রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

বাড়ছে বায়ু দূষণ

প্রকাশ | ১৪ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বায়ু দূষণের শিকার দেশগুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে বাংলাদেশ। ফলে অসংখ্য মানুষ মারা যাচ্ছেন এবং নানান রোগে ভুগছেন। আইকিউ এয়ারের বায়ু মান সূচকে (একিউআই) বুধবার সকাল ৯টার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের মধ্যে বায়ু দূষণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি ছিল সাভার ও ময়মনসিংহের ত্রিশালে। এ দুই জায়গায় দূষণের পরিমাণ ছিল ১৭৩ পিএম২.৫। এই মাত্রার বায়ু দূষণকে (বায়ু দূষণের মাত্রা ১৫১ থেকে ২০০ পিএম২.৫) 'আনহেলদি' বা অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বায়ুর এই দূষণে যে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। বিশেষ করে যারা বায়ু দূষণজনিত রোগে ভুগছেন, তাদের শারীরিক অবস্থা গুরুতর হয়ে যেতে পারে। বায়ুর এই দূষণের কারণে শিশু, বৃদ্ধ বিশেষ করে যারা শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগে ভুগছেন তাদের বাড়ির বাইরে বের হওয়া উচিত নয়। দেশে করোনা সংক্রমণের পর কারখানা, দোকানপাট, যানবাহন বন্ধ থাকায় এবং মানুষ ঘর থেকে বের হওয়া বন্ধ করলে ঢাকাসহ সারাদেশের বায়ু দূষণ কমতে থাকে। একপর্যায়ে দেশের বায়ু স্বাস্থ্যকর পর্যায়ে আসে। তবে সম্প্রতি দেশ আগের অবস্থায় ফিরে আসাতে বাড়তে শুরু করেছে বায়ু দূষণ। দূষণ বাড়ায় বাংলাদেশ চলে এসেছে সর্বোচ্চ দূষণের ২২তম দেশে। গড় দূষণ সর্বোচ্চ থাকায় দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশ দূষিত দেশের শীর্ষে রয়েছে। করোনার সময়ে বায়ু দূষণের পরিমাণ কিছুটা কমলেও গড় দূষণ বেশি থাকায় সবচেয়ে দূষিত দেশের প্রথমে থাকা বাংলাদেশের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। বিশ্বে বাংলাদেশ এখনও গড়ে সবচেয়ে বেশি দূষিত দেশ। বায়ু দূষণ এখন রীতিমতো নাগরিক বিড়ম্বনা ও আপদ হিসেবে দেখা দিয়েছে। বায়ু দূষণ মানব জীবনের জন্য অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ। বায়ু দূষণ এর ফলে একদিকে পরিবেশ যেমন বিনষ্ট হয় তেমনি প্রতিটি মানুষের স্বাস্থ্যঝুকিও বেড়ে যায়। বায়ু দূষণ থেকে রক্ষার জন্য অনেকেই মাস্ক ব্যবহার করে থাকেন। যদিও করোনাকালে মানুষ মাস্ক ব্যবহার করছে। কিন্তু এটাই একমাত্র সমাধান নয়। মূলত বায়ু দূষণ রোধ করতে হবে। বায়ু দূষণ এর ফলে মানব দেহে জন্ম নেয় অনিরাময় যোগ্য নানা রোগ। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, বায়ুদুষণের ফলে মানুষের শ্বাসযন্ত্র, হৃদরোগ, ক্যানসার ও ডায়াবেটিস বৃদ্ধির ঝুঁকি তৈরি হয়। এ ছাড়া বাযুদূষণ মাতৃগর্ভে ভ্রূণের ক্ষতিসাধনসহ শিশুর বুদ্ধিমত্তা বিকাশ ব্যাহত করে। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, বিশ্বে সবচেয়ে দূষিত বায়ুর দেশ কেন বাংলাদেশ হবে। বায়ু দূষণের দিক দিয়ে বাংলাদেশের ধারে কাছেও নেই কোনো দেশ। এটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। মনে রাখতে হবে, যানবাহনের কালো ধোয়া, মিলকারখানা ইটভাটার কালো ধোয়া বায়ু দূষণ এর প্রধান নিয়ামক। কীভাবে এসব বন্ধ করা যায় এবং মানুষ মুক্ত বায়ু সেবন করতে পারে সেদিকে বিশেষ নজন দিতে হবে। অনেক সময় ধুলো নোংরা আবর্জনাও বায়ু দূষণ এর জন্য দায়ী। পরিবেশ সুরক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। রাষ্ট্র যদি এদিকে বিশেষ মনোযোগী না হয় তা হলে জনগণের স্বাস্থ্যঝুকি বেড়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের, সরকারও এর দায় এড়াতে পারে না। যারা বায়ু দূষণের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এই অবস্থা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা জনস্বাস্থ্যঝুকি আরো বেড়ে যাবে। একুশ শতকে বায়ু দূষণ জনস্বাস্থ্যের জন্য বিরাট এক হুমকি হয়ে দাড়িয়েছে। এখনই যদি যথাযথ পদক্ষেপ না নেয়া যায় তা হলে ভবিষ্যতের জন্য বড় ধরনের বিপদ হিসেবে দেখা দেবে। সুতরাং সময় থাকতেই সাবধান হওয়া সমীচীন।