বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত ৫ কোটি

সর্বাত্মক উদ্যোগ জরুরি

প্রকাশ | ১১ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে বিশ্ব কতটা ভয়ানক এবং বিপর্যস্ত পরিস্থিতির মুখোমুখি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি শক্তিধর দেশগুলোকেও বিপর্যস্ত করে তুলেছে প্রাণঘাতী এ ভাইরাস। শীতের আগে নতুন করে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়াল একটি মাস পার করল বিশ্ব, এর মধ্যদিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৫ কোটি ছাড়িয়ে গেছে বলে জানা যাচ্ছে। তথ্য মতে, আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা 'ওয়ার্ল্ডোমিটার'-এর হিসাব অনুযায়ী, সোমবার বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৫ কোটি ৮ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। প্রসঙ্গত বলা দরকার, গত ডিসেম্বর চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ার পর সদ্য পেরিয়ে আসা অক্টোবরেই সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে, আর এ সংখ্যা মোট আক্রান্তের সংখ্যার এক-চতুর্থাংশ। গত অক্টোবরেই যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্তের সংখ্যা হুহু করে বাড়তে থাকে। দৈনিক এক লাখ রোগী শনাক্তের ঘটনা এ মাসেই দেশটিতে ঘটেছিল, যা বিশ্বেও প্রথম। এ ছাড়া বলা দরকার, যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি এ অক্টোবরেই ইউরোপেও রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, যা সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা বেড়ে ৫ কোটি হওয়ায় ভূমিকা রেখেছে। মহামারির এক বছর না গড়াতেই বিশ্বে মৃতের সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন সোয়া ৩ কোটি মানুষ। আমরা বলতে চাই, যখন করোনার সংক্রমণ বেড়েই চলেছে, তখন এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করাসহ বিশ্বের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ঠিক রাখতেও উদ্যোগী হতে হবে। কেননা এর আগে এমন বিষয়ও আলোচনায় এসেছিল, মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোও হিমশিম খেয়েছে। ফলে কোথাও যেন দুর্বল স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ও নাজুক প্রস্তুতি না থাকে সেদিকটি আমলে নিয়ে সর্বাত্মক উদ্যোগ জারি রাখতে হবে। এটা মনে রাখা জরুরি, সময় গড়াতে গড়াতে মানুষের মধ্য সচেতনতা বা স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা কমে এসেছে। এ ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লকডাউন করা হলেও জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে শিথিল করা হয়েছে। ফলে এ সময় স্বাস্থ্যবিধি মানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বলার অপেক্ষা রাখে না, করোনাভাইরাসের কারণে জীবনযাপনের স্বাভাবিকতা যেমন বিঘ্নিত হয়েছে, তেমনি এর প্রভাবে বিশ্বের প্রত্যেকটি খাতই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এর আগে, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বিশ্ব ব্যাপক দুর্ভিক্ষের ঝুঁকির মুখে আছে বলেও সতর্ক করেছিল জাতিসংঘ। একদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে পুরো বিশ্বই বিপর্যস্ত, অন্যদিকে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকির মতো সতর্কতাও এসেছে। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিকভাবে বিশ্ব এমন এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে যাচ্ছে যা মোকাবিলায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই। আর এ ক্ষেত্রে যত দ্রম্নত সম্ভব বিশ্ব নেতৃত্ব ও সংশ্লিষ্টদের করোনা রোধে যেমন ভূমিকা রাখতে হবে, তেমনি অভাবী মানুষ বা অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়ছে এ বিষয়টিও আমলে নিতে হবে। উলেস্নখ্য, এ বছরের শুরুতে ইউরোপকে বিপর্যস্ত করে করোনাভাইরাস হানা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে; গরমের সময় সংক্রমণ কিছুটা কমে এলেও শীত ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে আবার বাড়ছে। ফ্রান্সে গত সপ্তাহে গড়ে প্রতিদিন ৫৪ হাজারের মতো মানুষ আক্রান্ত হয়েছে, যা ভারতের চেয়ে বেশি। দুর্গাপূজার পর ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন ৪৬ হাজার করে বাড়ছে। এ ছাড়া দেশের সংশ্লিষ্টদের আমলে নেওয়া দরকার, শুধু অন্যান্য দেশেই নয়, বাংলাদেশেও বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। আক্রান্তের সংখ্যা ৪ লাখ ছাড়িয়েছে, মৃতু্য হয়েছে ৬ হাজারের বেশি মানুষের। ফলে করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। একদিকে দেশের জনসংখ্যা বেশি, অন্যদিকে প্রস্তুতি কতটা এবং মানুষের সচেতনতার চিত্র আমলে নিয়ে প্রয়োজনে কঠোর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৬ কোটি ছাড়িয়ে গেছে, ফলে বিষয়টিকে সহজ করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। বিশ্বের করোনা-পরিস্থিতি বিশ্লেষণ সাপেক্ষে বিশ্বনেতৃত্ব এবং সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ জারি রাখতে হবে। পারস্পরিক বিচ্ছিন্নতা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, অকারণে ঘোরাফেরা না করাসহ প্রয়োজনীয় সচেতনতা এ সময়টা সবচেয়ে বেশি জরুরি। সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ ও তার বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টরা কার্যকর উদ্যোগ অব্যাহত রাখুক এমনটি কাম্য।