মানবপাচার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি

প্রকাশ | ০২ ডিসেম্বর ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সরকারের নানা ধরনের উদ্যোগ ও তৎপরতা সত্ত্বেও মানবপাচার কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না। সাগরপথে থাইল্যান্ড কিংবা মালয়েশিয়ায় মানবপাচার হচ্ছে। মানবপাচার হচ্ছে লিবিয়াসহ অন্যান্য দেশে। এমন পরিস্থিতিতে ছয়জন পলাতক মানবপাচারকারীর বিরুদ্ধে সম্প্রতি রেড নোটিশ জারি করেছে ইন্টারপোল। বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) নির্দেশনা অনুযায়ী এ রেড নোটিশ জারি করেছে পুলিশের আন্তর্জাতিক এ সংস্থা। রেড নোটিশ জারি হওয়া এ ছয় মানবপাচারকারী হলেন মিন্টু মিয়া, স্বপন, শাহাদাত হোসেন, নজরুল ইসলাম মোলস্না, ইকবাল জাফর ও তানজিরুল। এ মানবপাচারকারীরা বাংলাদেশের ৩৮ জনকে ভালো চাকরির কথা বলে ইউরোপে পাচার করার কথা বলেছিলেন। লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলির ১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণের একটি এলাকায় তাদের পরিবারের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের উদ্দেশ্যে নির্যাতনের ভিডিও বাংলাদেশে থাকা পরিবারগুলোর কাছে পাঠান। এক পাচারকারীকে হত্যার ঘটনায় অন্য পাচারকারীরা বাংলাদেশিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। এতে ২৬ বাংলাদেশি নিহত হন। আহত হন ১১ জন। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, ভূমধ্যসাগর হয়ে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশে দেশ ত্যাগ করা বেশ কিছু বাংলাদেশি এখনো লিবিয়ার মানবপাচারকারীদের হাতে জিম্মি। তারা লিবিয়ার দুর্গম মরু এলাকায় রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ত্রিপোলিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, বিভিন্ন সময় এ ধরনের তথ্য আসে। এখনো কত বাংলাদেশি আটক, এটা নিশ্চিতভাবে জানা নেই। যেহেতু দুর্গম মরু এলাকা দিয়ে পাচারকারীরা লোকজনকে নিয়ে যায়, তাই এ নিয়ে নিশ্চিতভাবে তথ্য জানতে সময় লাগে। আরও বাংলাদেশি আটকে থাকার বিষয়ে দূতাবাস খোঁজ নেবে। তারা ভালো বেতনের চাকরির 'প্রলোভন দেখিয়ে' বিভিন্ন অংকের টাকার বিনিময়ে ভিকটিমদের লিবিয়ায় পাচার করে কম টাকায় কঠিন শ্রমে নিয়োজিত করা হতো। সেখানে বলা হয়, লিবিয়ায় পাচারের পর বাংলাদেশি ওই দলটিকে এক জায়গায় জড়ো করে আটকে রাখা হয়। তারপর মিজদাহে 'লিবিয়ানসন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সহযোগিতায় অপহরণের নাটক সাজিয়ে' বাড়তি টাকা দাবি করা হয়। টাকা আদায়ের জন্য ভিকটিমদের ওপর নির্যাতন চালায় পাচারকারীরা। পরে সেই অডিও এবং ছবি বাংলাদেশে স্বজনদের কাছে পাঠিয়ে আট থেকে দশ লাখ টাকা দাবি করা হয়। ২৬ বাংলাদেশিকে হত্যার পরর্ যাব বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে, এর মধ্যে দলনেতাও রয়েছে। মানবপাচার বাংলাদেশের অন্যতম শিরঃপীড়ায় পরিণত হয়েছে। জল-স্থল-আকাশপথে প্রতিদিন মানবপাচার চলছে। মূলত জীবন ও জীবিকার কারণে, দেশে কর্মসংস্থানের অভাবে, দারিদ্র্যের পীড়নে মানুষ পাড়ি জমাচ্ছে বিদেশে। এ সব মানুষের বেশির ভাগই প্রতারিত হচ্ছে, হচ্ছে সর্বস্বান্ত। অবৈধভাবে দেশের বাইরে যাওয়ায় বাংলাদেশের অনেক অভিবাসী মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ছেন। চলাচলে সীমাবদ্ধতা, ঋণের চক্রে পড়া, জোরপূর্বক শ্রম, যৌন নির্যাতন, জোরপূর্বক বিবাহ এবং দাসত্বের মতো শোষণমূলক আচরণের শিকার হচ্ছেন অভিবাসীরা। দরিদ্র ও প্রান্তিক নারী ও পুরুষ এবং শিশুরাই মানবপাচারকারীদের লক্ষ্যে পরিণত হচ্ছেন। আমরা মনে করি, মানবপাচার বন্ধ করতে হলে কোস্ট গার্ড, পুলিশ ও বিজিবিসহ সব আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও নজরদারি বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনে বিমান বন্দর, স্থল বন্দর ও সীমান্তের সক্ষমতা বাড়িয়ে, পাচার বন্ধ করতে হবে এবং এর কোনো বিকল্প নেই।