উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

বতর্মান সরকারের ভিশন ২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিটি ক্লাসরুমে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে ক্লাস নেয়া হচ্ছে। সম্পূণর্ ক্যাম্পাস ওয়াইফাই-এর আওতায় আনা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা ও গবেষণার মান বৃদ্ধি পেয়েছে। হেকেপের আওতায় ৭টি প্রকল্প শিক্ষার মানোন্নয়নকল্পে সুসম্পন্ন হয়েছে।

প্রকাশ | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

প্রফেসর ড. মো. হারুনর রশীদ
দক্ষিণ বাংলার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি উন্নয়নে অনন্য অবদান রাখছে। ২০০০ সালের ৮ জুলাই সাবেক পটুয়াখালীর কৃষি কলেজের অবকাঠামোতেই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রকৃতির মনোরম সৌন্দযর্মÐিত দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সবের্শ্রষ্ঠ বিদ্যাপীঠ পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। অনেক চরাই-উৎরাই পেরিয়ে এই সবুজ ক্যাম্পাস পার করেছে দীঘর্ ১৭ বছর। ক্যাম্পাসটি নিজস¦ ঐতিহ্য ও স¦াতন্ত্র্য বজায় রেখে প্রযুক্তিনিভর্র ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। পটুয়াখালী জেলা শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার উত্তরে বরিশাল বিভাগীয় শহর থেকে ২৮ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক থেকে ৫ কিলোমিটার পূবের্ পটুয়াখালী জেলার দুমকিতে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি অবস্থিত। কেবলমাত্র কৃষি অনুষদ নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বতর্মানে দেশ ও জাতির সময়োপযোগী চাহিদা পূরণে বিশ্ববিদ্যালয়ে খোলা হয়েছে ব্যবসায় প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা (বিএএম) অনুষদ কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) অনুষদ, এনিমাল সায়েন্স অ্যান্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদ, ফিশারিজ অনুষদ, ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অনুষদ, নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড সায়েন্স অনুষদ, ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড এডমিনিস্ট্রেশন অনুষদ। বতর্মানে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার শিক্ষাথীর্ অধ্যয়ন করছে। ২৫২ জন শিক্ষক, ১৫৯ জন কমর্কতার্ ও প্রায় ৫০০ কমর্চারী রয়েছে। এখানে উচ্চতর ডিগ্রি হিসেবে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি চালু রয়েছে। ৫ জানুয়ারি ২০১৭ আমি এ স¦নামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর এর দায়িত্বভার গ্রহণ করি। যোগদানের পর থেকে এ বিশ্ববিদ্যালয়টিকে একটি আদশর্ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এ বিশ্ববিদ্যালয় একাধিক উন্নয়ন কাযর্ক্রম দ্রæতগতিতে বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ফের গতি সঞ্চারিত হতে শুরু করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা কাযর্ক্রমসহ প্রশাসনিক কাযর্ক্রমেও এসেছে কাজের গতি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক কাযর্ক্রমের ভুয়সী প্রশংসা করেছেন সব শ্রেণি পেশার মানুষ। বিগত দিনের তুলনায় বাজেট ঘাটতি কমিয়ে আনা, বিশ্ববিদ্যালয়ে রিজাভর্ ফান্ডে অথর্ বৃদ্ধি, বতর্মানে শিক্ষক, কমর্কতার্ ও কমর্চারীরা নিয়মিত তাদের বেতন ভাতা পেয়ে আসছেন। তাছাড়া বিগত দিনের রিজেন্ট বোডের্র প্রতি সভায় যেখানে প্রায় ৩ লাখ টাকা খরচ হতো সেখানে এখন মাত্র দের লাখ টাকায় কমিয়ে আনা হয়েছে। ইতিপূবের্ ঘনঘন রিজেন্ট বোডের্র সভা আহŸান করা হলেও বতর্মানে বছরে ২/৩টি রিজেন্ট বোডের্র সভা আহŸান করা হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবির্ক খরচের পরিমাণ কমে এসেছে। ব্যয় সংকোচনের জন্য সব খাতেই অহেতুক বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে। ফলে বাজেট ঘাটতি থেকে ধীরে ধীরে সরে আসতে শুরু করেছে । শিক্ষক কমর্কতাের্দর অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অভ্যন্তরীণ চাকরি প্রাথীের্দর অগ্রাধিকার দিয়ে খÐকালীন/মাস্টার রোল অস্থায়ী চাকরিজীবীদের স্থায়ীকরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর ফলে ধীরে ধীরে গোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবির্ক কাযর্ক্রম নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে আসতে শুরু করেছে। পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার নিরাপত্তার স¦াথের্ সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। আমার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ইতিমধ্যে ‘পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন (২য় পযার্য়)’ শীষর্ক প্রকল্পে ৪১১ কোটি টাকা এবং ‘পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মেরিন সায়েন্স ও গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা’ শীষর্ক প্রকল্পে ৩৭৩ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। উক্ত প্রকল্পের একটি অবিলম্বে জাতীয় একনেক সভায় অনুমোদনের অপেক্ষায় অন্যটি পরিকল্পনা কমিশনে আছে। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন (২য় পযার্য়) শীষর্ক প্রকল্প এবং পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মেরিন সায়েন্স ও গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা শীষর্ক প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়িত হলে এ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে অনান্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রয়েছে সারি সারি নারিকেল গাছসহ হরেক রকমের গাছ গাছালি, ক্যাম্পাসের ভেতরে রয়েছে কয়েকটি প্রশস্ত লেক যা ক্যাম্পাসের সৌন্দযর্ অনেকাংশে বৃদ্ধি করেছে। প্রশাসনিক ভবনের সম্মুখে স্থাপন করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আবক্ষ ভাস্কযর্ ও মুর‌্যাল, ৭ বীরশ্রেষ্ঠের আবক্ষ ভাস্কযর্, ‘‘জয়বাংলা” নামে এক মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি ভাস্কযর্। এ ক্যাম্পাসটি দশর্নীয় স্থান হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে অনেক পযর্টক ক্যাম্পাসের সৌন্দযর্ উপভোগ করতে এখানে ভিড় জমায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে অত্যাধুনিক শিক্ষাদান পদ্ধতি হিসেবে খ্যাত আমেরিকার ক্রেডিট কোসর্ সিস্টেম পদ্ধতি চালু রয়েছে। দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এ বিশ্ববিদ্যালয়েই সবর্ প্রথম ২০০২ সালে স্নাতক পযাের্য় কৃষি শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ইংরেজি ভাষা চালু করা হয়। হাতে কলমে শিক্ষাদানের জন্য এখানে রয়েছে ৩২টি সমৃদ্ধি গবেষণাগার বা ল্যাবরেটরি। রয়েছে অত্যাধুনিক সরঞ্জাম সংবলিত একটি বৃহৎ কেন্দ্রীয় গবেষণাগার। এটির মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে বিশ্ববিদ্যালয়টি গুরুত্বপূণর্ ভূমিকা রাখছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক কমর্কতার্ ও কমর্চারীদের জন্য ডিজিটাল পরিচয়পত্র করা হয়েছে। ক্যাম্পাসের সব হলসহ সবর্ত্র হাইস্পিড ক্ষমতাসম্পন্ন ওয়াইফাই নেট চালু করা হয়েছে। এতে করে শিক্ষাথীের্দর লেখাপড়ার ক্ষেত্রে এক নব অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। এখানে রয়েছে শিক্ষক-কমর্কতার্ ও শিক্ষাথীের্দর একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি অন্যান্য জ্ঞান ও সুকুমারবৃত্তি চচার্র জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ৪ তলা বিশিষ্ট টিএসসি ভবন। বতর্মান সরকারের ভিশন ২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিটি ক্লাসরুমে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে ক্লাস নেয়া হচ্ছে। সম্পূণর্ ক্যাম্পাস ওয়াইফাই-এর আওতায় আনা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা ও গবেষণার মান বৃদ্ধি পেয়েছে। হেকেপের আওতায় ৭টি প্রকল্প শিক্ষার মানোন্নয়নকল্পে সুসম্পন্ন হয়েছে। বতর্মান সরকার শিক্ষাবান্ধব ও উন্নয়নবান্ধব সরকার। তারই ধারাবাহিকতায় পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। পবিপ্রবিকে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। কণ্টকমুক্ত এ বিশ্ববিদাালয়ের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করছি। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দক্ষিণাঞ্চলের সবের্শ্রষ্ঠ বিদ্যাপীঠ। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে, শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণের নিমিত্তে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানের শিক্ষাঙ্গানে পরিণত করার জন্য কাজ করা হচ্ছে। একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষ ও যোগ্য মানবসম্পদ তৈরি করাই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য। গত ৫ জানুয়ারি ২০১৭ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব নেয়ার পর ছাত্র-শিক্ষক, কমর্কতার্-কমর্চারী, সাংবাদিক ও এলাকার জনগণের সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়টিকে একটি আদশর্ বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য আমি আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রিধারী শিক্ষাথীর্রা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি লাভের ক্ষেত্রে কৃতিত্বের স¦াক্ষর রেখে চলেছে। আমি বিশ্ববিদ্যালয়টিকে দেশের অন্যতম উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। পবিপ্রবির কাছে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর অনেক প্রত্যাশা। ছাত্র-ছাত্রীদের চোখে অনেক স¦প্ন। সেই প্রত্যাশা পূরণের এবং সে স¦প্ন বাস্তবায়নের দায়িত্ব এর শিক্ষক কমর্কতার্ ও ছাত্র-ছাত্রীদেরই নিতে হবে। দক্ষতা, কতর্ব্যনিষ্ঠা ও সততায় দিক্ষিত হোক এই ক্যাম্পাসের সব কাযর্ক্রম, ধাবিত হোক উন্নয়নের মহাসড়কে-আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক কমর্কতার্ ও শিক্ষাথীর্রা এটাই কামনা করছে। জয়তু, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রফেসর ড. মো. হারুনর রশীদ: উপাচাযর্, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়