বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা

পরিচ্ছন্নতা অভিযান জরুরি

প্রকাশ | ১৫ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন আরও ১৪ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে বর্তমানে ৮৯ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের মধ্যে ঢাকাতেই ভর্তি আছেন ৮৪ জন। সরকারি প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরে এ পর্যন্ত ৮২৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৭৩১ জন ইতিমধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। গত বছর দেশে ডেঙ্গুর ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় এবং সরকারি পরিসংখ্যানে মশাবাহিত এ রোগে তখন ১৭৯ জনের মৃতু্য হয়। তখন আক্রান্ত হয়েছিল ১ লাখ ২২ হাজার মানুষ। করোনাকালে রাজধানীতে ডেঙ্গু আতঙ্ক শুরু হওয়ায় মানুষের মধ্যে বাড়তি আতঙ্ক শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযানে (চিরুনি অভিযান) নেমেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নগরবাসীকে ডেঙ্গু ও মশাবাহিত অন্যান্য রোগ থেকে সুরক্ষা দিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযান কিছুদিন আগে চলেছে। অভিযানে ৪০ হাজার ৫৯৪ বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ৩২৭টিতে এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে। অভিযানে মোট ৭ লাখ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। উলেস্নখ্য, চলতি বছরে চিরুনি অভিযানের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৪ লাখ ৫ হাজার ৫৫০টি বাড়ি, স্থাপনা ইত্যাদি পরিদর্শন করে ২ হাজার ৬৮৬টিতে এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়। এডিসের লার্ভা পাওয়ায় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৫৮ লাখ ১৬ হাজার ৮১০ টাকা জরিমানা করা হয়। আমরা মনে করি এ অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। উলেস্নখ্য, গত মৌসুমে ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজারের বেশি রোগী আক্রান্ত হয়েছিল। চিকুনগুনিয়ায়ও আক্রান্ত হয়েছিল রাজধানীবাসী। এবার সে ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে না বলেই আমরা মনে করি। আমরা এও মনে করি, দুই সিটি করপোরেশন ও সরকার যদি এডিস মশা নিধনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে তা হলে এবার মানুষ আক্রান্ত কম হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেবল মৌসুমভিত্তিক নয়, এডিস মশা নিধনে বছরব্যাপী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। কারণ জনগণের জীবন রক্ষা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের প্রধান দায়িত্ব। এটা সত্য, করোনার এ মহামারিকালে ডেঙ্গুর থাবা বিস্তৃত হলে মানুষের মধ্যে বাড়তি উদ্বেগ সৃষ্টি হবে। যা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। আমরা আশা করব, ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব রোধে মশা নিধনের বাড়তি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গড়ে তোলা হবে নাগরিক সচেতনতা। এটা সবাই জানে, ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশা। ছাদে বা ফুলের টবে পানি জমে থাকলে তা এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এডিস মশা দিনের বেলায় কামড়ায়। ফলে দিনের বেলায় যাদের ঘুমানোর অভ্যাস তাদের জন্য এডিস মশার শিকার হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। গত বছর ডেঙ্গুর আগ্রাসন বাড়ার কারণে জনমনে ব্যাপকভাবে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এবার দেশ করোনা সামাল দিতেই হিমশিম খাচ্ছে। ফলে সঠিকভাবে মশক নিধনের বিষয়টি যাতে চাপা পড়ে না যায় সে দিকে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। দুই সিটি করপোরেশনের উচিত পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও ওষুধ ছিটানোর কাজটি ব্যাপকভাবে শুরু করা। পরিকল্পিত ও কার্যকর উদ্যোগই কেবল পারে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে। তবে এ ক্ষেত্রে নাগরিক সচেতনতা ও সতর্কতার বিকল্প নেই।