শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
পাঠক মত

তরুণদের চোখে বঙ্গবন্ধু

নতুনধারা
  ২৫ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

কবি নির্মলেন্দু গুণ বলেছেন, 'কে রোধে তাহার বজ্র কণ্ঠবাণী? গণসূর্যে মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তার অমর কবিতাখানি।' পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো কোনো দেশে এমন দু-একজন ক্ষণজন্মা পুরুষের আবির্ভাব ঘটে যাদের রাজনৈতিক কর্মকান্ড সে দেশের মানুষের সৌভাগ্যের দ্বার উন্মোচন করে দেয়। তারা পরাধীন দেশবাসীর জীবনে মুক্তি এনে দেন, দুর্যোগের ঘনঘটা দূর করে তাদের হাতে স্বাধীনতার সূর্য পতাকা উপহার দেন। আমাদের দেশের এরূপ একজন সংগ্রামী পুরুষের কথা আমাদের চেতনায় মিশে আছে, মিশে আছে আমাদের রক্ত কণিকায়। তিনি হলেন বাঙালি জাতির আলোর দিশারি, স্বপ্নের ফেরিওয়ালা, স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

স্বপ্নবাজ এ মানুষটি গোপালগঞ্জ জেলার মধুমতী তীরবর্তী টুঙ্গিপাড়া গ্রামে শেখ লুৎফর রহমান ও সায়েরা খাতুনের ঘর আলোকিত করে ১৭ মার্চ, ১৯২০ (বাংলা ২০ চৈত্র, ১৩৫৯) জন্মগ্রহণ করেন। তিনি গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। ১৯৪২ সালে মেট্রিক, ১৯৪৪ সালে আইএ এবং ১৯৪৭ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাসে বিএ পাস করেন। একই বছর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন।

বাঙালি, বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ শব্দ তিনটি একই সূত্রে গাঁথা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল নেতৃত্ব দেন তিনি। তার সারাজীবনের কর্মকান্ড, আন্দোলন সংগ্রাম নির্দেশিত হয়েছে বাঙালি জাতির মুক্তির লক্ষ্যে। এ লক্ষ্য নিয়ে তিনি ১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগ এবং ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হন।

১৯৪৮-১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় থেকেই বঙ্গবন্ধু তরুনদের কাছে জনপ্রিয় ছিলেন। তারুণ্যের ক্ষোভ এবং দ্রোহের সঙ্গে তিনি সংযোগ ঘটাতে পারতেন। তরুণদের ভাবনায় তিনি মিশে যাওয়ার ক্ষমতা রাখতেন। ১৯৫৪ সালে মুসলিম লীগের পতন ঘটে বঙ্গবন্ধুর ডাকে উদ্বুদ্ধ হয়ে তরুণ সমাজের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমেই। ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য তিনিই আহ্বান জানান তরুণদের। বাঙালি জাতির ম্যাগনাকার্টা বা মুক্তির সনদ ৬ দফা কর্মসূচিসহ ষাটের দশকে যে আন্দোলনগুলো পাকিস্তানি সেনাশাসনের ভিত্তি নড়িয়ে দিয়েছিল তা তরুণ সমাজেরই কীর্তি।

১৯৬৯-এর গণঅভু্যত্থান, ১৯৭০-এর নির্বাচনে নজিরবিহীন বিজয় এ সবই সম্ভব হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর দক্ষ নেতৃত্বগুণের জন্য। ২৩ ফেব্রম্নয়ারি, ১৯৬৯ বঙ্গবন্ধু উপাধি লাভ করেন। ৭ মার্চ, ১৯৭১ রেসকোর্স ময়দানের বঙ্গবন্ধুর সেই জ্বালাময়ী ভাষণ 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম' যা বাঙালির রক্তে আগুন ধরায়, বিজয়ের নেশায় মত্ত করে তোলে। ইউনেস্কো ৭ মার্চের ভাষণকে 'ডকুমেন্টারি হেরিটেজ' হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম এ ভাষণটি ১২টি ভাষায় অনূদিত হয়। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত এ দেশকে ঢেলে সাজানোর কাজ হাতে তুলে নিয়েছিলেন তিনি। সোনার বাংলা গড়তে ব্যস্ত থাকাকালে এ বাংলার মাটিতেই ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫ অপশক্তির হাতে তার জীবনাবসান ঘটে।

তরুণদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল। বঙ্গবন্ধুর আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব, তার বাগ্মিতা, মানুষের প্রতি নিঃস্বার্থহীন ভালোবাসা, সহজেই মানুষের সঙ্গে মেশা, সাহসিকতা প্রভৃতি গুণাবলি তার দিকে তরুণদের আকৃষ্ট করতে বাধ্য করে। ৭ মার্চের ভাষণ, তার আঙুলি হেলানো বজ্রকণ্ঠ, শব্দ চয়ন ভীষণ শিহরিত করে তরুণদের। তাই তো তরুণ প্রজন্ম ধারণ করতে চায় বঙ্গবন্ধুকে।

বঙ্গবন্ধু নিজেও বিশ্বাস করতেন তরুণরাই দেশের মূল চালিকাশক্তি। তিনি তরুণদের সংগ্রামের বাণী শিখাতেন, রাজনীতি ও সাহিত্যর প্রতি উদ্বুদ্ধ করতেন, অন্যায়ের কাছে আপসহীন হতে শিখিয়েছেন, শিক্ষা ও শিক্ষার আদর্শগুলো জীবনে ধারণ করতে বলেছেন। অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও কারাগারের রোজনামচায় বঙ্গবন্ধু তারুণ্যের প্রতি বিশ্বাস এবং তার নিজের তরুণ জীবনের সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরেছেন।

ঢাবির বঙ্গবন্ধু চেয়ারের অধ্যাপক ড. আতিউর রহমানের নেতৃত্বে তারুণ্যের চোখে বঙ্গবন্ধু কেমন সে বিষয়ে একটি জরিপ করা হয়। যাদের বয়স ১৫-৩০ এবং এদের মধ্যে ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ৭৯ শতাংশ বলেছেন, তারা মনে করেন ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ ও দ্ব্যর্থহীন বক্তব্য পুরো জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করেছিল এবং স্বদেশ স্বাধীন হয়েছিল। ৮১ শতাংশ মনে করেন বঙ্গবন্ধুর নিঃস্বার্থ নেতৃত্বের কারণেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর সাম্যবাদী ভাবনা, উদার রাজনৈতিক দৃষ্টি, শোষণহীন সমাজ গড়ার চেতনা তরুণ সমাজকে প্রলুব্ধ করে। তার মানবিকতা এবং সাধারণ মানুষের প্রতি সহমর্মিতার কারণেই তিনি হতে পেরেছেন বাংলার তরুণদের স্বপ্ন সম্রাট।

২০১৪ সালে বিবিসির একটি জরিপে বঙ্গবন্ধু 'সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি' হিসেবে সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্ত হন। তার এ অবদান বাঙালি জাতি কখনো ভুলবে না। তাই তো আনন্দ সরকার রায় বলেছেন, 'যতকাল রবে পদ্মা, মেঘনা, গৌরী বহমান,

ততকাল রবে শেখ মুজিব তোমার অবদান।'

তরুণদের চিন্তা ও মননে বঙ্গবন্ধুর দৃঢ় অবস্থান তৈরির জন্য দরকার বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান। সে ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলেই তৈরি হবে ঘরে ঘরে শেখ মুজিব। তরুণরাই পারে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বুকে লালন করে সোনার বাংলা গড়তে যেখানে মা হাসবে আর শিশুরা খেলবে।

তাজমিন নাহার

শিক্ষার্থী, আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<116366 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1