বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

থেমে নেই সীমান্তে হত্যা ও নির্যাতন যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে

নতুনধারা
  ২৫ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

থেমে নেই সীমান্তে হত্যাকান্ড, সীমান্ত থেকে ধরে নিয়ে নির্যাতনসহ নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতি প্রত্যাশিত নয়। বলা দরকার, বহু দেনদরবার, আলাপ-আলোচনা, সমঝোতা এবং প্রতিশ্রম্নতি সত্ত্বেও সীমান্তে হত্যা যেমন বন্ধ হয়নি, তেমনি ঘটছে নির্যাতনের ঘটনাও। এমন পরিস্থিতি আমলে নিয়ে যত দ্রম্নত সম্ভব প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার খরচাকা সীমান্ত থেকে তিনটি নৌকাসহ চার জেলেকে ধরে নিয়ে গিয়ে ব্যাপক নির্যাতন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। বুধবার রাতে একটি নৌকায় করে তাদের পাঠিয়ে দিলেও জেলেদের ভালো নৌকা দুটি ফেরত দেয়নি। এছাড়া ঘটনার পর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) পক্ষ থেকে পতাকা বৈঠকের আহ্বানেও সাড়া দেয়নি বিএসএফ। তথ্য মতে, বুধবার ভোরে মাছ ধরার সময় পদ্মা নদী থেকে এই চার জেলেকে তিনটি নৌকাসহ ধরে নিয়ে যায় বিএসএফ। সীমান্ত এলাকায় মাছ ধরার কারণে তাদের ব্যাপক নির্যাতন করা হয়। এই চার জেলের শরীরের বিভিন্ন অংশে লাঠির আঘাতের চিহ্নও রয়েছে। এছাড়া বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) রাজশাহীর ১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক চার জেলেকে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতনের ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিজিবি'র পতাকা বৈঠকের আহ্বানেও বিএসএফের সাড়া না দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খরচাকা সীমান্ত ফাঁড়ির ক্যাম্প কমান্ডার নায়েক সুবেদার আব্দুল মান্নান। তিনি জানিয়েছেন, চার জেলেকে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতনের ঘটনা জানার পর বিএসএফের ডি-কোম্পানি ৩৫ ব্যাটেলিয়নের কাছে পতাকা বৈঠকের আহ্বান করা হলে বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায় পতাকা বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। বাংলাদেশ সীমান্তের ৫৩/৩ এস পিলারের কাছে গিয়ে অপেক্ষা করা হলে, ভারতের ৩৫ ব্যাটেলিয়ন বিএসএফের ডি-কোম্পানি কমান্ডার রাজ কুমার সিং শুক্রবার পতাকা বৈঠকে বসার কথা জানান, এরপর বিজিবি সেখান থেকে ফেরত আসে। আমরা বলতে চাই, একদিকে সীমান্ত হত্যা বন্ধ হয়নি, আবার নির্যাতনের ঘটনাও ঘটল। কিছুদিন আগেও সীমান্ত হত্যা বন্ধে 'কার্যকর ব্যবস্থা' নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ)। উলেস্নখ্য, চলতি ২০২০ সালের প্রথম ছয় মাসে সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীদের গুলি ও নির্যাতনে বাংলাদেশি নাগরিকদের মৃতু্যর ঘটনা গত বছরের তুলনায় বেড়েছে বলেও পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছিল। জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত সীমান্তে ২৫ জন বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ২১ জনেরই মৃতু্য হয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বা বিএসএফের সৈন্যদের গুলিতে এমনটিও জানা গিয়েছিল। আমরা মনে করি, পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অটুট রাখা ও আস্থা বাড়ানোর জন্য সীমান্ত হত্যা কিংবা নির্যাতন বন্ধের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, কেউ অপরাধ করলে আইন মোতাবেক শাস্তি হবে কিন্তু নির্যাতন কিংবা হত্যা কাম্য হতে পারে না। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের সাড়ে আট মাসে বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্তে সহিংসতায় মৃতু্য হয়েছে অন্তত ৩৯ বাংলাদেশির। এর মধ্যে ৩২ জনের মৃতু্য হয়েছে বিএসএফ সদস্যদের গুলিতে। আর ৫ জনের মৃতু্য হয়েছে বিএসএফ সদস্যদের শারীরিক নির্যাতনের পর। ফলে এসব পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। এবার নৌকাসহ যে চার জেলেকে ধরে নিয়ে গিয়ে ব্যাপক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, তা বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। কেন সীমান্তে হত্যাকান্ড ঘটছে, নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে- তা আমলে নিয়ে এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে পথ খুঁজতে হবে। সীমান্তে হত্যাকান্ড কিংবা নির্যাতনের মতো ঘটনা বন্ধ হোক এমনটি আমাদের প্রত্যাশা। দুদেশের মধ্যে বারবার পতাকা বৈঠক হওয়ার পরও এবং বিএসএফ প্রতিশ্রম্নতি দেওয়া সত্ত্বেও সীমান্তে হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। এ ধরনের উদ্বেগজনক পরিস্থিতির দ্রম্নত অবসান জরুরি। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের কঠোর হওয়ার বিকল্প নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে