শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

এইডস প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিন

নতুনধারা
  ০৩ ডিসেম্বর ২০২০, ০০:০০

এইডসের ভয়াবহতা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। এইডস সংক্রমণের কারণে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়। এর ফলে দেখা যায় একজন এইডস রোগী খুব সহজেই যে কোনো সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হতে পারেন, যা শেষ পর্যন্ত মৃতু্যর কারণ হতে পারে। বিশ্ব এইডস দিবস গত মঙ্গলবার পালিত হয়েছে। এ বছর এইডস দিবসের প্রতিপাদ্য হলো 'সারা বিশ্বের ঐক্য, এইডস প্রতিরোধে সবাই নেব দায়িত্ব'। এ ক্ষেত্রে উলেস্নখ্য যে, বাংলাদেশে সর্বপ্রথম এইডস শনাক্ত হয় ১৯৮৯ সালে। আর সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, চলতি ২০২০ সালে (১ বছর) বাংলাদেশে এইচআইভি (এইডস) আক্রান্ত হয়ে ১৪১ জনের মৃতু্য হয়েছে। এ সময় নতুন করে ৬৫৮ জনের শরীরে এইচআইভি শনাক্ত হয়েছে। প্রসঙ্গত বলা দরকার, গত মঙ্গলবার বিশ্ব এইডস দিবস-২০২০ উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জাতীয় এইডস নিয়ন্ত্রণ-এসটিডি কর্মসূচির পক্ষ থেকে তথ্য জানানো হয়।

আমরা বলতে চাই, যখন এমন বিষয় আলোচনায় আসছে, এইডস রোগের ক্ষেত্রে প্রতিরোধটাই সবচেয়ে বড় হাতিয়ার, তখন তা আমলে নিতে হবে। এমনটিও জানা যাচ্ছে, এই রোগ প্রতিরোধের জন্য বাংলাদেশ সরকারের অনেক প্রোগ্রাম আছে। যেগুলো স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনার মাধ্যমে বাস্তবায়ন হচ্ছে। আমরা মনে করি, এইগুলোর সুষ্ঠু বাস্তবায়নসহ নিশ্চিত করাসহ এইডস রোধে সচেতনতার বিষয়টিও অগ্রগণ্য। দেশে বর্তমানে এইচআইভি এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৪ হাজারের বেশি। তবে চিকিৎসার আওতায় এসেছে মাত্র ৮ হাজার ৩৩ জন। এর মধ্যে ১২৪ জন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী আছে। আরও জানা যাচ্ছে যে, নতুন আক্রান্ত ৬৫৮ জন পজিটিভ রোগীর মধ্যে পুরুষ ৭৬ শতাংশ, নারী ২১ শতাংশ ও তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী ৩ শতাংশ। এদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ২১৮ জন।

আমরা মনে করি, সংশ্লিষ্টদের এটা আমলে নেওয়া দরকার যে, নতুন আক্রান্তদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে ১২ দশমিক ২৪ শতাংশ, ২৫ থেকে ৪৯ বছররের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৭৪ দশমিক ২০ শতাংশ, ১৯ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ, ১০ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে দুই দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। ৬ থেকে ৯ বছরের মধ্যে শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং শূন্য থেকে ৫ বছরের মধ্যে এক দশমিক ৮৮ শতাংশ। আরো লক্ষণীয় যে, আক্রান্তদের মধ্যে বেশির ভাগই বিবাহিত। এদের সংখ্যা ৭০ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। অবিবাহিতদের সংখ্যা ২৩ দশমিক ১৬ শতাংশ।

প্রসঙ্গত এটাও উলেস্নখ্য, ২০২০ সালে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১৪ লাখ। এ বছর করোনার কারণে নমুনা পরীক্ষা কম হয়েছে। এর আগের বছর নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ৩৩ লাখের বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, দেশে এখনো সাধারণ জনগণের মধ্যে সংক্রমণের হার শূন্য দশমিক ০১ শতাংশের নিচে। ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী যেমন শিরায় মাদক গ্রহণকারী, যৌনকর্মী, সমকামী ও হিজড়াদের মধ্যে সংক্রমণের হার ২ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে- যা আগে ২৫ শতাংশের ওপরে ছিল। আমরা মনে করি, সামগ্রিকভাবে তথ্য উপাত্তগুলো আমলে নিতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, করোনা পরিস্থিতির কারণে ভীতিপ্রদ বাস্তবতা সৃষ্টি হয়েছে, এই পরিস্থিতিতে অনেক কিছুই থমকে গেছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে এইডস সংক্রান্ত সচেতনতা ও প্রতিরোধে সর্বাত্মক উদ্যোগ জারি রাখার বিকল্প নেই। বর্তমানে বিশ্বের মোট এইডস আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৩ কোটি ৮০ লাখ। এর মধ্যে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ১ কোটি ৮০ লাখ। আর মৃতু্য হয়েছে ৬ লাখ ৯০ হাজার মানুষের। আমরা মনে করি, সঙ্গত কারণেই এইডস এর ভয়াবহতা এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। এইডস প্রতিরোধে সম্মিলিত প্রচেষ্টা, সচেতনতা বৃদ্ধিসহ সর্বাত্মক পদক্ষেপ জারি রাখা জরুরি। যেসব তথ্য উঠে আসছে তা আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টরা এইডস প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ অব্যাহত রাখবে এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে