দারিদ্র্য নির্মূলে সহায়ক হবে

বহুমুখী গ্রাম সমবায়

প্রকাশ | ০৯ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
দারিদ্র্য নির্মূলে বহুমুখী গ্রাম সমবায় নিশ্চিত করতে সমবায়ীদের কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ৪৯তম জাতীয় সমবায় দিবস-২০২০ উদযাপন এবং জাতীয় সমবায় পুরস্কার-২০১৯ বিতরণ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এটা শুধু সম্ভব হয়েছে জনগণ ভোট দিয়ে আমাদের নির্বাচিত করেছিল বলে, আর জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমরা প্রতিটি পদক্ষেপ নিয়েছি বলে। কাজেই এটা আজকে পরীক্ষিত যে, বহুমুখী গ্রাম সমবায় যদি গড়ে তুলতে পারি বাংলাদেশে কোনো দারিদ্র্য থাকবে না। দারিদ্র্য সম্পূর্ণ নির্মূল হবে। বাংলাদেশকে আমরা ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি।' এর আগে তিনি দুস্থ মানুষের সহায়তায় বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, দেশের উন্নয়নে সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করলে দারিদ্র্য থাকবে না। আমরাও তাই মনে করি। আশার কথা, ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়েছে। অপুষ্টির হার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে ধারাবাহিক উন্নতি অব্যাহত থাকায় ক্ষুধামুক্তির লড়াইয়ে গত এক বছরে বড় অগ্রগতি হয়েছে বাংলাদেশের। ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট শুক্রবার চলতি বছরের যে 'বিশ্ব ক্ষুধা সূচক' প্রকাশ করেছে, তাতে ১০৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান উঠে এসেছে ৭৫তম অবস্থানে। গত বছর এ সূচকে ১১৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৮৮তম। তার আগের তিন বছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল যথাক্রমে ৮৬, ৮৮ ও ৯০ নম্বরে। কেবল সূচকের অবস্থানে অগ্রগতি নয়, যে চার মাপকাঠিতে বিচার করে গেস্নাবাল হাঙ্গার ইনডেক্স (জিএইচআই) করা হয়, তার সবটাতেই গতবারের তুলনায় বাংলাদেশ এগিয়েছে। করোনা মহামারিকালে এটা আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে সুখবর। করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার কারণে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতিমধ্যে বহু দেশ থেকে কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে। কোটি কোটি মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। ফলে বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য বাড়বে। করোনাভাইরাস সংকটের অর্থনৈতিক পরিণতি বিশ্বের ৬ কোটি মানুষকে চরম দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এ কথা বলে সতর্ক করেছেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড মালপাস। বর্তমান পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টা যথেষ্ট নয় বলেও মনে করেন তিনি। বিশ্বব্যাংক আশঙ্কা করছে ২০২০ সালের মধ্যে বিশ্ব অর্থনৈতিক উৎপাদন পাঁচ শতাংশেরও বেশি সংকুচিত হবে। যা দারিদ্র্য দূরীকরণে বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর গত তিন বছরে প্রচেষ্টা মুছে ফেলবে। করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্যের হার বাড়লেও বাংলাদেশে এর তেমন প্রভাব পড়েনি। বাংলাদেশ দারিদ্র্য বিমোচন ও মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে যে উলেস্নখযোগ্য অগ্রগতি, এর বেশির ভাগই সম্ভব হয়েছে শ্রম আয় বৃদ্ধি এবং বর্তমান সরকারের দরিদ্র-বান্ধব নানা ইতিবাচক পদক্ষেপের কারণে। ২০১০-২০১৬ সময়ে ৮০ লাখ বাংলাদেশি দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে এসেছে। জোরালো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশে দারিদ্র্য কমাচ্ছে। দারিদ্র্য হার কমিয়ে আনতে সব দরিদ্র পরিবারকে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। সরকারের এ ধরনের নানামুখী পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ অত্যন্ত ইতিবাচক। করোনাকালে সরকার দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে বিশেষ প্রণোদনা দিয়েছে। আমাদের যেভাবে এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল, প্রচুর সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আমরা সে অবস্থায় এখনো যেতে পারিনি দুর্নীতির কারণে। সব ধরনের বাধা দূর করতে পারলে দারিদ্র্য আশানুরূপ হ্রাস করাই কেবল অসম্ভব নয়, নির্মূল করাও সম্ভব।