শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

সড়কে মৃত্যুর বিভীষিকা

নতুনধারা
  ২৩ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

করোনাভাইরাসের কারণে পৃথিবী এক ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখোমুখি। মানুষের জীবন বিপর্যস্ত। আর এ অবস্থার ভেতরেও সড়ক দুর্ঘটনা ও দুর্ঘটনায় মৃতু্য থেমে নেই। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, হবিগঞ্জের মাধবপুরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ট্রাক্টর চাপায় বুধবার ৩ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। রাজশাহীতে দুজন, সিরাজগঞ্জের বেলকুচি ও নীলফামারীর সৈয়দপুরে ট্রাকের ধাক্কায় আরও দুজন নিহত হয়েছেন। যাত্রাবাড়ীতে কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় পুলিশ কনস্টেবল নিহত হয়েছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এভাবে প্রতিনিয়ত সড়কে ঝরছে প্রাণ। সড়কে এমন মৃতু্য কমাতে সরকার ও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি নেওয়া হলেও সুফল মিলছে না। প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনা পঙ্গুত্ব বরণ করছে অসংখ্য মানুষ। এ ক্ষেত্রে উলেস্নখ করা দরকার, যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাব মতে, গত ৫ বছরে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ২৬ হাজার ৯০২টি। এতে মারা গেছেন ৩৭ হাজার ১৭০ জন এবং ৮২ হাজার ৭৫৮ জন আহত হয়েছেন। আর সড়ক দুর্ঘটনার এমন অবস্থার মধ্য দিয়ে গতকাল পালিত হয়েছে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস। আমরা উলেস্নখ করতে চাই, যখন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের সড়ক-মহাসড়কের ব্যাপক উন্নয়ন হলেও দুর্ঘটনা না কমায় উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ, তখন বিষয়টি কতটা উদ্বেগের তা আমলে নেওয়া অপরিহার্য। উন্নত মসৃণ সড়কে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর ফলে সড়ক দুর্ঘটনা কোনো কোনো এলাকায় বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও জানা গেছে। কিছুদিন আগে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তার বেশির ভাগই আলোর মুখ দেখেনি বলেও জানা যাচ্ছে। আমরা মনে করি, এ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে সব ধরনের পদক্ষেপ জারি রাখা। প্রসঙ্গত বলা দরকার, সড়ক দুর্ঘটনায় নানান শ্রেণি-পেশার মানুষ যেমন প্রতিনিয়ত চলে যাচ্ছে না ফেরার দেশে, তেমনি অনেক সম্ভাবনার মৃতু্য হচ্ছে অকালেই। সড়কে দুর্ঘটনার চিত্র আমলে নিলে দেখা যায়, বাস এবং বিপরীতমুখী সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষে, নৈশকোচ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত যান, মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেওয়া, পিকআপভ্যান ও মোটরসাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষ, বাসে মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেওয়াসহ নানাভাবে মৃতু্যর ঘটনা ঘটেছে। ফলে এভাবে যখন সড়কে একের পর এক মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে, তখন সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। সংশ্লিষ্টদের বিবেচনায় নেওয়া দরকার, এর আগে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে নানা ধরনের কারণ চিহ্নিত হয়েছে। বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালনা; বিপজ্জনক অভারটেকিং; রাস্তাঘাটের ত্রম্নটি; ফিটনেসবিহীন যানবাহন; যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা; চালকের অদক্ষতা; চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেডফোন ব্যবহার; মাদক সেবন করে ড্রাইভিং; রেলক্রসিং ও মহাসড়কে হঠাৎ ফিডার রোড থেকে যানবাহন উঠে আসা; রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা; ট্রাফিক আইনের দুর্বল প্রয়োগ এবং ছোট যানবাহন বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণ উঠে এসেছে। আমরা মনে করি সার্বিক বিষয়গুলো আমলে নিয়ে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। সড়ক দুর্ঘটনার সামগ্রিক চিত্র যেমন আমলে নিতে হবে, তেমনি সড়ক দুর্ঘটনার ভয়াবহতা অনুধাবন করাও অপরিহার্য। প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো অঞ্চলে দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে। বিশেষ করে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতু্যর বিভীষিকা থেকে কিছুতেই যেন রক্ষা পাচ্ছে না মানুষ। ফলে এ থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজতে হবে এবং দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, একের পর এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা কেন ঘটছে এবং এর জন্য দোষীদের শনাক্ত করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। দেশে সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণগুলো বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের বিকল্প নেই। এই মৃতু্যর বিভীষিকা এমন, যেন সড়ক পথ একটা মৃতু্যর ফাঁদ! সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক বাস্তবতা অনুধাবন করে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার দুর্ঘটনার কারণগুলো আমলে নেওয়া এবং সেই মোতাবেক কঠোর পদক্ষেপ নিশ্চিত করা। নানা ধরনের অব্যবস্থাপনা ও বেপরোয়া গতির কাছে হারিয়ে যাচ্ছে তরতাজা প্রাণ, গণপরিবহণে অসুস্থ প্রতিযোগিতা এবং রেষারেষির কারণেও দুর্ঘটনাও বাড়ছে এ বিষয়গুলো এড়ানোর সুযোগ নেই। সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য। \হ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে