পাঠক মত

ফাইভ-জি: একটি বিশেষ পযাের্লাচনা

প্রকাশ | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

মো. মাঈন উদ্দিন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশে কিছুদিন আগেই চালু হয়েছে মোবাইলের ফোর-জি, কিন্তু বিশ্বে এর মধ্যেই আলোচনা শুরু হয়ে গেছে পঞ্চম প্রজন্মের ইন্টারনেট বা ফাইভ-জি নিয়ে। অনেক দেশে সামনের বছর নাগাদ এই সেবাটি চালু হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে, যেখানে বতর্মানের তুলনায় ১০ থেকে ২০ গুণ বেশি গতির ইন্টারনেট পাওয়া যাবে। কিন্তু আমাদের জীবনে তা কতটা কি পরিবতর্ন আনবে? আমাদের কি তখন নতুন মোবাইল ফোন কিনতে হবে? এটা কি প্রত্যন্ত মানুষদের সেবা প্রাপ্তি বাড়াবে? এসব প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আসুন কিছু আলোচনা করি অনেকের মনে একটি কমন প্রশ্ন জাগতে পারে, তাহলো ফাইভ-জি আসলে কী? মোবাইল ফোনের পঞ্চম জেনারেশন ইন্টারনেটকে সংক্ষেপে ডাকা হয় ফাইভ-জি; যেখানে অনেক দ্রæত গতিতে ইন্টারনেট তথ্য ডাউন লোড এবং আপলোড করা যাবে। যার সেবার আওতা হবে ব্যাপক। এটা আসলে রেডিও তরঙ্গের আরও বেশি ব্যবহার নিশ্চিত করবে এবং একই সময় একই স্থানে বেশি মোবাইল ফোন ইন্টারনেটের সুবিধা নিতে পারবে। এবার আসুন আলোচনা করি, এটি আমাদের জন্য কি অথর্ বহন করছে। ফাইভ জি চালু হলে আমাদের জীবন প্রবাহ পাল্টে যাবে দ্রæতলয়ে। এ সম্পকের্ একজন বিশেষজ্ঞের কথা শোনা যাক। মোবাইল তথ্য বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ওপেন সিগন্যালের কমর্কতার্ ইয়ান ফগ বিবিসিকে বলেন, এখন আমরা আমাদের স্মাটের্ফান দিয়ে যাই করি না কেন, ফাইভ জি হলে তা আরও দ্রæতগতিতে এবং ভালোভাবে করতে পারব। অনেক নতুন সেবা আসবে, যা আমরা এখনো ভাবতে পারছি না। হয়তো ড্রোনের মাধ্যমে গবেষণা এবং উদ্ধার কাযর্ক্রম পরিচালনা হবে, অগ্নি নিবার্পণে সহায়তা করবে। আর সেসবের জন্যই ফাইভ জি প্রযুক্তি সহায়ক হবে। অনেকে মনে করেন, চালক বিহীন গাড়ি, লাইভ ম্যাপ এবং ট্রাফিক তথ্য পড়ার জন্যও ফাইভ জি গুরুত্বপূণর্ হয়ে উঠবে। মোবাইল গেমাররা আরো বেশি সুবিধা পাবেন। ভিডিও কল আরও পরিষ্কার হবে। সহজেই ও কোনো রকম বাধা ছাড়াই মোবাইলে ভিডিও দেখা যাবে। শরীরে লাগানো ফিটনেস ডিভাইসগুলো নিখুঁত সময়ে সংকেত দিতে পারবে, জরুরি চিকিৎসা বাতার্ও পাঠাতে পারবে। নিশ্চয়ই আপনার মনে প্রশ্ন জাগছে ফাইভ-জি কীভাবে কাজ করবে? প্রকৃতপক্ষে নতুন কিছু প্রযুক্তি হয়তো প্রয়োগ আসতে যাচ্ছে, কিন্তু ফাইভ জি প্রটোকলের মান এখনও নিধাির্রত হয়নি। ৩.