বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষা পরিস্থিতি

যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে
নতুনধারা
  ০১ ডিসেম্বর ২০২০, ০০:০০

করোনা পরিস্থিতিতে সারা বিশ্ব ভীতিপ্রদ বাস্তবতার মুখোমুখি। এর প্রভাবে যেমন মানুষের জীবনযাপনের স্বাভাবিকতা বিঘ্নিত হয়েছে, তেমনি বিপর্যস্ত হয়েছে প্রত্যেকটি খাত। শিক্ষায়ও পড়েছে এর ব্যাপক প্রভাব। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, করোনা সংক্রমণের কারণে গত মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সর্বস্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বাতিল হয়েছে প্রাথমিক সমাপনী, জেএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা। অটো প্রমোশন দেওয়া, সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের ওপর শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এমনটিও জানা গেছে, স্কুল ভর্তিপরীক্ষা বাতিল করে লটারির মাধ্যমে হবে শিক্ষার্থী বাছাই। আর পিছিয়ে যাচ্ছে আগামী বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিপ্রক্রিয়া নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আর সম্প্রতি দৈনিক যায়যায়দিনে প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, এ সব সিদ্ধান্ত কতটা সময়োপযোগী এবং ক্ষতি পোষাতে আগামীতে কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে, তা নিয়ে মত দিয়েছেন খ্যাতিমান শিক্ষাবিদরা।

তথ্য মতে, করোনার কারণে সরকার শিক্ষাব্যবস্থায় যে সব সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার কোনো বিকল্প দেখছেন না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। যদিও এইচএসসি পরীক্ষাটা বাতিল না করে বিভাগভিত্তিক এবং সংক্ষিপ্ত সিলেবাস, পরীক্ষা কেন্দ্র বাড়িয়ে দীর্ঘ সময় ধরে নেওয়ার বিষয়টি সরকার চিন্তা করতে পারত এমনটি মনে করেন তিনি। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রসঙ্গে বলেছেন, এইচএসসিতে শিক্ষার্থীদের মেধা মূল্যায়ন যেহেতু সম্ভব হয়নি তাই বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে যেন তার প্রতিফলন না হয়। অর্থাৎ যথাযথ প্রক্রিয়ায় মেধাবীদের বাছাইয়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এখনই উদ্যোগী হতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. এ কে আজাদ চৌধুরী বলেছেন, করোনার মধ্যে শিক্ষায় যে সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তার বাইরে সরকারের কোনো কিছু করার ছিল না। স্কুল খুলে দেওয়ার দাবি উঠেছিল, সরকার যদি খুলে দিত এখন আবার বন্ধ করতে হতো। তার মতে, যখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হোক, করোনাকালীন শিক্ষার ক্ষতি পোষাতে সরকারকে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম হাতে নিতে হবে। বার্ষিক ও সাপ্তাহিক ছুটির সংখ্যা কমিয়ে ক্লাসের সংখ্যা ও সময় বাড়াতে হবে। এ ছাড়া লটারির মাধ্যমে স্কুলে ভর্তির প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, অটো পাস, পরীক্ষা না দিয়ে পরের ক্লাসে যাওয়া, লটারি এগুলো শিক্ষার্থীদের ওপর ভালো খারাপ দুই-ই প্রভাব পড়বে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার চেয়ারম্যান ড. আ আ ম স আরেফীন সিদ্দিক বলেছেন, করোনায় ক্ষতি হওয়া সবচেয়ে বড় সেক্টর হলো শিক্ষা। অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়তো পরে পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। কিন্তু শিক্ষার চলতি বছরের ব্যাচটি যে ক্ষতির শিকার হয়েছে তা ভবিষ্যতে পোষানো সম্ভব নয়। আর শিক্ষায় লটারি, অটো পাস এগুলো অপ্রাসঙ্গিক কিন্তু তারপরও বর্তমান পরিস্থিতিতে এর কোনো বিকল্প ছিল না বলেই তিনি মনে করেন। এ ছাড়া এ বৈশ্বিক সমস্যার পর শিক্ষার এ ক্ষতি উত্তরণে বিশেষভাবে কাজ করতে হবে। সংক্ষিপ্ত মূল্যায়নের মাধ্যমে তাদের সমস্যা ও ঘাটতিগুলো চিহ্নিত করার ব্যবস্থা করা হয়েছে, এটা ভালো দিক। তবে ঘাটতিগুলো যাতে পরে পূরণ হয় সেদিকে নজর রাখার বিষয়টি তিনি তুলে ধরেন।

গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেছেন, খুবই ভয়ের বিষয় করোনার পরের দরিদ্র কিন্তু মেধাবী এমন শিক্ষার্থীদের কি হবে? তা এখনো আমাদের অজানা। ধারণা করা হচ্ছে, করোনার কারণে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ঝরে পড়ে যেতে পারে। তাই সরকারকে এখনই করোনাপরবর্তী শিক্ষার ক্ষতি পূরণের পাশাপাশি ঝরে পড়ার শঙ্কা আছে এমন শিক্ষার্থীদের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া।

আমরা বলতে চাই, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধসহ নানা ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে করোনাকালীন সময়ে। আর এ বাস্তবতাকে মেনে নিয়েই শিক্ষাকে এগিয়ে নেওয়া পথ খুঁজতে হবে। শিক্ষাবিদরা যে বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন সেগুলো আমলে নেওয়ার পাশাপাশি বাস্তব পরিস্থিতিকে পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সংশ্লিষ্টদের যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষার উন্নয়নে সব ধরনের পদক্ষেপ জারি থাকবে এটাই কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে