বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি জনজীবনে অস্বস্তিকর অবস্থা সৃষ্টি করেছে

নিত্যপণ্যের লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাদের আয়ের একটা বড় অংশ চলে যাচ্ছে চাল-ডাল-শাকসবজিসহ নিত্যপণ্য কিনতে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা জনগণের কাছে সরকারের সুকীর্তি হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। সরকারের কাছ থেকে মানুষ যে দুটি বিষয় প্রত্যাশা করে, তার একটি হলো আইনশৃঙ্খলার নিয়ন্ত্রণ, অন্যটি হচ্ছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ। এ ব্যাপারে সরকার তাদের সাধ্যের মধ্যে সব কিছু করবে, জনগণ এটাই দেখতে চায়।
আর কে চৌধুরী
  ২৩ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

পেঁয়াজের পর আলুর মূল্য বৃদ্ধিতে জনমনে হতাশা ও ভোগান্তি বেড়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে আলুর মূল্য বৃদ্ধিকে অযৌক্তিক বলে অভিহিত করা হয়েছে। মূল্য বৃদ্ধির পেছনে সিন্ডিকেটের ভূত জড়িত এমনটিও আবিষ্কার করা হচ্ছে। খোলা বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০ টাকা। অন্যান্য সবজির তুলনায় এ দামকে বেশি বলার সুযোগ নেই। তবে এক সপ্তাহের মধ্যে ৩৫ থেকে আলুর দাম ৫০ টাকায় পৌঁছার কারণ কী তা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন ভোক্তারা। বাণিজ্যমন্ত্রী আলুর দাম প্রতি কেজি ৩০ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও তা মান্য করার প্রয়োজন বোধ করছে না কেউ। চেইন শপগুলোতেও আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৯ টাকা কেজি দরে, ভ্যাটসহ ৫০ টাকায়। চলতি বছর আলুর উৎপাদন হয়েছে কিছুটা কম। তবে এ পরিমাণ স্বাভাবিক চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি। কিন্তু একদিকে করোনাকাল অন্যদিকে একের পর এক বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে অন্যসব সবজি নষ্ট হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই আলুর ওপর চাপ পড়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর আলুর ব্যবহার বেড়েছে অন্তত ১০ ভাগ বেশি। এ বছর বিপুল পরিমাণ আলু বিদেশে বিশেষত নেপালে রপ্তানি হয়েছে।

আলু রপ্তানিতে রপ্তানিকারকদের শতকরা ২০ ভাগ প্রণোদনা দেওয়ায় বিদেশি আমদানিকারকরা বাংলাদেশ থেকে আলু কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছে। এ মুহূর্তে দেশের হিমাগারগুলোয় যে আলু রয়েছে তাতে সংকট হওয়ার কথা নয়। তবে মজুতকারীরা আলু বিক্রিতে ধীরে চল নীতি গ্রহণ করায় বাজারে তার প্রভাব পড়েছে। দাম ভোক্তাদের ক্ষমতার মধ্যে রাখতে টিসিবির উদ্যোগে আলু বিক্রি শুরু হয়েছে ২৫ টাকা কেজিতে, যা একটি ভালো উদ্যোগ। আলুর দাম বৃদ্ধিতে অস্বাভাবিকতা না থাকলেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে যথাযথ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে পারেনি। তাদের উচিত ছিল অন্যসব সবজির ফলন মার খাওয়ায় আলু যে শেষ ভরসা তা বুঝে সময় থাকতে রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা। দেরিতে হলেও রপ্তানিতে বাদ সাধা হয়েছে। কিন্তু এ বিলম্বই যে এ নিত্যপণ্যটির দাম রাতারাতি বৃদ্ধি করেছে তা এক বড় সত্য। এ ব্যাপারে কর্তাব্যক্তিরা ভবিষ্যতে চোখ-কান খোলা রাখবেন- এমনটিই প্রত্যাশিত।

