। তথ্য মতে, এখানে চিকিৎসা পেতে হলে গেট থেকে শুরু করে বেড পাওয়া পর্যন্ত পদে পদে টাকা ছড়াতে হয় রোগীদের। যার সঙ্গে জড়িত রয়েছে হাসপাতালের তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী তথা টেকনোলজিস্ট, আয়া, ওয়ার্ডবয়, ব্রাদার, ড্রেসাররা। ফলে আকস্মিক দুর্ঘটনায় চিকিৎসা নিতে এসে সরকারি ফি'র বাইরে রোগীদের পদে পদে টাকা খরচ করতে হচ্ছে! আবার দিনের পর দিন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নাকের ডোগায় এমন অনিয়ম চললেও কর্মচারী সিন্ডিকেট ও দালাল চক্রের কাছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অসহায় এমনটিও জানা যাচ্ছে। আমরা মনে করি, সৃষ্ট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার বিকল্প থাকতে পারে না। কেননা, সরকারি ফি'র বাইরে টাকা নেওয়াসহ নানা ধরনের অনিয়ম হলে একদিকে রোগীদের ভোগান্তি ও ব্যয় বাড়ে, অন্যদিকে চিকিৎসা ব্যবস্থায় নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে- যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। প্রসঙ্গত উলেস্নখ করা দরকার, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর অভিভাবকদের অভিযোগ, পঙ্গু হাসপাতালে আসা প্রায় ৯৮ ভাগ রোগীকে সরকারি ফির বাইরেও পদে পদে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। দিনের পর দিন এই হাসপাতালের কিছু অসাধু কর্মচারী সিন্ডিকেট সেবার নামে বাণিজ্যে মেতে উঠলেও তা বন্ধে কোনো ধরনের কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। বরং প্রতিবাদ করতে গেলে স্টাফদের দুর্ব্যবহারের শিকার ও চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত হচ্ছেন নিরুপায় রোগী ও স্বজনরা। এছাড়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, অনিয়ম প্রমাণিত হওয়ার পর বিভিন্ন সময় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলেও প্রতিষ্ঠানটি ঘিরে গড়ে ওঠা দালাল চক্রের কাছে অসহায় হয়ে পড়ছে হাসপাতাল প্রশাসন। আমরা মনে করি, যত দ্রম্নত সম্ভব এই পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনে কঠোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। সরকার চিকিৎসার আধুনিকায়ন করছে, রোগী যাতে সুচিকিৎসা পায় তার জন্য নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ ও তার বাস্তবায়ন করছে; এমতাবস্থায় যদি দালাল চক্রের কারণে রোগীরা জিম্মি হয়, এমনকি হাসাপাতাল প্রশাসন অসহায় হয়ে পড়ে তবে তা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক পরিস্থিতিকে স্পষ্ট করে- যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। সঙ্গত কারণেই এর পরিপ্রেক্ষিতে দ্রম্নত কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। খবরে এমন বিষয়ও উঠে এসেছে যে, অসাধু কিছু মেডিকেল টেকনোলজিস্ট বিভিন্ন সময় রোগীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে। এমনকি এই বিষয়টি জানার পর কর্তৃপক্ষ ওইসব কক্ষে সিসি ক্যামেরা বসালে অনেক সময় তা বন্ধ করে হাসপাতালে অপকর্ম চালাচ্ছে! নানা ধরনের অনিয়মের কারণে শুধু রোগীই নন, চিকিৎসকরা পর্যন্ত অসহায় হয়ে পড়ছেন এমনটিও জানা যাচ্ছে। আমরা বলতে চাই, এমনিতেই চিকিৎসা ব্যয়সহ নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ আছে, এ ছাড়া রোগীর তুলনায় চিকিৎসক ও সরঞ্জাম সংকটের বিষয়ও আলোচনায় এসেছে বিভিন্ন সময়ে। আবার যদি এইভাবে সিন্ডিকেট বা নানা ধরনের চক্রের কারণে রোগীরা অসহায় হয়ে পড়ে, ব্যয় বাড়তে থাকে, কিংবা নানা ধরনের অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়, তবে বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া অপরিহার্য। এ ক্ষেত্রে সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো বিকল্প থাকতে পারে না। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, এমন বিষয়ও খবরে উঠে এসেছে যে, তিনজন টেকনোলজিস্টের অপকর্ম ধরতে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা এবং তদন্তে রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ার বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জানানোর পর অধিদপ্তর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়। পরে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গত ৬ অক্টোবর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) এক আদেশে তিন টেকেনোলজিস্টকে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়; কিন্তু ওই তিন সদস্য প্রশাসনিক ট্রাইবু্যনাল থেকে বদলির ওপর স্থগিতাদেশ এনে জমা দেন। জানা যাচ্ছে, এখন তারা এবং সাঙ্গোপাঙ্গরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। ফলে সামগ্রিক এই পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিশ্চিত হোক পাশাপাশি সুষ্ঠু চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করাসহ সব ধরনের অনিয়ম বন্ধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা জারি থাকুক এমনটি কাম্য।