পাঠক মত

ভালো কাজ সংক্রমিত হোক

প্রকাশ | ২৫ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সপ্তাহ দুয়েক আগে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোড়নের সৃষ্টি করে। ছবিতে দেখা যায়, এক অসহায় মধ্যবয়সি ব্যক্তি ক্রমাগত কাঁদছেন, পেছনে একটি রিকশা ট্রাকে তোলা হচ্ছে। পরে ফেসবুকের কল্যাণে জানতে পারলাম ক্রন্দনরত ব্যক্তিটির নাম ফজলুর রহমান। কয়েকদিন আগে ৮০ হাজার টাকা ধার করে তিনি রিকশাটি কেনেন। কিন্তু অনুমোদন না থাকায় নগর কর্তৃপক্ষ সেটি উচ্ছেদ করে, যার কারণেই ফজলুর রহমানের এ হৃদয়স্পর্শী কান্না। ফজলুর রহমান নামক এ খেটে খাওয়া মানুষটির কান্না সবাইকে কাঁদিয়েছে। সমাজের প্রতিষ্ঠিত অনেকেই তাকে সাহায্য করার ইচ্ছা পোষণ করেন। সাংবাদিকদের সহায়তায় স্বল্প সময়ে তার পরিচয়ও খুঁজে বের করা হয়। এরপরের গল্পটুকু শুধুই আনন্দের। দেশের শীর্ষস্থানীয় অনেক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ফজলুর রহমান নামের এ মানুষটির পাশে এসে দাঁড়ান, যার বদৌলতে সেদিনের ক্রন্দনরত অসহায় রিকশাচালক ফজলুরের মুখে হাসি ফোটে। সে হাসিও ছড়িয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এ উদ্যোগে অনুপ্রাণিত হয়ে সেদিন ফজলুর রহমানের মতো আরও যারা সম্বল হারিয়েছিলেন, তাদের খোঁজও নিতে থাকেন অনেকে। একটি ভালো কাজ থেকে সূচনা ঘটে আরও অসংখ্য ভালো কাজের। ফজলুর রহমানের এ ঘটনাটি দেশজুড়ে আলোচনার সৃষ্টি করেছিল। তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসা মানুষকে দেখে আমরা আনন্দিত হয়েছি।? গত কয়েকদিনে হাজারো খারাপ সংবাদের ভিড়ে এমন সুন্দর একটি কাজ আমাদের আশার আলো দেখায়, আমাদের ভাবতে শেখায় পৃথিবীতে এখনো ভালো কাজ ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে ফজলুর রহমানের মুখে হাসি ফুটেছে, তারা আরও দশজন মানুষকে উৎসাহিত করেছেন ভালো কাজে অংশ নিতে। এভাবেই একটি ভালো কাজকে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব দেশের মানুষের মধ্যে। বিশ্বের সব দেশের মতো আমাদের দেশেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দিনে দিনে জনমত প্রকাশের গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে উঠছে। দেশের মানুষ সমাজ নিয়ে, সাম্প্রতিক ঘটনাবলি নিয়ে কিংবা কোনো একটি বিষয়ে কী ভাবছে, সে সম্পর্কে একটি সঠিক ধারণা পাওয়া যায় তাদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলো থেকে। ফেসবুক, টুইটার কিংবা ইন্সটাগ্রাম এখন শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, একই সঙ্গে ব্যক্তির চিন্তা, দর্শন, মতাদর্শ নিরূপণেরও শক্তিশালী একটি মানদন্ড। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে আমরা শুধু ব্যক্তিগত ছবি বা পোস্ট শেয়ারের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে যদি ইতিবাচক কাজগুলোকে ছড়িয়ে দেওয়ার একটা পস্নাটফর্মে পরিণত করি, তাহলে আমাদের সমাজটা আরও বেশি সুন্দর হবে। প্রায়ই দেখা যায়, আমরা কোনো ইসু্য নিয়ে আলোচনা শুরু করলে তার পক্ষে, বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে নানান তর্কে জড়িয়ে পড়ি। অনেক সময় একে অন্যকে হেয় করে ধারাবাহিক পোস্ট বা ছবি আপলোডের মতো ঘটনাও দেখা যায়। আবার, কোনো একটি নেতিবাচক সংবাদ খুব দ্রম্নত শেয়ারের কারণে অধিকসংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। এটিও নেতিবাচকতা ছড়িয়ে দেওয়ারই নামান্তর। কিন্তু এ কাজগুলো না করে বরং আমরা কারও ভালো কাজ বা মহৎ উদ্যোগের খবরগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্যে সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে পারি। এতে একটি ভালো কাজ দেখে আরও কিছু মানুষ ভালো কাজে উৎসাহিত হবে। চারদিকে যখন মানুষের ভালো কাজগুলো নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হবে, তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবেই মানুষের মধ্যে এক ধরনের ইতিবাচক মানসিকতার সৃষ্টি হবে। আর বর্তমান সময়ে এ ধরনের মানসিকতারই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আমাদের। সমাজে যে কোনো ধরনের ভালো কাজ ধারাবাহিক প্রতিক্রিয়া বা চেইন রিঅ্যাকশন তৈরি করে। একটি ভালো কাজ থেকেই আরও অসংখ্য ভালো কাজের সূচনা ঘটানো সম্ভব। আর এ অসংখ্য ভালো কাজগুলোর মাধ্যমেই আমরা আমাদের এ সমাজকে বদলে দিতে পারি। এর জন্য আমাদের নিজেদেরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। আমাদের দেশে, বিশেষ করে তরুণ সমাজের একটা বিশাল অংশ দিনের বেশির ভাগ সময় ফেসবুকে পার করেন। হাজারও অহেতুক ভিডিও, ট্রল কিংবা চ্যালেঞ্জ শেয়ারের মাধ্যমেই তাদের দিন কেটে যায়। এ ধরনের প্রবণতা নতুন নয়, কিছু ক্ষেত্রে করোনোর এ সংকটকালে এর হার আরও বেড়েছে। তবে একদিনেই এটি বদলানো সম্ভব নয়। এর জন্য ধীরে ধীরে মানুষের মধ্যে ইতিবাচকতা ছড়িয়ে দেওয়ার অভ্যাসটি গড়ে তুলতে হবে। কেউ ভালো কাজ করে সেটি ফেসবুকে শেয়ার করলে আমরা অনেকেই তাকে লোক দেখানো বা শো-অফ হিসেবে সমালোচনা করে থাকি। হঁ্যা, এটি সত্য যে, অনেকেই লোক দেখানোর জন্য কিংবা আলোচনায় থাকতে ভালো কাজ করে, কিন্তু তাই বলে সবাই এ মানসিকতা নিয়ে ভালো কাজ করে; বিষয়টি তেমন নয়। সে জন্যই কেউ যদি নিজের ভালো কাজকে ছড়িয়ে দিতে চায়, তার উদ্দেশ্য যা-ই থাকুক না কেন, সেটিকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করার মতো পরিপক্বতা আমাদের অর্জন করতে হবে। অন্যের ভালো কাজ নিয়ে সমালোচনা না করে সেটি সাদরে গ্রহণ করতে হবে। একজনের ছোট্ট একটি ভালো কাজই হয়তো আরেকজনকে বড় ধরনের কোনো ইতিবাচক উদ্যোগ নিতে উৎসাহিত করবে। এ কারণেই দেশজুড়ে ভালো কাজ, তা যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন, ছড়িয়ে দেওয়ার সংস্কৃতি চালু করতে হবে। আমরা চাই এ সমাজে ভাইরাস কিংবা মন্দ কাজ নয়, বরং সংক্রমিত হোক ভালো কাজ। ইতিবাচক এ সংক্রমণের মাধ্যমেই দেশকে বদলে দেওয়া সম্ভব। ফারহান ইশরাক শিক্ষার্থী ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্সু্যরেন্স বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।