তারুণ্য ও বেকারত্ব

প্রকাশ | ০১ ডিসেম্বর ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশ অপার সম্ভাবনার দেশ। এ দেশে জন্ম নিয়েছেন অনেক জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তি। কবি, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, সাহিত্যিক, শিল্পী কি নেই এই সোনার দেশে। এখানে কৃষক জমিতে ফসল ফলায় আর বাউল আপন মনে গায়। এখানকার মানুষ পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষের মধ্যে অন্যতম। এখনো যৌথতার মধ্য দিয়ে পরিবার ও সমাজ এগিয়ে যায়। সেই দেশের তারুণ্য আজ নানাভাবে সংকটে নিমজ্জিত। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জায়গায় তরুণরা যথাযোগ্য মর্যাদা পাচ্ছে না। তারা পাচ্ছে না তাদের কাজের ও মেধার যথার্থ সম্মান। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশই তরুণ। এ দেশের কর্মসংস্থানেও তারুণ্যের ভূমিকা রয়েছে অসামান্য। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মতে, তরুণ জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ভারতে ৩৫ কোটি ৬০ লাখ, চীনে ২৬ কোটি ৯০ লাখ, ইন্দোনেশিয়ায় ৬ কোটি ৭০ লাখ, যুক্তরাষ্ট্রে ৬ কোটি ৫০ লাখ, পাকিস্তানে ৫ কোটি ৯০ লাখ এবং বাংলাদেশে রয়েছে ৪ কোটি ৭৬ লাখ। এই তরুণরাই বাংলাদেশের সব ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখে চলেছে। ইতিহাস সৃষ্টি থেকে প্রতিটি স্তরে সেই তরুণ যুবকরাই জোগান দিয়েছিল। আজও বাংলাদেশের সব অভূতপূর্ব সৃষ্টিগুলোর জন্মই দেয় তরুণরা। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে দেশ গঠনেও তরুণদের ছিল ইতিবাচক ভূমিকা। কিন্তু বর্তমান তরুণ সমাজের বড় অংশই বেকার, অনিশ্চিত জীবনের পথে। যার করণে অনেক তরুণ হতাশাগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যার পথেও হাঁটে। \হসেই তরুণদের বড় একটি অংশ এ দেশের প্রতি মমত্ববোধ হারিয়ে ফেলেছে আজ। যে কারণে আগের মতো স্বেচ্ছাশ্রম আর দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ তারুণ্য খুবই কম দেখা যায়। তারুণ্যের এই পশ্চাৎপদতার জন্য অনেকটা আমাদের দেশের অপরাজনীতিই দায়ী। তরুণদের রাজনীতিবিমুখতাও এ দেশের জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্ম দিতে পারে। তরুণদের ওপর চালানো এক জনমত জরিপে দেখা যায়, প্রচলিত এই রাজনীতিকে আমাদের দেশের প্রায় ৬০ ভাগ তরুণ ছেলেমেয়ে পছন্দ করেন না। এ ক্ষেত্রে রাজনীতির নগ্ন রূপকেই তারা দায়ী করেন। তাদের কাছে রাজনীতির সংজ্ঞাটাই হলো ক্ষমতার ভাগাভাগি আর সুবিধাবাদ কেন্দ্রিক দলীয় চর্চা। তারা প্রচলিত রাজনীতিকে এ দেশের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর দিক বলে উত্থাপন করেন। তরুণদের একটি অংশ রাজনৈতিক দুষ্টচক্রের প্রভাবে জড়িয়ে পড়ছে মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদী কার্যক্রমের সঙ্গে। হলি আর্টিজানসহ বিভিন্ন ঘটনা আমাদের মাঝে এক ভয়ঙ্কর আতঙ্ক এবং অস্থিরতা সৃষ্টি করে দিয়েছে। বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িকতাকে ধ্বংস করার আরেকটি চক্রান্ত হলো এই জঙ্গিবাদী আগ্রাসন। কিন্তু এসবের পরিত্রাণ তেমন মেলেনি। তরুণ প্রজন্মকে এই আগ্রাসন থেকে রক্ষা করবে কে? কিভাবে এরা এই আগ্রাসন থেকে মুক্তি পাবে সেটা আমাদের সবার জানার বিষয়। এবার শুধু রাষ্ট্রকে এটা নিয়ে ভাবতে হবে। বাংলাদেশে এক সময় সবচেয়ে মেধাবী তরুণ ছেলেমেয়েরাই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হতেন। সবচেয়ে মেধাবীরা সমাজে নানান ধরনের স্বেচ্ছাশ্রমের দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতেন। একইভাবে সমাজও তাদের এই কাজের স্বীকৃতি দান করতেন। যে কারণে মেধাবীদের জায়গা সমাজের সর্বস্তরে ছিল। গান, কবিতা, আবৃত্তি, নাচ, খেলাধুলা, সাহিত্য আড্ডা, ছাত্ররাজনীতি সব কিছুতেই তাদের ছিল প্রধান বিচরণ ক্ষেত্র। কিন্তু বর্তমান সময়ে আমাদের দেশের সব ক্ষেত্রে চরম দৈন্যতা লক্ষণীয়। না আছে খেলার মাঠ, না আছে পৃষ্ঠপোষক, না আছে সাহিত্য আড্ডা, না সুস্থ ধারার সাংস্কৃতিক আন্দোলন। প্রগতিশীল রাজনীতিও আগের মতো শক্তিশালী নয়। যে কারণে সমাজের