ঢাকা-দিল্লি সম্পকর্

আরও সুদৃঢ় হোক

প্রকাশ | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান সম্পকর্ বিশ্বের অন্যান্য অংশের জন্য রোল মডেল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জানা যায়, তিনি বলেছেন, ‘বহু বছর ধরে আমাদের মধ্যে বিদ্যমান পারস্পরিক বিশ্বাস, শ্রদ্ধাবোধ এবং সুনামের কারণে আমাদের সম্পকর্ পরিপক্বতা পেয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের এ সম্পকর্ বিশ্বের অন্যান্য অংশের জন্য একটি রোল মডেল হয়ে উঠেছে। এই সুসম্পকর্ আমাদের দৃঢ় আস্থার সঙ্গে পারস্পরিক সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে সাহায্য করেছে।’ উল্লেখ্য, গত সোমবার বিকালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ উদ্যোগে তিনটি প্রকল্প নিমাণর্ কাজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। তথ্য মতে, নতুন প্রকল্প তিনটি হচ্ছেÑ কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানিবিষয়ক প্রকল্প, বাংলাদেশ রেলওয়ের কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন পুনবার্সন এবং আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েল গেজ রেল সংযোগ নিমার্ণ (বাংলাদেশ অংশ)। আমরা বলতে চাই, মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক কমর্কাÐে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে ভারত। আর প্রতিবেশী দেশের মধ্যকার সুসম্পকর্ বজায় রাখা আঞ্চলিক উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার জন্য জরুরি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকার ও সে দেশের জনগণের গুরুত্বপূণর্ অবদানকে আমরা সব সময়ই কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করি। এটি আমাদের সম্পকের্র ক্ষেত্রে চিরদিনই একটি মাইলফলক হিসেবে বজায় থাকবে।’ প্রসঙ্গত বলতে চাই, বাংলাদেশ ভারতের শুধু নিকট প্রতিবেশীই নয়; বরং দীঘির্দনের পরীক্ষিত অকৃত্রিম বন্ধু ও সুহৃদ। ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, যোগাযোগ, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুদেশের মধ্যে যে অগ্রগতি সাধিত হয়েছে তা ইতিবাচক। আর বতমাের্ন রেলওয়ে খাতে যেভাবে সহযোগিতা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে তাও দুই দেশের সম্পকের্ক আরও বেশি সুদৃঢ় করবে এমনটি আমাদের বিশ্বাস। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের উচ্চ অথৈর্নতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার জন্য আরও বিদ্যুৎ প্রয়োজন। এজন্য আঞ্চলিক সহযোগিতা কাঠামোর অধীনে ২০৪১ সালের মধ্যে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনার বিষয়টি তুলে ধরে, এই লক্ষ্য অজের্ন ভারত আমাদের পাশে থাকবে এমন আশাবাদও ব্যক্ত করেন। আমরা মনে করি, পারস্পরিক আস্থা ও সুসম্পকর্ ছাড়া কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অজর্ন সম্ভব নয়। ফলে ভারত বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের পাশে থাকবে এমনটি কাম্য। আমরা বলতে চাই, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে অগ্রগতি সাধিত হলেও কিছু বিষয় অমীমাংসিতই থেকে গেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সফর করেন। তার আমলে দুই দেশের মধ্যে ছিটমহল বিনিময় সম্পন্ন হলেও তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সই হয়নি। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানাজির্র আপত্তির কারণে চুক্তি সই হতে পারেনি। ২০১৭ সালে ফিরতি সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত যান। ওই সময়েও তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সই হবে বলে আশা করা হচ্ছিল। কিন্তু শেষ পযর্ন্ত তা হয়নি। চলতি বছরের ২৫ মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী বৈঠক করেন। সেখানে দুই নেতা দ্বিপক্ষীয় বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার নতুন অঙ্গীকার করেছিলেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী গত বছর এপ্রিলে নয়াদিল্লিতে বলেছিলেন, কেবল তার সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারই পারে তিস্তার পানিবণ্টন সমস্যা সমাধান করতে। নরেন্দ্র মোদি বারবার আশ্বাস দেয়ার পরও তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি না হওয়াটা অত্যন্ত পরিতাপের। সবোর্পরি আমরা বলতে চাই, দিল্লি বাংলাদেশের কাছে করিডোর, ট্রান্সশিপমেন্ট, শুল্কমুক্ত পণ্য পরিবহন ও বাণিজ্য সুবিধাসহ যখন যা চেয়েছে, তখনই তা পেয়েছে সহজে। এ ছাড়া ভারত কোনো অবস্থাতেই আন্তজাির্তক রীতিনীতি ও আইনকানুন ভঙ্গ করে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তাসহ অভিন্ন নদ-নদীর পানির স্বাভাবিক প্রবাহ অবরুদ্ধ করতে পারে না। ফলে দুই দেশের সম্পকের্ক আরও উন্নীত করতে অমীমাংসিত বিষয়ে ঐকমত্যে পেঁৗছাতে ভারত এগিয়ে আসবে এমনটি জরুরি। দুই দেশের অমীমাংসিত বিষয়ের সমাধান করাসহ রোহিঙ্গা শরণাথীের্দর মিয়ানমারে শান্তিপূণর্ ও সম্মানজনক পুনবার্সনে ভারতের সবার্ত্মক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে এবং দুই দেশে বন্ধুত্বপূণর্ সম্পকর্ আরও বেশি সুদৃঢ় হবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।