নিত্যপণ্যের লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাদের আয়ের একটা বড় অংশ চলে যাচ্ছে চাল-ডাল-শাকসবজিসহ নিত্যপণ্য কিনতে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা জনগণের কাছে সরকারের সুকীর্তি হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। সরকারের কাছ থেকে মানুষ যে দুটি বিষয় প্রত্যাশা করে, তার একটি হলো আইনশৃঙ্খলার নিয়ন্ত্রণ, অন্যটি হচ্ছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ। এ ব্যাপারে সরকার তাদের সাধ্যের মধ্যে সব কিছু করবে, জনগণ এটাই দেখতে চায়।

দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে পালস্না দিয়ে জীবন চালাতে গিয়ে সৎ ও সচ্ছল মানুষের জীবনে ত্রাহি অবস্থা। সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা যেমন সীমিত থাকে, তেমনি জিনিসপত্রের বাজারদর দ্বারাও তা নিয়ন্ত্রিত হয়। মানুষের আয় যতটা বাড়ে সেই তুলনায় যদি জিনিসপত্রের দাম বেশি বৃদ্ধি পায় তাহলেই তার ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়। এ ক্রয়ক্ষমতাই হলো তার 'প্রকৃত আয়'। 'প্রকৃত আয়' বৃদ্ধি না পেয়ে যদি একই জায়গায় স্থির থাকে তাহলেই শুরু হয় আশাভঙ্গের নিদারুণ যন্ত্রণা। আর 'প্রকৃত আয়' কমে গেলে যে যন্ত্রণা- তার মাত্রার কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। গণমানুষের আয়ের পরিমাণ ও বাজারদর- এ দুইয়ের মধ্যে যথাযথ সামঞ্জস্য বিধান করাটাই হলো, দ্রব্যমূল্য সমস্যা সমাধানের আসল উপায়। বাজার দর বৃদ্ধির তুলনায় আয় বাড়ল কিনা, কিংবা উল্টো করে বললে, আয় বৃদ্ধির তুলনায় বাজার দর কম বাড়ল কিনা- সেটিই দেখার বিষয়। চাল-ডাল-তেল-চিনির দাম যদি পাঁচগুণ বাড়ে তাতে মানুষের কোনো যন্ত্রণাই তেমন থাকবে না যদি তাদের সবার আয় পাঁচগুণের বেশি বৃদ্ধি পায়।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির শিকার প্রধানত দেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ- তথা শ্রমিক, ক্ষেতমজুর, কৃষক, পেশাজীবী, কারিগর, নির্দিষ্ট আয়ের কর্মচারী প্রমুখ। মেহনতি মানুষের মজুরি বাড়ে না, কৃষক ফসলের যুক্তিসঙ্গত দাম পায় না, কর্মচারীদের বেতন দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাড়ে না। কিন্তু জিনিসপত্রের দাম ক্রমাগতই বাড়তে থাকে এমনকি লাফিয়ে লাফিয়েও। ফলে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা তথা 'প্রকৃত আয়' কমতে থাকে। শুরু হয় দ্রব্যমূল্য নিয়ে মানুষের যাতনা।

আয় বাড়ানো ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এ উভয় দিক থেকে গৃহীত এ সব ব্যবস্থার মাধ্যমেই সাধারণ মানুষের 'প্রকৃত আয়' ও ক্রয়ক্ষমতা স্থিতিশীল রাখা এবং তা ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি করা সম্ভব। কিন্তু এ সব ব্যবস্থা নিতে হবে রাষ্ট্রকে এবং রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সরকারকে। সঙ্গে সঙ্গে, ব্যাপক জনগণ ও সমাজকে এ সব ব্যবস্থা বাস্তবায়নের কাজে সম্পৃক্ত করতে হবে।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি জনজীবনে অস্বস্তিকর অবস্থা সৃষ্টি করেছে। আমাদের সাধারণ মানুষের আয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ফলে লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশের বেশির ভাগ মানুষ বহু চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হন। ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থা বজায় রাখতে অবিলম্বে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রতিহত করতে হবে। দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকারকে অসাধু ব্যবসায়ী, মজুতদার ও কালোবাজারিদের বিরুদ্ধে দ্রম্নত কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। তাহলেই মানুষ মূল্যবৃদ্ধির অভিশাপ ও দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পাবে।

আর কে চৌধুরী : মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ, সাবেক চেয়ারম্যান রাজউক, উপদেষ্টা, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আর কে চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<116131 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1