সমুদ্র অর্থনীতি :সম্ভাবনার উন্মুক্ত দ্বার

সমুদ্রে তেল, গ্যাস, খনিজ ও প্রাণিজ সম্পদ খোঁজার জন্য উচ্চমানের গবেষণা বৃদ্ধি করতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো আমাদেরও সমুদ্র অর্থনীতির উন্নয়নে দক্ষ পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি।

প্রকাশ | ২৪ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

ফুয়াদ হাসান
সমুদ্র অর্থনীতি বা বস্নু ইকোনমি হচ্ছে সমুদ্রের সম্পদনির্ভর অর্থনীতি। সমুদ্রের বিশাল জলরাশি ও এর তলদেশের বিভিন্ন প্রকার সম্পদকে কাজে লাগানোর অর্থনীতি। অর্থাৎ সমুদ্র থেকে আহরণকৃত যে কোনো সম্পদ যদি দেশের অর্থনীতিতে যুক্ত হয়, তাই বস্নু ইকোনমির বা সমুদ্র অর্থনীতির পর্যায়ে পড়বে। সমুদ্র অর্থনীতির ধারণায় সম্পদ সংরক্ষণ, জীবিত সম্পদের টেকসই ব্যবহার, তেল ও খনিজসম্পদ উত্তোলন, জৈব সম্ভাবনা, টেকসই জ্বালানি উৎপাদন এবং সমুদ্র পরিবহণকে অন্তর্ভুক্ত করে পরিকল্পনা করা হয়। সমুদ্র সম্পদের টেকসই ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, উন্নত জীবিকা এবং কর্মসংস্থানের ওপর এখন পৃথিবীর সব দেশই জোর দিয়েছে। দেশের উন্নয়নের এ উপাদান বস্নু ইকোনমি বা সমুদ্র অর্থনীতি নামে পরিচিত। সমুদ্র অর্থনীতির সঙ্গে টেকসই উন্নয়নের প্রসঙ্গটিও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সর্বজনস্বীকৃত আন্তর্জাতিক সংজ্ঞা অনুসারে, টেকসই উন্নয়ন হচ্ছে আশপাশে থাকা সম্পদের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে বর্তমান সময়ের চাহিদা মেটানো, কিন্তু তার ফলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কখনো ঝুঁকির মুখে পড়বে না। ২০১০ সালে বেলজিয়ামের নাগরিক অধ্যাপক গুন্টার পাউলি ভবিষ্যতের অর্থনীতির রূপরেখা প্রণয়নের জন্য জাতিসংঘ কর্তৃক আমন্ত্রিত হন। সেখানেই একটি টেকসই ও পরিবেশবান্ধব মডেল হিসেবে বস্নু ইকোনমির ধারণা দেন। জেনে রাখা ভালো, বিশ্বের কাছে গুন্টার পাউলি টেকসই উন্নয়নের 'স্টিভ জবস' হিসেবে পরিচিত। সমুদ্রের সুনীল জলরাশির অন্তরালে থাকা বিপুল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা যার প্রধান বিষয়। তার ধারণা অনুযায়ী সমুদ্র অর্থনীতিতে, অর্থনৈতিক সম্ভাবনার সঙ্গে সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে সাধারণ জনগণের সুযোগ-সুবিধা, ভাবতে হবে পরিবেশের কথা, থাকতে হবে উদ্ভাবনী এবং গতিশীল ব্যবসায়িক চিন্তা-ভাবনা। ২০১২ সালের ব্রাজিলে রাজধানী রিও ডি জেনিরোতে টেকসই উন্নয়ন শীর্ষক জাতিসংঘ সম্মেলনে প্রথম উত্থাপিত হয় 'বস্নু ইকোনমি'। যেখানে নানান ধারণা দিয়ে বোঝানো হয়, আগামী দিনের জন্য একটি সমুদ্রভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তোলার কথা। যার উদ্দেশ্য হবে মানুষের জীবনমান উন্নয়ন এবং সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠা। পাশাপাশি পরিবেশে ক্ষতির ঝুঁকিও কমিয়ে আনা। বিশ্ব অর্থনীতিতে সমুদ্র অর্থনীতির ধারণা নবীন। নবীন হলেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্থনৈতিক টেকসই উন্নয়ন ও বেকারত্বের ঝুঁকি কমানোর জন্য সমুদ্র অর্থনীতির দিকে ঝুঁকে পড়ছে। প্রতিনিয়ত বিশ্ব অর্থনীতিতে সমুদ্র নানাভাবেই অবদান রেখে চলেছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ৪৩০ কোটিরও বেশি মানুষের ১৫ ভাগ প্রোটিনের জোগান দিচ্ছে সামুদ্রিক মাছ, উদ্ভিদ ও জীবজন্তু। পৃথিবীর ৩০ ভাগ গ্যাস ও জ্বালানি তেল সরবরাহ হচ্ছে সমুদ্রতলের বিভিন্ন গ্যাস ও তেলক্ষেত্র থেকে। ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় অর্থনীতির সিংহভাগ সমুদ্রনির্ভর। সাম্প্রতিক সময়ে দেশটি এমন কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে যা পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করা গেলে সমুদ্র থেকে আহরিত সম্পদের মূল্যমান জাতীয় বাজেটের দশগুণ হবে। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া সমুদ্রসম্পদ থেকে বর্তমানে প্রায় ৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে থাকে। ২০২৫ সালে এ খাত থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলার আয় করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে সে দেশের সরকার। অন্যদিকে প্রতি বছর বিশ্ব অর্থনীতির প্রায় ৩ থেকে ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের কর্মকান্ড সংঘটিত হচ্ছে সমুদ্রকে ঘিরে। সাগর থেকে প্রাপ্ত বায়ু, তরঙ্গ ঢেউ, জোয়ার-ভাটা, জৈব তাপীয় পরিবর্তন এবং লবণাক্তর মাত্রা ইত্যাদির মাধ্যমে ব্যাপক পরিমাণে নবায়নযোগ্য শক্তির জোগান পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। প্রতি বছর পৃথিবীতে সমুদ্র বায়ু ব্যবহারের সক্ষমতা ৫০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি হচ্ছে। সমুদ্র নিয়ে গবেষণা করা বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেভ আওয়ার সির তথ্য মতে, বিশ্বের মোট ম্যাগনেসিয়ামের ৫০ শতাংশই আসে সামুদ্রিক উৎস থেকে। সমুদ্র অর্থনীতি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য এক অপার সম্ভাবনার নাম। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সমুদ্র অর্থনীতির গুরুত্ব কতটুকু তা জানার আগে আমাদের সমুদ্র পরিধি বা সমুদ্র বিজয় সম্পর্কে জেনে নেওয়া প্রয়োজন। ২০১২ সালের ১৪ মার্চ আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতের (পিসিএ) রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ-মিয়ানমার মামলায় মোট প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারেরও বেশি সমুদ্র এলাকার দখল পায় বাংলাদেশ। সেন্ট মার্টিন দ্বীপের জন্য ১২ নটিক্যাল মাইল রাষ্ট্রাধীন সমুদ্র এলাকা, ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বাংলাদেশ-মিয়ানমার দ্বিপক্ষীয় একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল সীমানা এবং মহীসোপানে অধিকার প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশ। এরপর ২০১৪ সালের ৮ জুলাই বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার বিরোধপূর্ণ সমুদ্র সীমানার আনুমানিক ২৫ হাজার ৬০২ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে ১৯ হাজার ৪৬৭ বর্গকিলোমিটারের অধিকার পায় বাংলাদেশ। বিশাল এ জলসীমাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব হ্রাস, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ঔষধ শিল্পের উন্নয়নসহ অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করা সম্ভব। বাংলাদেশের স্থলভাগে যে পরিমাণ সম্পদ বিদ্যমান তার সঙ্গে তুলনা করে বলা যায়, এ সম্পদের প্রায় সমপরিমাণ (৮১ শতাংশ) সম্পদ সমুদ্র তলদেশে আছে। আন্তর্জাতিক সমুদ্র সম্পদ গবেষকরা বহুকাল আগে থেকেই বঙ্গোপসাগরকে বিভিন্ন ধরনের সম্পদের খনি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ভারতবর্ষের পৌরাণিকে বঙ্গোপসাগরের নাম দেওয়া হয়েছিল 'রত্নাকাগার'। বঙ্গোপসাগরে খনিজ সম্পদের মধ্যে রয়েছে প্রায় ১৭ ধরনের খনিজ বালি। এর মধ্যে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায় জিরকন, রুটাইল, সিলিমানাইট, ইলমেনাইট, ম্যাগনেটাইট, গ্যানেট, কায়ানাইট, মোনাজাইট, লিকোক্সিন ইত্যাদি। যার প্রত্যেকটি পদার্থই মূল্যবান, তবে মোনাজাইট অতি মূল্যবান পদার্থ। এ তেজস্ক্রিয় পদার্থ পারমাণবিক বোমা তৈরিতে ও পারমাণবিক চুলিস্নতে শক্তি উৎপাদক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের তথ্যমতে, দেশের সমুদ্র সৈকতের বালিতে মোট খনিজের মজুত ৪৪ লাখ টন এবং প্রকৃত সমৃদ্ধ খনিজের পরিমাণ প্রায় ১৭ লাখ ৫০ হাজার টন, যা বঙ্গোপসাগরের ১৩টি স্থানে পাওয়া গেছে। তাদের হিসাব বলছে, বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা থেকে প্রায় ১০ লাখ টন খনিজ বালু উত্তোলন করা যেতে পারে। এ ছাড়া বঙ্গোপসাগরের তলদেশে রয়েছে ম্যাঙ্গানিজ নডিউল, ফসফরাস ডেপোজিট, পলিমেটালিক সালফাইড, অ্যাডাপোরাইট, ক্লেসার ডেপোজিট নামক আকরিক। এসব আকরিক পরিশোধনের মাধ্যমে পাওয়া যাবে মলিবডেনাম, কোবাল্ট, কপার, জিঙ্ক, লেডসহ ইত্যাদি দুর্লভ ধাতু। এ সব ধাতু জাহাজ নির্মাণ ও রাসায়নিক কারখানায় ব্যবহার করা যাবে। বাংলাদেশ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অগভীর সমুদ্রের তলদেশে ভ্যানাডিয়াম, পস্নাটিনাম, কোবাল্ট, মলিবডেনাম, ম্যাঙ্গানিজ ক্রাস্ট, তামা, সিসা, জিঙ্ক এবং কিছু পরিমাণ সোনা ও রুপা দিয়ে গঠিত সালফাইডের অস্তিত্ব রয়েছে। ১ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজার ৭০০ মিটার গভীরে এ সব মূল্যবান সম্পদ রয়েছে। বঙ্গোপসাগরের প্রায় ৩০ থেকে ৮০ মিটার গভীরে সিমেন্ট শিল্পের কাঁচামাল 'ক্লে'র সন্ধান পাওয়া গেছে। এ ছাড়া বঙ্গোপসাগরের অগভীর ও গভীর তলদেশে মহামূল্যবান ধাতু ইউরেনিয়াম ও থোরিয়ামের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। আর বাংলাদেশের পাশেই প্রতিবেশী ভারত কৃষ্ণা গোধাবেরি বেসিনে ১০০ টিসিএফ গ্যাস আবিষ্কারের কথা জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংস্থা ওএনজিসি। এ ছাড়া বাংলাদেশের কাছাকাছি মিয়ানমারের সাগর ভাগেও পাওয়া গেছে বড় গ্যাসক্ষেত্র। এ কারণে ভূতত্ত্ববিদদের অনেকে মনে করেন, বাংলাদেশের সমুদ্র সীমায়ও বড় ধরনের গ্যাসের মজুত থাকতে পারে। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০১৭ সালে বস্নু ইকোনমি নামে একটি সেল গঠন করা হয়। ২০১৯ সালে সর্বশেষ তথ্য মতে, মাত্র ৪টি বস্নকে তেল, গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। কিন্তু একটি কূপও খনন করতে পারেনি বাংলাদেশ, আর বাকি ২২টি বস্নক স্থবির হয়ে পড়ে আছে। বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় রয়েছে ৪টি মৎস্যক্ষেত্র। যেখানে প্রায় ৪৪০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তা ছাড়া আরও আছে ৩৩৬ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক, ৭ প্রজাতির কচ্ছপ, ৫ প্রজাতির লবস্টার, ৩৬ প্রজাতির চিংড়ি, ৩ প্রজাতির তিমি, ১০ প্রজাতির ডলফিন। সেভ আওয়ার সির গবেষণার তথ্য বলছে, বর্তমানে ২৫০ জাতের মিঠা পানির মাছ এর বিপরীতে সাগরে রয়েছে অন্তত ৪৭৫ প্রজাতির মাছ। বর্তমানে বঙ্গোপসাগরে প্রতি বছর ৮ মিলিয়ন টন মাছ ধরা পড়ে। এর মধ্যে শূন্য দশমিক ৭০ মিলিয়ন টন মাছ বাংলাদেশের মৎস্যজীবীরা আহরণ করে। যার সঙ্গে উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ৩০ লাখ মানুষের জীবিকা জড়িত। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে মোট মাছের উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ৩৩ লাখ মেট্রিক টন। ২০১৭-১৮ সালে দেশে উৎপাদিত মোট ৪৩ লাখ ৩৪ হাজার মাছের মধ্যে সাড়ে ৬ লাখ মেট্রিক টনই এসেছে সমুদ্র থেকে। এ ছাড়া বঙ্গোপসাগরে প্রায় ২০০ প্রজাতির সি উইড (এক ধরনের সামুদ্রিক ঘাস) ও বিপুল পরিমাণ সামুদ্রিক আগাছা রয়েছে। এ সব আগাছা প্রক্রিয়াজাতকরণ করে বিভিন্ন রোগের ওষুধ তৈরি করা যায়। এ সব আগাছার মধ্যে ইসপিরুলিনা সবচেয়ে মূল্যবান। চীন, জাপান, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মানুষ এগুলোকে খাদ্য হিসেবে খেয়ে থাকে। যা একই সঙ্গে বাংলাদেশের রপ্তানি ও ঔষধ শিল্প উন্নয়নে অবদান রাখবে। বাংলাদেশে রয়েছে ১২০ কিলোমিটারের পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। এ সমুদ্র সৈকতকে ঘিরে পর্যটনশিল্প গড়ে তুলতে পারলে একই সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বৈদেশিক মুদ্রা আয় ও বেকারত্ব হ্রাস করা সম্ভব। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বস্নু ইকোনমির অবদান (বা গ্রস ভ্যালু অ্যাডেড) ছিল ৬ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার, যা মোট অর্থনীতির মাত্র ৩ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের প্রাক্কলন (২০১৮) অনুযায়ী আমাদের সমুদ্র দেশের অর্থনীতিতে মোট মূল্য সংযোজনে ৬.২ বিলিয়ন ডলার বা জিডিপিতে ৩ শতাংশ অবদান রাখছে। এ অর্থনীতি মূলত পর্যটন ও বিনোদন (২৫ শতাংশ), মৎস্য আহরণ ও অ্যাকুয়াকালচার (২২ শতাংশ), পরিবহণ (২২ শতাংশ) এবং তেল ও গ্যাস উত্তোলন (১৯ শতাংশ) নিয়ে গঠিত। মৎস্য আহরণ ও অ্যাকুয়াকালচারে পূর্ণ ও খন্ডকালীন মিলিয়ে ১৩ লাখ লোকের কর্মসংস্থান রয়েছে। অন্যদিকে লবণ উৎপাদন ও জাহাজ ভাঙা শিল্পে নিয়োজিত আছে প্রায় ৬০ লাখ লোক। উপরের আলোচনায় উলিস্নখিত তথ্যের ভিত্তিতে নির্দ্বিধায় বলা যায়, সমুদ্র অর্থনীতি বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি উজ্জ্বল সম্ভাবনার নাম। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধি, খাদ্যের চাহিদা, বেকারত্বের হারের ঊর্ধ্বগতির ছোট অর্থনীতির দেশের জন্য সমুদ্র অর্থনীতির গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু অপ্রিয় সত্য এটাই যে, সমুদ্র বিজয় নিয়ে যতটা মাতামাতি হয়েছে, সমুদ্র অর্থনীতি নিয়ে ততটা গুরুত্ব প্রকাশ হয়নি। আর আমরা চাইলেও এখনি সমুদ্র সম্পদের শতভাগ ব্যবহার করতে পারব না। কারণ তার জন্য প্রয়োজন দক্ষ জনশক্তি, উচ্চমানের গবেষণা, বড় বাজেট ও উন্নত প্রযুক্তি। এ মৌলিক বিষয়গুলোর অপর্যাপ্ততার কারণে সমুদ্র বিজয়ের দীর্ঘদিন পরেও সমুদ্র অর্থনীতির অপার সম্ভাবনাকে ব্যবহার করতে পারছে না বাংলাদেশ। দক্ষ জনশক্তি ও গবেষণার জন্য সমুদ্র বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসার করতে হবে, এ লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই পাঠ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সমুদ্রে তেল, গ্যাস, খনিজ ও প্রাণিজ সম্পদ খোঁজার জন্য উচ্চমানের গবেষণা বৃদ্ধি করতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো আমাদেরও সমুদ্র অর্থনীতির উন্নয়নে দক্ষ পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। সর্বোপরি জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি হ্রাস, টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত, বেকারত্ব দূরীকরণ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করতে সমুদ্র অর্থনীতির বা বস্নু ইকোনমির প্রতি আলাদা নজর দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। ফুয়াদ হাসান : কলাম লেখক