৩০ লাখ শহীদের নামে বৃক্ষরোপণ

আমরা মানুষ মাত্রই গাছের উপকারিতা সম্পকের্ জানি। কারণ ছোটবেলা থেকেই পরিবেশ পরিচিতি বইতে পড়ে আসছি গাছ বায়ুমÐলের ক্ষতিকর কাবর্নডাই-অক্সাইড গ্যাস গ্রহণ করে পরিবেশ নিমর্ল রাখতে সহায়তা করে। অন্যদিকে মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় জীবন রক্ষাকারী অক্সিজেন গ্যাস পরিত্যাগ করে। এতে একদিকে যেমন বায়ুমÐলে ক্ষতিকর গ্যাসসমূহের ভারসাম্য রক্ষা হয় অপরদিকে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে পরিবেশ রক্ষা করে থাকে।

প্রকাশ | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

ড. মো. হুমায়ুন কবীর
প্রতি বছর এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর- এ ছয় মাস বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ার কারণে তখন বৃক্ষরোপণের মৌসুম। কারণ বৃক্ষ রোপণের সঙ্গে বৃষ্টিপাতের একটি বিরাট সম্পকর্ রয়েছে। গাছ লাগালে তা টিকে থাকার জন্য পানির চাহিদা থাকে। কাজেই এ মৌসুমকে কেন্দ্র করেই গাছ লাগানোর পরিকল্পনা করা হয়ে থাকে। তখন বৃক্ষ রোপণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভাগ দপ্তর যেমন কৃষি বিভাগ, বন বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর ইত্যাদি তো রয়েছেই, তাছাড়াও বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও বেসরকারি সংস্থা বৃক্ষরোপণ সপ্তাহ মাস ইত্যাদি নামে অভিযান পরিচালনা করে থাকে। এর কারণ একটাইÑ আর তা হলো পরিবেশ রক্ষা ও বায়ু নিমর্ল রাখা। আমাদের জন্য একটি সৌভাগ্যের বিষয় এই যে, বাংলাদেশের বতর্মান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুবই বৃক্ষপ্রেমী একজন মানুষ। শুধু তাই নয়, তিনি পরিবেশ সম্পকের্ খুবই সচেতন। পরিবেশ নিয়ে এখন সারাবিশে^ শেষ কথাটি বলার একমাত্র ব্যক্তি তিনিই। সে জন্য ২০১৫ সালে তিনি পরিবেশ বিষয়ে জাতিসংঘের সবোর্চ্চ সম্মান ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আথর্’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন। অন্যদিকে তিনি বাংলাদেশকে নিজের প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসেন। কারণ তার বাবা বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদেশকে দুইশ বছরের গোলামী থেকে মুক্তি দিয়ে স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। সেই স্বাধীনতা যুদ্ধে জীবন দিয়েছেন ত্রিশ লাখ তাজা প্রাণ এবং সম্ভ্রম দিয়েছেন দু’লাখ মা বোন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাই সুযোগ পেলেই তাদের রক্তের ঋণ শোধ করার সুযোগ খেঁাজেন। কাজেই বলা চলে এক্ষেত্রে তার দুটি ভালোবাসার বিষয় একাকার হয়ে গেছে। সে জন্যই তিনি এবার (২০১৮) বিশ^ পরিবেশ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বৃক্ষরোপণ অভিযান উদ্বোধনকালে সারাদেশে স্বাধীনতার ত্রিশ লাখ শহীদের নামে প্রতীকী ত্রিশ লাখ গাছ লাগানোর ঘোষণা দিয়েছেন। সে অনুযায়ী ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগ, দপ্তর, বিভিন্ন সরকারি এবং দেশীয় ও আন্তজাির্তক বেসরকারি