ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে সরকার আলুর দাম পুনর্নির্ধারণ করেছে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে খুচরা বাজারে এক কেজি আলুর দাম ৩০ টাকায় বেঁধে দিয়ে তা কার্যকর করতে না পেরে এবার ৩৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। এছাড়া কোল্ড স্টোরেজ পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু ২৭ টাকা এবং পাইকারিতে ৩০ টাকা কেজি বেঁধে দিয়ে মঙ্গলবার দাম পুনর্নির্ধারণ করে দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। নতুন দর বেঁধে দিয়ে সেই দামে যাতে সব পর্যায়ে আলু বিক্রি হয় তা নিশ্চিত করতে ডেপুটি কমিশনারদের (ডিসি) প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সভা থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। মূলত ব্যবসায়ীদের স্বার্থে আলুর দাম বাড়িয়ে পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী বলেছেন, পুলিশর্ যাব দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। বাজার নির্ভর করে চাহিদা ও সরবরাহের ওপর। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, চাহিদা ও সরবরাহের ওপর নির্ভর করে কি এ দেশের ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়ায়। নাকি সুযোগ বুঝে অজুহাত খুঁজে তারা নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায়। এবার হঠাৎ করেই আলুর দাম দ্বিগুণ হলো, এটা কি সরবরাহ সংকট নাকি ব্যবসায়ীদের কারসাজি? খুচরা বাজারে বাড়তি ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটি। দাম নিয়ন্ত্রণে মাঠে নামে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও প্রশাসনের একাধিক টিম। অভিযান ও জরিমানার প্রতিবাদে ব্যবসায়ীরা আলু বেচাকেনা বন্ধ করে দেয়। এরপর সরকার বাধ্য হয়ে আলুর দাম পুনর্নির্ধারণ করেছে।
ভাতের বিকল্প হিসেবে আলুর কথা এক সময় খুব ভাবা হতো। বলা হতো 'ভাতের পরিবর্তে আলু খান, ভাতের ওপর চাপ কমান।' খাদ্যমান ও পুষ্টিগুণের দিক থেকে আলুর কদর অনেক বেশি। আলুতে প্রচুর পরিমাণে কার্বহাইড্রেড রয়েছে। আলুর সাহায্যে নানা ধরনের মুখরোচক খাবার তৈরি হয়। তরকারিতে আলু একটি অপরিহার্য দ্রব্য। বেশ কয়েক বছর ধরেই দেশে সবচেয়ে সহজলভ্য যে পণ্যটি, সেই আলুর দাম বাড়তে বাড়তে প্রচলিত বজারমূল্যের দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এটা সত্যি বিস্ময়কর।
সরকারি কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের হিসেবে, গত মৌসুমে প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ পড়েছে ৮ টাকা ৩২ পয়সা। হিমাগারে আলু সংরক্ষণ ও বিভিন্ন স্তরের ব্যবসায়ীদের মুনাফার পর পণ্যটির দাম পাইকারি পর্যায়ে ২৫ এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৩০ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়। বাংলাদেশে গত মৌসুমে এক কোটি ৯ লাখ টন আলু উৎপাদন হয়েছে, যদিও পণ্যটির বার্ষিক চাহিদা ৭৭ লাখ টন। সেই হিসাবে ৩১ লাখ টন আলু বিদেশে রপ্তানির জন্য প্রস্তুত থাকার কথা। আলুর প্রচুর মজুত ও সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
মনে রাখতে হবে, গোল আলু এমন একটি পণ্য যা সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আবার ডালজাতীয় পণ্য হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। এমনকি সব ধরনের মাছ, মাংস ও সবজি রান্নার ক্ষেত্রেও গোল আলু ব্যবহার হয়। ফলে সারা বছর গোল আলুর চাহিদা থাকে। কিন্তু বছরব্যাপী চাষ হয় না। যদিও ঠাকুরগাঁও এর কৃষকরা আগাম আলু চাষ শুরু করেছে। নভেম্বরের শেষে নাকি তারা আলু তুলতে পারবে। এটা ভালো খবর।
মনে রাখতে হবে উৎপাদনে বিস্ময়কর সাফল্যই কেবল নয়, আলু এখন দেশের অন্যতম অর্থকরী ফসলও। অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেরও। কৃষকরা যাতে উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য পায় তা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকেই। পাশাপাশি আলু যেহেতু পচনশীল পণ্য তাই পর্যাপ্ত হিমাগার তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি উচ্চমূল্যও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এ জন্য বাজার মনিটরিং এর বিকল্প নেই।