জো বাইডেনকে অভিনন্দন

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট

প্রকাশ | ০৯ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
জো বাইডেন নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন। মার্কিন সংবিধান অনুসারে, বাইডেনের নতুন মেয়াদ শুরু হবে ২০ জানুয়ারি দুপুরে। এ দিন রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে এক অনুষ্ঠানে নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি কর্তৃক শপথগ্রহণ করবেন। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, টানটান উত্তেজনার অবসান ঘটিয়েই অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন জো বাইডেন। আর এর মাধ্যমে বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর এই দেশটির সর্বোচ্চ পদে আসীন হওয়ার জন্য তার প্রায় অর্ধশতাব্দীর লড়াইয়ের সফল সমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে। নানা কারণেই এবারের নির্বাচন ছিল ব্যাপক আলোচিত। বাইডেনের এই জয়ের ফলে ১৯৯২ সালের পর এই প্রথম কোনো প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প এক মেয়াদ শেষেই হোয়াইট হাউস থেকে বিদায় নিচ্ছেন। এছাড়া মার্কিন ইতিহাসে যে কোনো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে এবার। উলেস্নখ্য যে, এবারের নির্বাচনে ইলেকট্রোরাল ভোটে জো বাইডেন পেয়েছেন ২৯০ এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প ২১৪ আর পপুলার ভোটে বাইডেন পেয়েছেন ৭ কোটি ৫১ লাখ এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প ৭ কোটি ৮ লাখ। উলেস্নখ্য, ১৯৪২ সালের ২০ নভেম্বর আমেরিকার পেনসিলভানিয়ায় জন্ম নেওয়া বাইডেনের প্রথম চাকরি ছিল উইলমিংটন ল' ফার্মে। ফার্মের প্রধান ছিলেন রিপাবলিকান উইলিয়াম প্যাট্রিক। বাইডেনের পরবর্তী কর্মস্থল ল' ফার্মের কর্ণধার ছিলেন ডেমোক্রেট। তার সান্নিধ্যে বাইডেনও সক্রিয় ডেমোক্রেটপন্থি হয়ে ওঠেন। এরপর ধীরে ধীরে আইনজীবী বাইডেনকে ছাপিয়ে যায় তার রাজনীতিক সত্তা। কাউন্টি কাউন্সিলের দায়িত্ব পালন করার পরে তিনি ১৯৭২ সালে প্রথম অংশ নেন সিনেটর হওয়ার লড়াইয়ে। প্রথম চেষ্টাতেই সাফল্য ধরা দেয়। ১৯৭২ সালেই তিনি ডেলাওয়্যার থেকে জুনিয়র সিনেটর হন। দীর্ঘ রাজনীতিক জীবনে ১৯৭৩ থেকে ২০০৯ অবধি বাইডেন ছিলেন ডেলাওয়্যারের ডেমোক্রেট সিনেটর। এরপর ২০০৯ থেকে ২০১৭ অবধি প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার দুই দফার মেয়াদে ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস গড়েছেন কমলা হ্যারিস। তিনিই দেশটির প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ও এশীয় নারী যিনি যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত হতে যাচ্ছেন। বায়োমেডিকেল গবেষক ভারতীয় বংশোদ্ভূত শ্যামলা গোপালান হ্যারিস এবং জ্যামাইকান অর্থনীতিবিদ ডোনাল্ড হ্যারিসের ঘরে ১৯৬৪ সালে জন্ম হয় কমলা দেবি হ্যারিসের। শ্যামলা এবং ডোনাল্ড উভয়েই যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হিসেবে নাগরিকত্ব পান। ধারণা করা হয়, এ কারণেই অভিবাসন ইসু্যর পক্ষে কমলাকে বেশ উদারপন্থি বক্তব্যও দিতে দেখা যায়। আমরা বলতে চাই, বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর এই দেশটির নির্বাচন স্বাভাবিকভাবেই সবার আগ্রহের কারণ ছিল। এখন নতুন নেতৃত্ব দেশের শান্তি সমৃদ্ধির জন্য কাজ করবে এবং এর পাশাপাশি বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হয়ে সংকট মোকাবিলায় আন্তরিকভাবে প্রচেষ্টা জারি রাখবে এমনটি কাম্য। বলার অপেক্ষা রাখে না, শান্তি সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার বিকল্প নেই। নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম ভাষণে জো বাইডেনও সব বিভেদ ভুলে ঐক্য ও সহনশীল সমাজ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। আমরা মনে করি, এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যারা তাকে ভোট দেননি, ডেমোক্রেট, রিপাবলিকান সবাইকে শত্রম্নতা ভুলে সহযোগিতার সম্পর্ক তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন জো বাইডেন, যা অত্যন্ত ইতিবাচক বলেই প্রতীয়মান হয়। বিভেদ সহিংসতা হিংসা-বিদ্বেষের মতো বিষয়গুলো অগ্রগতির পথে অন্তরায়। ফলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সমৃদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি আমেরিকার মতো ক্ষমতাধর রাষ্ট্র সারা বিশ্বের শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করুক এটাই প্রত্যাশা। এ কথা ভুলে যাওয়া যাবে না, সারা বিশ্বেই নানা ধরনের সংকট সৃষ্টি হয়েছে, করোনা পরিস্থিতি এক নতুন অভিজ্ঞতায় ফেলেছে বিশ্ববাসীকে। এছাড়া নানা ধরনের সংকট, যুদ্ধবিগ্রহ, জলবায়ু পরিবর্তজনিত ঝুঁকির মতো বিষয় আমলে নিয়ে আমেরিকার এই নতুন নেতৃত্ব কাজ করবে এটাই কাম্য। আমরা বলতে চাই, বাণিজ্য ও বিনিয়োগসহ নানা ক্ষেত্রেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশর সুসম্পর্ক রয়েছে। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও বলেছেন, মার্কিন নির্বাচনে যিনিই ক্ষমতায় আসুন না কেন বাংলাদেশের কোনো সমস্যা নেই। ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আরো দৃঢ় হোক। সর্বোপরি বলতে চাই, ভোট গণনা নিয়ে নানা ধরনের জটিলতা পেরিয়ে জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন। যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম এই নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে আমাদের অভিনন্দন।