সংস্থাসমূহ মৌসুমভর বৃক্ষরোপণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। পরিবেশবান্ধব গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে প্রতি বছরই কোনো না কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য সফল করার জন্য কাজ করে চলেছে। আর সেক্ষেত্রে সরকারি নিদের্শ ও প্রণোদনা বিরাট ভূমিকা পালন করছে। যেমন উদাহরণস্বরূপ বলা চলে গত কয়েক বছর ধরে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে চলেছে। সেই বজ্রপাত কিছুটা হলেও বৈজ্ঞানিকভাবে ঠেকানোর জন্য নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে। সারাদেশে ত্রিশ লাখ তালগাছ লাগানোর কথা বলা হয়েছে এতে। সরকারি নিদের্শনা পেয়ে বেশ কয়েক বছর যাবৎ সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও সংস্থা দ্বারা নিয়মিত তাল ও সুপারি ইত্যাদি উঁচু বজ্রপাত নিরোধক গাছ লাগানো চলমান রয়েছে। আমরা মানুষ মাত্রই গাছের উপকারিতা সম্পকের্ জানি। কারণ ছোটবেলা থেকেই পরিবেশ পরিচিতি বইতে পড়ে আসছি গাছ বায়ুমÐলের ক্ষতিকর কাবর্নডাই-অক্সাইড গ্যাস গ্রহণ করে পরিবেশ নিমর্ল রাখতে সহায়তা করে। অন্যদিকে মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় জীবন রক্ষাকারী অক্সিজেন গ্যাস পরিত্যাগ করে। এতে একদিকে যেমন বায়ুমÐলে ক্ষতিকর গ্যাসসমূহের ভারসাম্য রক্ষা হয় অপরদিকে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে পরিবেশ রক্ষা করে থাকে। আমরা জানি কোনো স্থানের পরিবেশ রক্ষা করার জন্য সে এলাকার মোট আয়তনের কমপক্ষে ২৫ শতাংশ গাছপালাসহ বনভূমি থাকা বাধ্যতামূলক। অন্য অনেক গবেষণা থেকে পাওয়া যায় একটি গাছ থেকে যে পরিমাণ অক্সিজেন নিগর্মণ হয় এবং একটি গাছ যে পরিমাণ কাবর্নডাই-অক্সাইড গ্যাস অভিযোজন করে থাকে, তা ঐ এলাকার একটি গাছের দশগুণ আয়তনের সমান। তাছাড়া দিনে দিনে কাবর্নডাই-অক্সাইড গ্যাস নিসৃত হয়ে বায়ুমÐলে এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে সে এলাকার তাপমাত্রা বেড়ে যায়। প্রকৃত অথের্ এগুলোর কুফলই হলো জলবায়ু পরিবতের্নর মতো ঘটনা ঘটে থাকে। কাজেই এমনি একটি সময়ে মাননীয় দূরদশীর্ প্রধানমন্ত্রী শহীদদের উদ্দেশ্যে ত্রিশ লাখ বৃক্ষ রোপণের যে ঘোষণা দিয়েছেন, তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। কারণ বৃক্ষ রোপণ যে শুধু পরিবেশই রক্ষা করে তাই নয়। এর একটি অথৈর্নতিক মূল্যমানও রয়েছে। যদি রোপিত এ ত্রিশ লাখ বৃক্ষের অধের্ক অথার্ৎ পনেরো লাখও টিকে থাকে তাহলে তা আগামী ১৫-২০ বছরে এ থেকে প্রচুর কাঠ, ফল ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় তৈজস পাওয়া যাবে। আসুন আমরা এ বছরের বৃক্ষরোপণ মৌসুমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আহŸানকে সম্মান জানিয়ে এবং মুক্তি সংগ্রামের শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে ত্রিশ লাখ বৃক্ষরোপণের লক্ষ্যমাত্রাকে সঠিক সময়ে পূরণ করে একটি জাতীয় দায় মোচন করি। ড. মো. হুমায়ুন কবীর: কৃষিবিদ ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় শনফযঁসধুঁহ০৮@মসধরষ.পড়স