চলে গেলেন রফিক-উল হক

তার শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়

প্রকাশ | ২৬ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
চলে গেলেন দেশের বিশিষ্ট আইনজ্ঞ, সমাজ সেবক, মানবহিতৈষী ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল রফিক-উল হক। গত শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর আদ-দ্বীন হাসপাতালে তিনি মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। রফিক-উল হকের জন্ম ১৯৩৫ সালে কলকাতার সুবর্ণপুর গ্রামে। বাবা মুমিন-উল হক পেশায় ছিলেন চিকিৎসক। মা নূরজাহান বেগম। তার বাল্যকাল কেটেছে কলকাতায়। পড়াশোনা করেছেন চেতলা স্কুলে। তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন ১৯৫১ সালে। ১৯৫৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং ১৯৫৭ সালে দর্শন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার পর ১৯৫৮ সালে এলএলবি করেন। এরপর কলকাতা হাইকোর্টে আইন পেশা শুরু করেন তিনি। ১৯৬২ সালে যুক্তরাজ্য থেকে ব্যারিস্টারি পাস করে তৎকালীন পাকিস্তানের নাগরিক হয়ে চলে আসেন ঢাকায়। ১৯৬৫ সালে হাইকোর্টের আইনজীবী তালিকাভুক্ত হওয়ার পর ১৯৭৩ সালে আপিল বিভাগে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন তিনি। ১৯৯০ সালে অ্যাটর্নি জেনারেল করা হয়েছিল তাকে। তখনই তিনি পদাধিকারবলে বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হন। এ সময় তিনি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনেও প্রতিনিধিত্ব করেন। উলেস্নখ্য, সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ অনেক রাজনীতিবিদের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টে আইনি লড়াই করে আলোচনায় ছিলেন তিনি। দলমতনির্বিশেষে সবার আইনি সেবা দিয়েছেন তিনি। তিনি সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তিনি সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলতেন। সত্য উচ্চারণের ক্ষেত্রে তিনি সবমসয় ছিলেন উচ্চকণ্ঠ। দীর্ঘ ৬০ বছরেরও বেশি সময়ে তিনি সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী হিসেবে কর্মরত ছিলেন- যা সত্যিই বিরল। তিনি বিভিন্ন সময় ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন। সমাজ ও মানবতার সেবায় তিনি ছিলেন সবসময়ই উদারহস্ত। যেখানেই সুযোগ পেয়েছেন হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সমাজ-মানবতার সেবায়। যার কারণে আইনপেশার পাশাপাশি তিনি গড়ে তুলেছিলেন ভিন্ন এক মানবিক জগৎ, যা অনুকরণীয়। ১৯৯৫ সালে রফিক-উল হক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সুবর্ণ ক্লিনিক। ঢাকা শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায়ও ভূমিকা ছিল তার। আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ ২৫টিরও বেশি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনি সরাসরি জড়িত ছিলেন। নিঃস্বার্থভাবে তিনি নানা সামাজিক কর্মকান্ডেও নিজেকে যুক্ত রেখেছিলেন। মসজিদ, মাদ্রাসা ও হাসপাতাল যেখানেই সুযোগ পেয়েছেন হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সমাজ-মানবতার সেবায়, মানবকল্যাণে। যার কারণে তিনি ব্যক্তি থেকে ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিলেন। দেশে আইনের শাসন এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তার অবদান অনস্বীকার্য। জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে তাকে স্মরণ করবে। তিনি জীবনের পথ-পরিক্রমায় সবসময় বহন করেছেন দেশ ও মানুষের জন্য ভালোবাসা। সম্পৃক্ত হয়েছেন বহুবিদ কল্যাণমূলক জাগরণী কর্মকান্ডে। তিনি আজ দূর আকাশে মিলিয়ে গেছেন। রেখে গেছেন তার অনন্য কীর্তি, আদর্শ, সত্য ও ন্যায়নিষ্ঠতা। যা পরবর্তী প্রজন্মকে পথ দেখাবে। তিনি তার জীবন ও কর্মের মধ্য দিয়ে যে অবদান রেখে গেছেন তা স্মরণীয় ও অক্ষয় হয়ে থাকবে। এই গুণী ত্যাগী ও আলোকিত মানুষটির বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারকে জানাই গভীর সমবেদনা।