মানসিক চাপের শহর ঢাকা

আশু উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি

প্রকাশ | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
মানসিক চাপের শহর হিসেবে যদি ঢাকার নাম সামনে আসে, তবে সন্দেহাতীতভাবেই তা উদ্বেগজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে, যা আমলে নেয়ার কোনো বিকল্প নেই। সম্প্রতি, কেন ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে ‘মানসিক চাপের’ শহর? এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি। যেখানে ঢাকাবাসীর মানসিক চাপ কমানোর জন্য কতৃর্পক্ষ বা বেসরকারিভাবে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই এমন বিষয়ই সামনে এসেছে। আমরা মনে করি, মানসিক স্বাস্থ্যর বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের মনোযোগী হওয়া অপরিহাযর্। মনে রাখা দরকার, মানসিক চাপ কমাতে উদ্যোগ না থাকা স্বাভাবিকভাবেই পরিতাপের। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান যিপজেটের এক গবেষণায় দেখা গেছে, এশিয়ার শহরগুলোর মধ্যে ঢাকায় বাস করা সবচেয়ে মানসিক চাপের ব্যাপার। আর সেই গবেষণায় বায়ুদূষণ, ট্রাফিক জ্যাম, লিঙ্গবৈষম্য, বেকারত্ব, মানসিক স্বাস্থ্যের মতো বিষয়ের মানদÐে বিশ্বের ১৫০টি শহরের তালিকা করা হয়েছে। মানসিক চাপ কীভাবে প্রভাব ফেলে ঢাকাবাসীর জীবনে, আর কীভাবে তা মোকাবেলা করা সম্ভব? এমন প্রশ্নের মুখে ঢাকায় দীঘির্দন ধরে বাস করা কয়েকজন বলেছেন, ঢাকার প্রতিটা মোড়ে, প্রতিটা সিগন্যালে অনেকক্ষণ বসে থাকার কথা। এ ছাড়া ধেঁায়া, ধুলা, কোথাও সহজে যাওয়া যায় না, জ্যাম, রাস্তায় ডাস্টবিন উপচে পড়া ময়লা, খাবারের ক্ষেত্রে বিশুদ্ধতার কোনো গ্যারান্টি নাই, হঁাটার জায়গা নাইÑ যার ফলে ওজন বেড়ে যাওয়া, রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া এবং ডায়াবেটিসের মতো বিষয়গুলো সামনে এসেছে যা মানসিক চাপ বাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া অনেক এলাকায় পানির সমস্যার বিষয়টিও উঠে এসেছে। আমরা বলতে চাই, রাজধানী শহর ঢাকার এই চিত্র কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, যানজট, পরিবহন সংকট, হঁাটা চলার জন্য মাঠ বা পাকের্র স্বল্পতার বিষয়গুলো এর আগেও বিভিন্ন সময়েই সামনে এসেছে। এ ছাড়া বৃষ্টির পানিকে কেন্দ্র করে জলাবদ্ধতা ও অসহনীয় যানজট নাগরিক জীবনকে কীভাবে বিপযর্স্ত করে সেই বিষয়গুলোও অজানা নয়। ফলে সামগ্রিক এই পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা অপরিহাযর্ বলেই আমরা মনে করি। যিপজেটের গবেষণায় এমনটিও উঠে এসেছে যে, মানসিক চাপ সৃষ্টির পেছনে শব্দ ও বায়ুদূষণ যেমন ভ‚মিকা রেখেছে, তেমনি রয়েছে অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপ, প্রাকৃতিক পরিবেশের হার কমে যাওয়া, গণপরিবহন ও ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তার অভাব ইত্যাদি বিষয়সমূহ। ফলে এসব বিষয়গুলো আমলে নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব বিষয় একজন মানুষের ব্যক্তিগত এবং সামাজিক সম্পকর্গুলোর ওপর প্রভাব ফেলছে। যা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। এ ছাড়া ঢাকা শহরে যে ভীষণ মানসিক চাপের মধ্যে মানুষজন বসবাস করে, তা মোকাবেলার জন্য কতৃর্পক্ষের তেমন কোনো উদ্যোগ এখনো দৃশ্যমান নয়Ñ এমনটি যখন জানা যাচ্ছে, তখন তা দুঃখজনক বলেই আমরা মনে করি। যদিও খেলার মাঠ ও পাকর্ পুনরুদ্ধারে কাজ শুরু করাসহ কিছু উদ্যোগের বিষয়ে জানা গেছে, তবু সাবির্ক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। সবোর্পরি আমরা বলতে চাই, সংশ্লিষ্টদের ভেবে দেখা দরকার, ঢাকা ঢাকাবাসীর মানসিক চাপের এই চিত্র কতটা উৎকণ্ঠাজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি হিসাবে এই মুহূতের্ যে শহরের জনসংখ্যা প্রায় দুই কোটি, অথার্ৎ প্রতি বগির্কলোমিটারে প্রায় দুই লাখ মানুষ বাস করে, সে শহরকে মানুষের জন্য একটু স্বস্তিকর করতে হলে কতৃর্পক্ষের আশু উদ্যোগের কোনো বিকল্প নেই। সঙ্গত কারণেই যত দ্রæত সম্ভব সাবির্ক পরিস্থিতি পযের্বক্ষণ সাপেক্ষে কতৃর্পক্ষ এ ব্যাপারে উদ্যোগী হোক এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।