বিজয়া দশমী

শুভশক্তির জয় হোক

প্রকাশ | ২৬ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
আজ বিজয়া দশমী। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে সনাতন ধর্মাবলম্বী বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। প্রসঙ্গত বলা দরকার, করোনা মহামারির কারণে সংক্রমণ এড়াতে এ বছর বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। আর উৎসবসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পরিহার করে সাত্ত্বিক পূজায় সীমাবদ্ধ রাখতে হবে বিধায় এবারের দুর্গোৎসবকে 'দুর্গাপূজা' হিসেবে অভিহিত করেছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ। আজ অশ্রম্নসজল নয়নে ভক্তকুল দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গাকে বিদায় জানাবেন। দেবী ফিরে যাবেন কৈলাসে। এবার দেবী ফিরবেন গজে চড়ে, এসেছিলেন দোলায় করে। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এই উৎসব। পুরাণমতে, 'দুর্গম' মতান্তরে মহিষাসুর নামক এক অসুর ছিল। তার কাজ ছিল সৃষ্টিকুলকে দুর্গতিতে ফেলা। সেই দুর্গম অসুরকে বধ করায় দেবীর নাম হয়েছে দুর্গা। দুর্গমকে বধ করে যিনি স্বর্গ থেকে বিতাড়িত দেবতাদের হৃত রাজ্যে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন এবং জীবজগৎকে চিরকাল দুর্গতির হাত থেকে রক্ষা করেন, তিনিই দুর্গা। ভারতবর্ষের বাঙালি হিন্দু মানসে দুর্গা প্রতিবাদের দেবী, প্রতিরোধের দেবী। একই সঙ্গে তিনি 'মাতৃরূপেণ' ও 'শক্তিরূপেণ'। দেবী দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করে দেবকুলকে রক্ষা করায় বিজয় ঘটে শুভশক্তির। দেবীর আগমন ঘটে অন্যায়ের বিনাশ ঘটিয়ে সজ্জনদের প্রতিপালনের অঙ্গীকার নিয়ে মানুষের মধ্যে নৈতিক আদর্শ জাগ্রত করার জন্য। মানুষের চিত্ত থেকে যাবতীয় দীনতা ও কলুষতা দূরীভূত করার জন্য। দুর্গা দেবীর মাতৃরূপ ও শক্তিরূপ বাঙালি হিন্দু মানসে আজও সমুজ্জ্বল। তিনি কেবল সৌন্দর্য-মমতা-সৃজনের আধার হিসেবেই বিবেচিত হন না, তিনি অসহায় ও নিপীড়িতের আশ্রয় বলেও গণ্য হন। তার এক রূপ অসুরবিনাশী, আরেক রূপ মাতৃময়ী ভালোবাসার। শক্তি ও মমতার এই দুই শক্তির গুণেই তিনি দেবকূলের কাছে পরম পূজনীয় হিসেবে গণ্য হন। মানবকূলের জন্য তিনি বহন করে আনেন মঙ্গলবার্তা। যে কোনো ধর্মের পরম প্রতীকের গুরুত্ব এখানেই যে, তা সব মানুষের মধ্যেই শুভবোধের সঞ্চার ঘটাতে সক্ষম। এটাই ধর্মীয় প্রতীকের সর্বজনীন তাৎপর্য। শারদীয় দুর্গাপূজা কেবল আরাধনার উপলক্ষই নয়, তা আনন্দ-মিলনের সুযোগও। সেই আনন্দ ধর্ম সম্প্রদায়ের গন্ডি ছাপিয়ে সমাজের সবাইকে আবাহন করে। কাছে ডেকে নেয়। বাংলাদেশ বরাবরই ধর্মীয় সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির এক মেলবন্ধন। সবাই স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করছেন। ধর্ম যার যার উৎসব সবার- এই অধিকার নিশ্চিত হয়েছে মানুষের। দুর্গাপূজা পালনের মধ্য দিয়ে সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য ও কল্যাণময় অবস্থানের বিকাশ আরও বিস্তৃত এবং বিকশিত হয়। উপরন্তু অশুভ শক্তির পরাজয় ঘটিয়ে মঙ্গলদায়ক, শুভশক্তি ও ইতিবাচক চেতনার সম্প্রসারণ ঘটে। মানুষে মানুষে প্রীতি, প্রেম, সহিষ্ণুতা, ঐক্য ও শান্তির ডাক দিয়ে যায় ধর্ম। তার পরও অসুরের আকস্মিক উন্মত্ততা নষ্ট করে দেয় আবহমানকালের প্রীতিধন্য পারস্পরিক সহাবস্থানকে। ধ্বংস করে দেয় দীর্ঘকালীন হৃদ্যকে। সৃষ্টি হয় বৈষম্য, বিভেদ, হিংসা, অন্যায় ও অকল্যাণ। আর এ জন্যই মঙ্গলদাত্রী দেবী দুর্গার আগমন ঘটে কল্যাণ ও শান্তি সংস্থাপন করার জন্য। তিনি শুভ ও ন্যায়ের উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে যান সবাইকে। ফলে দুর্গাপূজার মধ্য দিয়ে দূর হোক সব সঙ্কীর্ণতা ও বিভেদ- মা যেন সেই শক্তি, সৌহার্দ্য সবার হৃদয়ে ও মনে জাগ্রত করেন। প্রসঙ্গত বলা দরকার, এবারে দুর্গাপূজা এসেছে ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে। করোনা মহামারির সময়। যখন পুরো বিশ্বই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মুখোমুখি। করোনা ভাইরাসের কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন। সঙ্গত কারণেই জনসমাগমের কারণে স্বাস্থ্যবিধি যাতে ভঙ্গ না হয় সেদিকে খেয়াল রেখেই দুর্গাপূজায় প্রসাদ বিতরণ ও বিজয়া দশমীর শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাছাড়া মন্দিরের আশপাশে মেলাও নিষিদ্ধ করা হয়। স্বাস্থ্যবিধি ও যথাযথ নিয়ম মানতে বলা হয়েছে। সর্বোপরি প্রত্যাশা থাকবে এটাই যে, শারদীয় দুর্গাপূজার সম্প্রীতির ও ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা অটুট থাক। সর্বত্র সত্য, ন্যায় ও শুভশক্তির জয় হোক। আজকের দিনে সনাতন ধর্মাবলম্বী সবার প্রতি রইল আমাদের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা। শুভ বিজয়া।