খেলাপি ঋণ বাড়ছে

এ সংস্কৃতি থেকে বের হতে হবে

প্রকাশ | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
জাতীয় সংসদে শীষর্ ১০০ ঋণখেলাপির তালিকা দিয়েছেন অথর্মন্ত্রী। বুধবার প্রশ্নোত্তর পবের্ এই তালিকা প্রকাশ করা হয়। তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন পযর্ন্ত দেশে ঋণখেলাপির সংখ্যা ২ লাখ ৩০ হাজার ৬৫৮। তাদের কাছে অনাদায়ী অথের্র পরিমাণ ১ লাখ ৩১ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১১ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা। ব্যবসা পরিচালনার নামে দেশের তফসিলি ব্যাংক থেকে এ বিশাল অঙ্কের টাকা নিয়ে হজম করে ফেলেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। উদ্বেগের যে, খেলাপি ঋণের পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, অথর্নীতি ও উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তি ব্যাংকিং খাতে চরম অনিয়ম, দুনীির্ত, অব্যবস্থাপনা এবং নামসবর্স্ব প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়ার প্রবণতার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। যেহেতু ব্যাংকিং খাতের টাকা জনগণের কষ্টাজির্ত অথের্র আমানত, তাই এ খাতের দুবৃর্ত্তদের কোনো ধরনের ছাড় দেয়ার অবকাশ থাকা উচিত নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী দেশের শীষর্ ১০০ ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানের যে নামের তালিকা প্রকাশ করেছেন অথর্মন্ত্রী, তার প্রথমেই আছে চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়িক গ্রæপ মোহাম্মদ ইলিয়াস ব্রাদাসর্ প্রাইভেট লিমিটেডের নাম। তালিকায় প্রথম ১০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আরও রয়েছেÑ কোয়ান্টাম পাওয়ার সিস্টেম, রেমিক্স ফুটওয়ার, ম্যাক্স স্পিনিং মিলস, রুবিয়া ভেজিটেবল ইন্ডাস্ট্রিজ, রাইজিং স্টিল, ঢাকা ট্রেডিং হাউস, বেনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, আনোয়ারা স্পিনিং এবং ক্রিসেন্ট লেদার প্রডাক্ট। এ ছাড়া খেলাপি ঋণের সঙ্গে জড়িত ব্যাংকের সংখ্যা ৮৮। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকে ১৮ হাজার ৬৬২ কোটি, জনতা ব্যাংকে ১৪ হাজার ৮৪০ কোটি, অগ্রণী ব্যাংকে ৯ হাজার ২৮৪ কোটি, রূপালী ব্যাংকে ৪ হাজার ৯০১ কোটি, বেসিক ব্যাংকে ৮ হাজার ৫৭৬ কোটি, কৃষি ব্যাংকে ২ হাজার ১৭৮ কোটি, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে ২ হাজার ৩৩২ কোটি, পূবালী ব্যাংকে ২ হাজার ১১৬ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংকে ৫ হাজার ৭৬ কোটি, ইসলামী ব্যাংকে ৩ হাজার ৫২০ কোটি এবং প্রাইম ব্যাংকে আছে ৩ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ। অন্যদিকে ২০১৭ সালের চেয়ে চলতি বছর খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২০ হাজার ৩১৯ কোটি টাকা। দেশের অথৈর্নতিক উন্নয়নের নানা সূচকে অগ্রগতি এবং সমৃদ্ধির উজ্জ্বল চিত্র আমাদের উল্লসিত করলেও, ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধির অঙ্ক দেখলে সব উচ্ছ¡াস থেমে যায়। বিষয়টি সরকারের শীষর্ পযার্য় থেকে শুরু করে সবাই ওয়াকিবহাল। বিষয়টি সবাইকে বিব্রত করে। সরকারি বিভিন্ন মহলে এবং ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টদের মধ্যে এ নিয়ে অস্বস্তিও রয়েছে। এরপরও কেন খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে, তা নানান প্রশ্নের জন্ম দেয় বৈকি। বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন এবং তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে অথর্নীতিবিদরা মনে করেন, ব্যাংকগুলো থেকে অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ গ্রহণের প্রবণতা বাড়ায় ঋণখেলাপির সংখ্যাও বাড়ছে। এর আগে বেসিক ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ও জনতা ব্যাংক থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নেয়া হয়েছে বলের বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্তে প্রমাণ পেয়েছিল। অস্বীকার করার উপায় নেই, রাজনৈতিক ছত্রছায়া, উচ্চ আদালতে রিট, সবোর্পরি বিচার না হওয়ার কারণেই শেয়ারবাজার, হলমাকর্, যুবক ও ডেসটিনির মতো বড় বড় অথর্ আত্মসাৎ ও ঋণখেলাপির ঘটনা বাড়ছে। এমনকি নিয়ন্ত্রক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের দুবর্লতা, রাঘব-বোয়ালদের বঁাচাতে উচ্চপযাের্য়র হস্তক্ষেপ এবং তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ না করার কারণে আথির্ক খাতের লুটেরারা উৎসাহিত হচ্ছে। ব্যাংক কমর্কতাের্দর যোগসাজশ ছাড়া অথর্ আত্মসাৎ সম্ভব নয়। অনেক ক্ষেত্রে ভুয়া কাগজপত্র ও অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানকে মোটা অঙ্কের ঋণ দেয়াই এর প্রমাণ। হলমাকর্ কেলেঙ্কারির মাধ্যমেও বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এ পরিস্থিতি দেশের অথৈর্নতিক খাততে বিপযর্স্তু করার পাশাপাশি সাবির্কভাবে উন্নয়নের গতিরোধ করছে বলেই প্রতীয়মান হয়। আমরা বলতে চাই, দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে ব্যাংকিং খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনতে হবে। ঋণখেলাপিসহ প্রতিটি অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যাংক কমর্কতার্-পরিচালকদের সাজা নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রয়োজনে তাদের সম্পদ জব্দ করে জনগণের শ্রম-ঘামের আমানত উদ্ধার করতে হবে। রাজনৈতিক প্রভাবের কাছে যেন রিকভারি এজেন্টরা জিম্মি হয়ে না পড়ে সেদিকেও গভীর মনোযোগ থাকা জরুরি।