শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
সত্য, ন্যায় ও আদর্শই পাথেয় হোক

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী

নতুনধারা
  ৩০ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী। মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা.)-এর জন্ম ও মৃতু্যর পুণ্য স্মৃতিময় দিন। ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ (সা.) ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের ১২ রবিউল আওয়াল তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। আবার ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দের একই দিনে তিনি ইহলোকও ত্যাগ করেন। ন্যায়নিষ্ঠা, সততা ও সত্যবাদিতার জন্য হযরত মুহম্মদ (সা.) নবুয়তপ্রাপ্তির আগেই খ্যাতি অর্জন করেছিলেন 'আল-আমিন' নামে। ধর্ম সম্প্রদায় নির্বিশেষে সর্বশ্রেষ্ঠ মানবিক গুণাবলি হিসেবে এ সব সদ্‌গুণ সব কালে, সব দেশেই স্বীকৃত। শুধু তাই নয়- তার মধ্যে সম্মিলন ঘটেছিল করুণা, ক্ষমাশীলতা, বিনয়, সহিষ্ণুতা, সহমর্মিতা এবং শান্তিবাদিতার মতো সব মানবিক গুণাবলির। আধ্যাত্মিকতার পাশাপাশি কর্মময়তাও ছিল তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

ইতিহাস অনুযায়ী, আরব ভূ-খন্ডে এমন এক সময়ে তিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন, যখন পুরো অঞ্চলটি অশিক্ষা, কুসংস্কার, গোষ্ঠীগত হানাহানি, দাসপ্রথা, নারীর প্রতি চরম বৈষম্যসহ নানারকম সামাজিক অনাচারে নিমজ্জিত ছিল। হযরত মুহম্মদ (সা.) সেই ঘোর অন্ধকার সময়ে আবির্ভূত হন আলো হয়ে। অন্যায়-অবিচার-অজ্ঞানতার আঁধার থেকে মানুষকে তিনি সত্য ও ন্যায়ের আলোকিত পথ দেখান। ইসলামের সেই আলো এরপর শুধু সেই ভূ-খন্ডে সীমাবদ্ধ না থেকে ছড়িয়ে পড়ে গোটা পৃথিবীতে। মানবজাতির মুক্তি ও কল্যাণের জন্যই আবির্ভাব ঘটেছিল এ মহামানবের। তার সত্য ও ন্যায়ের আদর্শ ছিল সর্বমানবিক। আজকের হানাহানি ও সংঘাতময় পৃথিবী শান্তির দিশা পেতে পারে এ মহামানবের প্রদর্শিত শান্তি ও সমঝোতার পথে।

হযরত মুহম্মদ (সা.) ছিলেন বহুগুণে গুণান্বিত। দার্শনিক, বাগ্মী, ধর্ম প্রচারক, আইন প্রণেতা, যোদ্ধা, আদর্শ বিজেতা, মানবিক রীতি-নীতির প্রবর্তনকারী, ধর্মীয় সাম্রাজ্য ও জাগতিক সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। তিনি বিনম্র তবু নির্ভীক, শিষ্ট তবু সাহসী, সন্তান বৎসল এবং বিজ্ঞজন পরিবৃত। তিনি সর্বাধিক সম্মানিত, মানবসমাজে তিনি সবচেয়ে উন্নত, সর্বদাই সত্যবাদী, প্রেমময় স্বামী, বন্ধুত্বে অবিচল এবং অন্যের প্রতি ভ্রাতৃসুলভ, দয়ার্দ্র, অতিথি পরায়ণ, উদার এবং নিজের জন্য সর্বদাই মিতব্যয়ী। তিনি মিথ্যা শপথের বিরুদ্ধে যেমন কঠিন, তেমনি কঠোর ব্যভিচারীর বিরুদ্ধে। খুনি, কুৎসাকারী, অর্থলোভী, মিথ্যা সাক্ষ্যদাতাদের তিনি প্রতিপক্ষ। ধৈর্যে, বদান্যতায়, দয়ায়, পরোপকারে, কৃতজ্ঞতায়, বাবা-মা গুরুজনদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে এবং এক মহান ধর্ম প্রচারক তিনি। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, মহানবীকে প্রেরণ করা হয়েছে সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমতস্বরূপ।

তথ্য অনুযায়ী, ৪০ বছর বয়সে তিনি ওয়াহির মাধ্যমে নবুওয়াত প্রাপ্ত হন। এরপর হিরা থেকে ফিরে এসে সত্য বাণীর ঘোষণা করেন। মক্কা থেকে মদিনায় গিয়ে তিনি একটি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। রাষ্ট্রের কল্যাণে তিনি সব মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংবিধানও প্রণয়ন করেন। যাকে 'মদিনার সনদ' বলা হয়। সবাই সেখানে স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে থাকেন। এ কারণে সমাজে প্রবাহিত হয় শান্তির ফল্গুধারা। মানুষের জীবনকে কলুষমুক্ত ও আলোকিত করে তোলার লক্ষ্যে হযরত মুহম্মদ (সা.) প্রথমে নিজের জীবনকে সততা ও ন্যায়ের প্রতীকরূপে গড়ে তোলেন। তিনি যে আলোর পথ দেখিয়েছেন তা শুধু আরব জাতির জন্য নয়, সমগ্র মানব জাতির জন্য অনুকরণীয় ও অনুসরণযোগ্য। তিনি শিখিয়েছেন সামাজিক ন্যায়বিচার, পরস্পরের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ ও ভালোবাসা। মানুষকে সংযমী হওয়ার শিক্ষা যেমন দিয়েছেন তেমনি ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি এ সবের চর্চা করেছেন। কাজের ভেতর দিয়ে তিনি মানুষের মনে এ বোধ জাগ্রত করেছিলেন যে- মানুষ হচ্ছে সৃষ্টির সেরা জীব, আশরাফুল মাখলুকাত। সমাজ সংস্কারক হিসেবে মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা.) সর্বকালের আদর্শ। সমাজে নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। মানুষ মানুষের ভাই- এ বোধ তিনিই জাগিয়ে তুলেছেন।

সর্বোপরি, হযরত মুহম্মদের (সা.)-এর জীবনাদর্শ অনুসরণ করে আমরা সব ধরনের অন্যায়-অবিচার থেকে মুক্তি পেতে পারি। পৃথিবীর অনেক দেশে আজ মানুষ মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। ব্যাহত হচ্ছে শান্তি, বাড়ছে সন্ত্রাস, হিংসা, দ্বেষ, হানাহানি। বিদ্যমান এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মহানবীর বাণী বিশ্বশান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। তার শিক্ষাকে পাথেয় করে পথ চলতে পারলেই দূর হবে সব অন্যায়, অবিচার, অশান্তি ও অনাচার।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<117163 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1