পাঠক মত

পলিথিনের ব্যবহার

প্রকাশ | ২৪ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
দৈনন্দিন জীবনে আমরা ব্যাপকহারে পলিথিনের ব্যবহার করছি। একথা সত্য যে, স্বল্প খরচ ও ব্যবহারের সুবিধা পলিথিনের জনপ্রিয়তা করেছে আকাশচুম্বী; সেই সঙ্গে কিছুটা হলেও আমাদের জীবনকে করেছে সহজ। কিন্তু এই পলিথিনের ক্ষতির দিকটি বিবেচনা না করেই আমরা প্রতিনিয়ত নানান কাজে তার ব্যবহার করছি যথেচ্ছা এবং ব্যবহারের পর নিয়ম না মেনেই ফেলছি যত্রতত্র। যার দরুন ভয়ংকর সব ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে আমাদের চারপাশের পরিবেশ। নীরব ঘাতক এই পলিথিন শুধু মাটি নয়, আমাদের প্রকৃতি ও পরিবেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। বিপন্ন করে তুলেছে জীববৈচিত্র্যকে। ইতোমধ্যে অকেজো করে দিয়েছে বড় বড় শহরের ড্রেনেজব্যবস্থাকেও। অনেক সামুদ্রিক প্রাণী পলিথিনকে খাবার মনে করে খেতে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছে। ফলে বিপন্ন হয়ে পড়ছে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য। বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশই প্রথম পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছিল। তাই বলে কিন্তু এদেশে পলিথিনের উৎপাদন, বাজারজাতকরণ এবং ব্যবহারে মোটেও ভাটা পড়েনি। শহরের অভিজাত বিপণি থেকে শুরু করে অজপাড়াগাঁয়ের কাঁচাবাজার পর্যন্ত ক্রয়কৃত অধিকাংশ পণ্য দেয়া হচ্ছে পলিব্যাগে। ২০০২ সালে সংশোধিত পরিবেশ আইনে রপ্তানিমুখী শিল্প বাদে সব ধরনের পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা হয়। এই আইন অমান্য করলে দশ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও দশ লাখ টাকা জরিমানার বিধান করা হয়। পাশাপাশি পলিথিন ব্যাগ বাজারজাত করলে ছয় মাসের কারাদন্ড ও দশ হাজার টাকা জরিমানার আইনও করা হয়। ২০১০ সালে পলিথিনের পরিবর্তে প্রতিটি মোড়কে পাটজাত ব্যাগের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে আইন পাস করা হয়। মূল কথা হচ্ছে- আইন আছে কিন্তু তার বাস্তবায়ন নেই। আইন থাকা সত্ত্বেও আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকা এবং সরকারের দুর্বল মনিটরিং ব্যবস্থার কারণেই অবাধে চলেছে পলিথিনের উলঙ্গ ব্যবহার। কে নেবে এর দায়ভার? কাকে দোষারোপ করব আমরা? প্রশ্ন দুটির উত্তর বোধহয় এদেশে আদৌ পাওয়া সম্ভব নয়। তাই আমাদেরই (সাধারণ জনগণ) এগিয়ে আসতে হবে। নিজেদের স্বার্থে ফিরিয়ে আনতে হবে কিছু পুরনো অভ্যাস। বিগত দশকের গ্রাম-বাংলায় প্রচলিত কিছু ঐতিহ্যের পুনঃপ্রবর্তন এখন সময়ের দাবি। যে সময়টাতে বাজার করার জন্য প্রতিটি মানুষ আলাদা একটি ব্যাগ নিয়ে তবেই যেত বাজার করতে। এছাড়া নানা আচার-অনুষ্ঠানে খাবারের পেস্নট হিসেবে ব্যবহার করা হতো কলাপাতা এবং পদ্মপাতা। পলিথিনের ভয়াবহ দূষণের এই যুগে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুইটি দেশ পলিথিনের বিকল্প হিসেবে আবার কলাপাতার ব্যবহার শুরু করেছে। থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনামের অভিজাত সব সুপারশপগুলোতে পস্নাস্টিকের ব্যাগ এবং পলিথিনের পরিবর্তে কলাপাতায় মুড়িয়ে সবজি বিক্রি করা হচ্ছে। তারা নানান খাবারের প্যাকেট তৈরিতে ব্যবহার শুরু করেছে কলাপাতার। কলাপাতার এমন বিকল্প ব্যবহার বর্তমানে দূষণের এই নগ্ন রাজ্যে নিঃসন্দেহে পরিবেশ রক্ষার এক সৃজনশীল উদ্যোগ বলে বিবেচিত হতে পারে। আমাদের একটা অভ্যাস আর একটু সচেতনতাই পারে পলিথিনের ব্যবহারকে অনেকখানি নিয়ন্ত্রণ করতে। সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য, পলিথিনের বিরূপ প্রভাব থেকে পরিবেশকে রক্ষার জন্য আমাদেরও একটু ভেবে দেখা দরকার। এস এ এইচ ওয়ালিউলস্নাহ শিক্ষার্থী আল ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া