৫ গিগাহাজের্র থেকে ২৬ গিগাহাজের্র মতো হাইয়ার ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডের অনেক ক্ষমতা রয়েছে, কিন্তু স্বল্প তরঙ্গ দৈঘের্্যর কারণে তাদের আওতা থাকে কম। ফলে সামনে কোনো বাধা পেয়ে সেগুলো সহজেই আটকে যায়। ফোর-জির তুলনায় ফোর-জি কী অনেক আলাদা, এই প্রশ্নের উত্তরে বলব-অবশ্যই। এটা একেবারে নতুন একটি রেডিও প্রযুক্তি। কিন্তু প্রথমেই হয়তো দ্রæত গতির বিষয়টি নজরে আসবে না। তাহলে এটি কতটা দ্রæতগতির হতে পারে? বতর্মানের ফোর-জি প্রযুক্তির নেটওয়াকর্ গড়ে সবোর্চ্চ ৪৫ এমবিপিএস গতি সুবিধা দিতে পারে। যদিও আশা করা হচ্ছে যে, এই নেটওয়াকের্ই ১ গিগাবাইট পার সেকেন্ড গতি একসময় দেয়া যাবে। চিপ নিমার্তা প্রতিষ্ঠান কোয়ালকম জানিয়েছে, ফাইভ-জি এর ১০ থেকে ২০ গুণ গতি দিতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একটি ভালো মানের চলচ্চিত্র হয়তো মাত্র এক মিনিটেই ডাউন লোড করা যাবে। অনেকেই হয়তো বলবেনÑ ফাইভ জি কেন দরকার? অতীব সত্যি কথা হলো, সারাবিশ্বই এখন মোবাইল নিভর্র হয়ে উঠছে এবং প্রতিদিনই আমরা আরও বেশি তথ্য ব্যবহার করছি। ফাইভ-জি চালাতে আমাদের নতুন ফোন দরকার হবে কি? এ প্রশ্নের উত্তরে বলব-সম্ভবত। তবে ২০০৯/১০ সালে যখন ফোর জি প্রযুক্তি চালু হয়, তার আগেই মোবাইল কোম্পানিগুলো এর উপযোগী ফোন নিয়ে বাজারে এসে গিয়েছিল। ইয়ান ফগ জানান, এবার হয়তো কোম্পানিগুলো সেই কাজ করবে না। সামনের বছর নাগাদ হয়তো তারা ফাইভ জির উপযোগী করেই ফোন বাজারে আনবে, তবে এসব ফোন ফোর জিতেও কাজ করতে পারবে। এটা কি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট যুগের সমাপ্তি ঘটিয়ে দেবে? এককথায় বলা চলে, না। আবাসিক এবং অফিসগুলো আরও অনেক বছর ধরে ফিক্সড ব্রডব্যান্ড লাইনের ওপর নিভর্র করবে। কারণ এখনো অনেকই মনে করেন, তারের মাধ্যমে স্থিতিশীল ইন্টারনেট পাওয়া যায়। সবের্শষ আমরা যে প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আলোচনা করব তাহলোÑ প্রান্তিক এলাকায় কতটা সহায়ক ভূমিকা রাখবে ফাইভ জি? দেখুন, অনেক দেশের প্রান্তিক এলাকায় সিগন্যাল সমস্যা এবং খারাপ গতির ইন্টারনেট একটি সমস্যা, এমনকি যুক্তরাজ্যেও। তবে ফাইভ জিতে হয়তো এই সমস্যার এখনি কোনো সমাধান আনতে পারবে না, কারণ এটিও উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সির ব্যান্ডে কাজ করে। এটা একসঙ্গে অনেক মানুষকে সেবা দিতে পারে, কিন্তু এর আওতা ততটা বড় নয়। ফলে আপাতত ফাইভ জি শহরে এলাকার মানুষজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। সত্যি কথা বলতে, অত্যন্ত প্রত্যন্ত এলাকাগুলোয় সরকারি সহায়তা ছাড়া নেটওয়াকর্ অপারেটররা হয়তো যেতেই চাইবে না।