সব ক্ষেত্রেই জেঁকে বসেছে সুবিধাবাদ, ভোগবাদ আর আত্মকেন্দ্রিকতা। আর এর সব কিছুকেই বাংলাদেশের তারুণ্য ধারণ করছে। অন্যদিকে রাষ্ট্র ও সরকার তরুণদের সঠিক মূল্যায়ন করছে না। যার কারণে তারা চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে। আজকের তরুণরা দেশকে নিয়ে অনেক চিন্তা করছে। প্রতিনিয়ত দেশের খবরা-খরব জানতে চেষ্টা করে তারা। কিন্তু প্রশাসন, রাষ্ট্র তরুণদের নিয়ে কতটা ভাবে? বর্তমান তরুণ প্রজন্ম কাজে বিশ্বাস করে, কথায় নয়। আজ আমাদের দেশে তরুণ বেকারের সংখ্যা অন্যান্য দেশের তুলনায় অধিক। এই বেকার তরুণদের চিন্তা-চেতনা আর বুদ্ধি যদি কাজে লাগাতে পারে রাষ্ট্র, তবে বাংলাদেশ পরিণত হবে সোনার বাংলায়। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে তরুণ সমাজের বিকল্প নেই। একটা কথা সবার মনে রাখতে হবে, আজকের তরুণরাই আগামী দিনে দেশ পরিচালনা এবং বড় বড় কাজের নেতৃত্ব দেবে। এখন থেকে যদি তরুণদের দক্ষ করে গড়ে তোলা যায়, তবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ আরও সুন্দর হবে। তাই দেশ গঠনে তরুণদের চাওয়াকে যেমন গুরুত্ব দিতে হবে, ঠিক তেমনি তাদের পর্যাপ্ত সুযোগও দিতে হবে। আজ দেশে লাখ লাখ শিক্ষিত বেকার তরুণ যুবসমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। যাদের চাইলে দেশের উন্নয়নে কাজে লাগাতে পারে সরকার। তবে রাষ্ট্র সেদিকে খুব একটা নজর দিচ্ছে বলে আমার মনে হচ্ছে না। এ বিষয়ে সোচ্চার হতে হবে তরুণ সমাজকে। তবেই এদেশে তরুণদের মূল্যায়ন হবে। আজহার মাহমুদ চট্টগ্রাম বায়ুদূষণ থেকে ঢাকাকে নিরাপদ করতে হবে প্রকৃতিতে শীত বিভিন্ন উৎসব নিয়ে এলেও ঢাকায় শীত আসে বায়ুদূষণের অভিশাপ নিয়ে। শুষ্ক মৌসুমে রাজধানী বায়ুদূষণে রেকর্ডের পর রেকর্ড করে, যা মোটেই এ মহামারির সময়ে কাঙ্ক্ষিত নয়। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সবাই যখন প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন নীরব ঘাতক হিসেবে বায়ুদূষণ ভূমিকা রাখবে। শীত মৌসুমে যেহেতু স্বভাবত রোগীর সংখ্যা বেশি থাকে এবং তার সঙ্গে করোনা মিলে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করবে! মানুষের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পাবে ব্যাপক আকারে, বায়ুদূষণ থেকে সৃষ্টি সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া ইত্যাদি অসুখের সঙ্গে করোনা মিলে জনসাধারণকে ব্যাপক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলবে। বর্তমানে বায়ুদূষণের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হলো- অবকাঠামো নির্মাণ কাজ, শুষ্কতা, যানবাহন নির্গত বায়ু এবং ইটের ভাটাগুলো। ঢাকার বায়ুতে বিদ্যমান সিসা, ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম, দস্তাসহ ইত্যাদি ভারী ধাতুর উপস্থিতি আশঙ্কাজনকভাবে বেশি যা শ্বাসকষ্ট থেকে ক্যান্সার পর্যন্ত বিভিন্ন রোগের জন্য দায়ী। বাতাসের মান সূচক (একিউআই) অনুযায়ী গত বছর নভেম্বরের বিভিন্ন সময়ে ঢাকার বায়ু বিশ্বের সব থেকে বেশি দূষিত বায়ু ছিল। সাধারণত রাজধানী ঢাকাকে বায়ুদূষণে বিশ্বের দ্বিতীয় অবস্থানে দেখা যায়। করোনাকালীন কয়েক মাস ঢাকা শহর অচল থাকার সময়ে ঢাকার পরিবেশে বায়ুর অস্বাভাবিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। বাতাসে দূষণের পরিমাণ কম ছিল যা লকডাউনের পরে আবার অবনতির দিকে। দূষণ মোকাবিলায় প্রত্যেক বছর সিটি-করপোরেশন যে ধরনের ব্যবস্থা নিয়ে থাকে তা পর্যাপ্ত নয়, 'সর্বাঙ্গে ব্যথা,ওষুধ দেবো কোথা' কয়েকবার জল ছিটানোতে এর সমাধান মিলবে না, নগর পরিকল্পনাবিদদের উচিত সময়োপযোগী উদ্যোগ নেওয়া। অবকাঠামোগত নির্মাণ ও চারপাশের ইটের ভাটা থেকে যেহেতু উলেস্নখযোগ্য পরিমাণ দূষণ ঘটে তাই এখানে প্রয়োজন স্থায়ী নীতিমালার, সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বায়ুদূষণকে মাথায় রেখে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে সংশ্লিষ্টদের। শুধু করোনাকালীন নয়- বায়ুদূষণ থেকে ঢাকাকে সব সময়ের জন্য নিরাপদ করতে হবে। মো. আরাফাত হোসেন শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়