পাঠক মত

অনলাইন শিক্ষা ও বাংলাদেশ

প্রকাশ | ২৮ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণের প্রক্রিয়াই হলো অনলাইন শিক্ষা। অনলাইন শিক্ষা বা ই-লার্নিং প্রায় পুরোপুরিই ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল। সে কারণে একে দূরবর্তী শিক্ষণ বা ডিসট্যান্স লার্নিংও বলা হয়ে থাকে। ডিজিটাল বাংলাদেশে, ডিজিটাল সুযোগ ব্যবহার করে এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলেও অনলাইন শিক্ষা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটেও অনলাইন শিক্ষা এখন বেশ প্রয়োজনীয়। ইউরোপ-আমেরিকা ছাড়াও অনেক উন্নত দেশেই এখন এটা জনপ্রিয় মাধ্যম। এর সুবিধা হচ্ছে- একটি স্মার্টফোন বা ল্যাপটপ, কম্পিউটারের মাধ্যমে যে কোনো স্থান থেকে শিক্ষাগ্রহণ করা যায়। অনলাইন শিক্ষার ৮০ শতাংশের বেশি পাঠ কার্যক্রম ইন্টারনেটনির্ভর। তাই শিক্ষার্থীদের কোথাও গিয়ে পড়াশোনা করতে হয় না। ঘরে বসেই তা সম্ভব। এ ছাড়া আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ও মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে এখন অনলাইন শিক্ষাকে আরও 'কমিউনিকেটিভ' করা সম্ভব। বিস্তারিত বললে, একজন শিক্ষার্থীর যতটা প্রয়োজন, এ অবস্থায় ঠিক ততটাই তাকে শিক্ষাদান করা সম্ভব। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে অনলাইন শিক্ষার কথা যদি বলতে যাই তবে তার চিত্রটা দাঁড়াবে একটু অন্যরকম। প্রকৃতপক্ষে, উচ্চবিত্ত বা মধ্যবিত্ত সমাজের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এ প্রযুক্তিগত বদলটি বিশেষ অসুবিধার নয়। কারণ তারা এমনিতেও অনেকটা সময় ভার্চুয়াল মাধ্যমে কাটায়। তারা অনেক সহজে জুম, গুগল মিট, মাইক্রোসফট টিমসজাতীয় অ্যাপগুলোর কার্যপদ্ধতি বুঝতে পারে, এমনকি প্রবীণতর শিক্ষকদের চেয়েও তারা এ সব বিষয়ে বেশি সড়োগড়ো। কিন্তু সমস্যাটা ঘটছে তখনই; যখন সব স্তরের শিক্ষার্থীদের কথা উঠে আসে। আসলে যাদের পরিবারে ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, অ্যান্ড্রয়েড একাধিক পরিমাণে আছে ও ইন্টারনেট সংযোগও আছে, তাদের পক্ষেই পারা সম্ভব?মাঝেমধ্যে অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারেও এটা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। ধরা যাক, একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে বাবা-মা চাকরি করেন ও ছেলেমেয়ে দুটি স্কুলে যায়। তারা সবাই এখন বাসায়। একদিকে ছেলেমেয়ের স্কুলের পড়া আছে, অন্যদিকে আছে বাবা-মায়ের 'ওয়ার্ক ফ্রম হোম'। তাই সবার কাজকর্ম সুষ্ঠুভাবে চলতে গেলে লাগবে চারটি নানা রকমের ডিভাইস ও চারজনের জন্য নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট। কয়টা পরিবার তা জোগান দিতে সক্ষম? অন্যদিকে যদি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কথা ধরা হয় তবে অনলাইন শিক্ষার বাস্তবিক করুন দশা আরও স্পষ্টভাবে ফুটে উঠবে। সাধারণ মোবাইলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে নেটওয়ার্ক সিগনাল পেতে যেখানে ঘরের বাইরে বের হতে হয় সেখানে ৩জি ৪জি সেবার কথা ভাবা তো বিলাসিতা। তা ছাড়া গ্রামে বেশির ভাগ পরিবারই নিম্নমধ্যবিত্ত যাদের পক্ষে ডিজিটাল ডিভাইসের চাহিদা সম্পূর্ণভাবে পূরণ করা সম্ভব নয়। এ কারণেই অনলাইন শিক্ষার আলোচনা পর্যাপ্ত পরিমাণ ডিজিটাল ডিভাইস ও ইন্টারনেট সুবিধা ছাড়া অসম্পূর্ণ। বাংলাদেশে অনলাইন শিক্ষার বড় অন্তরায় হলো স্বচ্ছ ধারণার অভাব। তা ছাড়া আরেকটি কারণ হচ্ছে- সরাসরি শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে এ শিক্ষাব্যবস্থার সনদের মানের সমতা থাকলেও চাকরিসহ অনেক ক্ষেত্রেই এর যথাযথ মূল্যায়ন না করা। দেশে অনলাইন বা ই-লার্নিং কার্যক্রম উন্নত করতে হলে বাংলাদেশ সরকারকে এ বিষয়ে আরও অধিক নজর দিতে হবে। ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের বিনা মূল্যে ল্যাপটপ, কম্পিউটার বা স্মার্টফোন দিয়ে অনলাইন ক্লাসের জন্য সবার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। সঙ্গে শহর, শহরতলী ও প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ বাংলাদেশের সব জায়গায় নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে তবেই সবুজ-শ্যামলে ভরপুর দেশে অনলাইন শিক্ষা শতভাগ কাজে আসবে। তবে বাংলায় একটি প্রবাদ রয়েছে,'নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো' প্রবাদটির সঙ্গে তাল মেলাতে গেলে এটা বলা যায়, অনলাইন শিক্ষা বাংলাদেশের পুরোপুরি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে না পারলেও কিছুটা হলেও আধুনিকতা যোগ করেছে। দেলোয়ার হোসেন রনি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়