ওএমএসের পণ্য কালোবাজারে

দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই কাম্য

প্রকাশ | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য সরকারের খাদ্যবান্ধব কমর্সূচির শত শত টন খাদ্যপণ্য কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগ অহরহ পাওয়া যায়। মাঝে মধ্যে এসব পণ্য কালোবাজার থেকে জব্দও করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বাস্তবতা হলো, সরকারের কঠোর নিদের্শনা সত্তে¡ও কালোবাজারে পণ্য বিক্রি বন্ধ করা যায়নি। সরকারের সুযোগ সন্ধানী এক শ্রেণির অসাধু কমর্কতার্-কমর্চারী কালোবাজারে পণ্য বিক্রির মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সরকারের খাদ্যবান্ধব কমর্সূচি। বেকায়দায় পড়ছে স্বল্প আয়ের মানুষ। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগঁাও সরকারি খাদ্যগুদাম থেকে ২১৫ টন চাল ও আটা পাচারের অভিযোগ ওঠে। র‌্যাবের বিশেষ অভিযানে পাচারকৃত এই চাল ও আটার মধ্যে ১০০ টন জব্দ করা হয় রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কৃষি মাকেের্ট অভিযান চালিয়ে। র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অবশিষ্ট ১১৫ টন পণ্য খাদ্যগুদাম থেকে ৮ ট্রাক ভতির্ করে পাচারের সময় জব্দ করা হয়। এই পণ্যের গন্তব্য ছিল চুয়াডাঙ্গা, শ্রীমঙ্গল ও মাওনা। জানা গেছে, পণ্য জব্দের পাশাপাশি পাচারের দায়ে অভিযুক্ত সরকারি গুদামের ব্যবস্থাপক হুমায়ুন কবিরসহ দু’জনকে আটক করেছে র‌্যাব। তথ্য অনুযায়ী, সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয় স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য খোলাবাজারে বিক্রির জন্য এসব চাল ও আটা সরকার ক্রয় করে ৩৯ টাকা কেজি দরে, আর বিক্রি করে ২৮ টাকা দরে। অন্যদিকে ৩২ টাকা কেজি দরে আটা কিনে তা বিক্রি করে ১৬ টাকায়। অঙ্গীকার অনুযায়ী বতর্মান সরকার ক্ষুধামুক্ত দেশ গড়তে ওএমএসের মাধ্যমে ভতুির্ক দিয়ে পণ্য বিক্রির মাধ্যমে স্বল্প আয়ের মানুষের পাশে দঁাড়িয়েছে। এটি সরকারের বহুল প্রশংসিত একটি জনবান্ধব কমর্সূচি। অথচ খাদ্যবিভাগের কতিপয় অসাধু কমর্কতার্-কমর্চারীর জন্য এই প্রকল্প শুরু থেকেই নানা সমালোচনার মুখে পড়ে। খাদ্যগুদামের অসাধু কমর্কতার্রা এই চাল-আটা গোপনে বিক্রি করে সরকারকে বার বার বেকায়দায় ফেলছেন। আর এমন খবরের ভিত্তিতেই র‌্যাব এবারের বিষয়টি গোপনে তদন্ত করছিল। এর অংশ হিসেবে গত শনিবার রাতে তেজগঁাও সরকারি খাদ্যগুদামে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে পাচার করার সময় বিপুল পরিমাণ এই পণ্য জব্দ করা হয়। জব্দ করা চাল ও আটা ১৪১টি ট্রাকে করে ঢাকার স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে বিক্রি করার কথা ছিল বলে র‌্যাবের দায়িত্বশীল সূত্র দাবি করেছে। বলাই বাহুল্য, স্বল্প আয়ের মানুষ তুলনামূলক কম দামে এসব খাদ্যপণ্য কিনে পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকে। কিন্তু ঘৃণ্যচক্র তাদের সেই খাদ্যপণ্য কালোবাজারে বিক্রি করে নিজেরা লাভবান হওয়ার পঁায়তারা করে আসছে দীঘির্দন। যখন কোনো সরকারি পণ্য যে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী কালোবাজারে বিক্রি করে অবৈধ উপায়ে নিজেদের স্বাথর্ হাসিলের চেষ্টা করে, তখন নিঃসন্দেহে বিষয়টি জঘন্যতম অপরাধের পযাের্য়র পড়ে। আর এসব অপরাধীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার কোনো বিকল্প থাকা উচিত নয়। আমরা মনে করি, সরকারি পণ্য পাচারের ঘটনায় সরকারি অসাধু কমর্কতাের্দর পাশাপাশি অসাধু ব্যবসায়ীর জড়িত থাকার সন্দেহেও অমূলক নয়। তেজগঁাও খাদ্য গুদাম থেকে সরকারি খাদ্যপণ্য পাচারের ঘটনায় দেশের কিছু অবৈধ ব্যবসায়ী জড়িত থাকতে পারে, এমন তথ্য র‌্যাবের কাছে আছে বলেও গণমাধ্যমে খবর এসেছে। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে অসাধু ওই ব্যবসায়ী চক্রকেও আইনের আওতায় আনার কাযর্কর উদ্যোগ নেয়া হবে। আমরা বলতে চাই, যখন বারংবার সরকারি খাদ্যগুদাম থেকে কালোবাজারে পণ্য বিক্রির অভিযোগ উঠছে তখন সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কতর্ব্য হওয়া দরকার এ ব্যাপারে তদারকি বাড়ানো। এমনিতেই পণ্যের বাজারে সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই এমন কথা শোনা যায়। এরপর ওএমএসের পণ্য যদি এভাবে কালোবাজারে পাচার হতে থাকে তাহলে এর চেয়ে পরিতাপের আর কি হতে পারে। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে পাচারকারীদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হবে। সরকারের জনকল্যাণমুখী কমর্সূচিগুলো কতিপয় স্বাথাের্ন্বষীর কারণে ভ‚লুণ্ঠিত হতে পারে না। হতে দেয়াও উচিত নয়। জনগণ যাতে সুবিধাপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত না হয় এ ব্যাপারে সরকার তথা সংশ্লিষ্টরা আরও কঠোর হোকÑ এটাই প্রত্যাশা।