সিদ্ধান্তের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন হোক

বেসরকারি হাসপাতালে সেবার মূল্য

প্রকাশ | ২০ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশ জনসংখ্যাবহুল দেশ। এ ক্ষেত্রে বলা দরকার, দেশের জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। আর করোনা পরিস্থিতিতে এমন বিষয়ও আলোচনায় এসেছিল, করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় অন্যান্য রোগে আক্রান্তরা চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ ছাড়া চিকিৎসাসেবার মানসংক্রান্ত নানা ধরনের অভিযোগ বিভিন্ন সময়েই সামনে আসে, যা কোনোভাবেই এড়ানোর সুযোগ নেই। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, সরকারি হাসপাতালের মতো এবার বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সেবার মূল্য নির্ধারণ করা হবে। একই সঙ্গে চিকিৎসাসেবার মান অনুসারে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মানদন্ড নির্ধারণ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আমরা মনে করি, এ বিষয়গুলো অত্যন্ত জরুরি। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, সিদ্ধান্তের যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। উলেস্নখ্য, বুধবার সচিবালয়ে সারা দেশে বেসরকারি হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ক্লিনিকগুলোর সেবাবিষয়ক এক পর্যালোচনা সভা শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ সব তথ্য জানিয়েছেন। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর ক্যাটাগরিও নির্ধারণ করে তা দেখভালের জন্য একটি কমিটি করা হবে বলেও জানা যায়। আমরা বলতে চাই, বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে নানা ধরনের ভোগান্তি, দুর্ভোগ ও আর্থিক বিষয়গুলো বিভিন্ন সময়েই আলোচনায় এসেছে। ফলে চিকিৎসাসেবার মান অনুসারে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মানদন্ড নির্ধারণ করে দেওয়ার বিষয়টির যথাযথ বাস্তবায়ন হলে তা হবে অত্যন্ত ইতিবাচক। এমনটিও জানা গেছে, আগামীতে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিকের যে সব চার্জ হবে এবং সেবা দেবেন, সেই সেবার মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। সেটা আলোচনার মাধ্যমে করা হবে। একটি ক্লিনিক, হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কী ধরনের যন্ত্রপাতি, জায়গা ও জনবল লাগবে- সেই বিষয়গুলোও নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যসেবার মান আরও বাড়ানোর জন্যও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যে সব বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স নবায়ন করা নেই তাদের তা নবায়ন করতে বিশেষভাবে বলা হয়েছে। এরপরও যদি লাইসেন্স নবায়ন না থাকে, সরকারের নিয়ম-নীতির ভায়োলেশন করে থাকে তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে এমন বিষয়ও খবরে উঠে এসেছে। আমরা মনে করি, চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে এমন প্রতিষ্ঠানে যদি লাইসেন্সে অনিয়ম হয় তবে তা ভয়ানক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে এমন খবরও প্রকাশিত হয়েছে, অনেকে চিকিৎসা বিষয়ে পড়ালেখা না করেও চিকিৎসক সেজে চিকিৎসা করছেন! নানা ধরনের প্রতারণার বিষয়ও উঠে এসেছে নানা সময়ে। আমরা মনে করি, সর্বাত্মক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে উদ্যোগী হতে হবে। এ ছাড়া সার্বিকভাবে দেশের মানুষের সামর্থ্য বিবেচনায় নিয়ে চিকিৎসা ব্যয়ের বিষয়টিও আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। কীভাবে সেবার মান বাড়ানো যায় এবং মানুষ যেন কোনোভাবেই চিকিৎসা নিতে গিয়ে প্রতারিত না হয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। প্রসঙ্গত বলা দরকার, এর আগে এমনটিও জানা গিয়েছিল, অসুস্থ বাবাকে নিয়ে হাসপাতালের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন এক ছেলে। কিন্তু করোনা ভেবে কোনো হাসপাতালেই ভর্তি করানো যায়নি তাকে। শেষ পর্যন্ত চিকিৎসা না পেয়ে মৃতু্যর কোলে ঢলে পড়েন ওই বাবা। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে হাসপাতাল থেকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন রোগীরা এমনটিও আলোচনায় আসে। ফলে এ বিষয়গুলোকেও আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সামগ্রিকভাবে দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে যে কোনো ধরনের সংকট থাকলে তা নিরসনের উদ্যোগ নিতে হবে। দেশের মানুষ যদি চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হয় কিংবা চিকিৎসার মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে তবে তার চেয়ে উদ্বেগের আর কী হতে পারে! মনে রাখা দরকার, দেশের চিকিৎসাব্যবস্থায় নানা ধরনের সংকটের বিষয়ও আলোচিত। ফলে যে কোনো সংকট সৃষ্টি হলে তা দূর করতেও উদ্যোগ নিতে হবে। রোগীরা চিকিৎসার নামে যেন কোনোভাবেই কোনো ধরনের প্রতারণার শিকার নয় সেটিও নিশ্চিত করতে হবে। এবারে সরকারি হাসপাতালের মতো বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সেবার মূল্য নির্ধারণ করা এবং চিকিৎসাসেবার মান অনুসারে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মানদন্ড নির্ধারণ করে দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার, তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত হোক এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।