শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় আঙুল কেটে নেয়া অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি জরুরি

নতুনধারা
  ০৩ ডিসেম্বর ২০২০, ০০:০০

নারীর অবমাননা বা নির্যাতন পরিবার ও সমাজে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। দেশে ধর্ষণ, গণধর্ষণ এবং ধর্ষণের পর খুনের ঘটনা বেড়েই চলেছে কোনো রকম প্রতিকারহীনভাবে। পাশাপাশি নারীদের উত্ত্যক্ত করা ও যৌন হয়রানির ঘটনাও বেড়েছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি এ ধরনের অপরাধ বাড়ার মূল কারণ।

এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, মায়ের স্বপ্ন তার মেয়ে ডাক্তার হয়ে বিনা পয়সায় গ্রামের সাধারণ মানুষের চিকিৎসা দেবে। কিন্তু পথের কাঁটা হয়ে আসে বখাটেরা। প্রতিবাদ করেন মা। তাই ক্ষিপ্ত হয়ে নির্যাতন করে ওই মায়ের হাতের আঙুল কেটে দিয়েছে বখাটেরা। নির্মম এ ঘটনা ঘটে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায়। গুরুতর আহত অবস্থায় ওই নারীকে প্রথমে ছাতক কৈতক হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। বর্তমানে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকরা জানান।

বলার অপেক্ষা রাখে না, রাস্তাঘাটে, রেস্তোরাঁয়, চলন্তবাসে, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে, গৃহে সর্বত্র ঘটছে পৈশাচিক ঘটনা। কোথাও আজ নারীরা নিরাপদ নয়। আমাদের নারী, শিশুরা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে না, এমনকি ধর্ষণের পর খুন হচ্ছে। নারীর প্রতি সহিংস আচরণ, অবমাননা এবং এর বিয়োগান্তক পরিণতি কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। পৃথিবীব্যাপীই ঘটছে, তবে ইদানীং বাংলাদেশে যেন এর জোয়ার এসেছে। অপরাধীরা তো এ মানব সভ্যতারই অন্তর্গত, আমাদের চারপাশেরই বাসিন্দা। সবাই কোনো না কোনো পরিবারেই বেড়ে উঠেছে। সে পরিবার থেকে তারা কী শিক্ষা পেয়েছিল- এটাই আমাদের প্রশ্ন। আমাদের দেশেও নারী নির্যাতন রোধে আইন আছে, কিন্তু তার যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন না থাকায় নারী নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে না। শুধু আইন তৈরি ও পাস নয়, সংশ্লিষ্ট মহলকে সেই আইনের যথাযথ প্রয়োগও নিশ্চিত করা উচিত।

দেশের উন্নয়ন হচ্ছে- এ কথা প্রায় সর্বত্র উচ্চারিত হচ্ছে। কিন্তু কিছুতেই যে সামাজিক অবক্ষয় রোধ করা যাচ্ছে না, তার কী হবে। সমাজে সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ নারীরা। তাদের নানাভাবে অত্যাচার নির্যাতন করা হচ্ছে। পরিবার মামলা করেও এর প্রতিকার পাচ্ছে না।

বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতার মূলে রয়েছে মনস্তত্ত্ব্ব, পিতৃতন্ত্র ও বৈষম্যমূলক আইন। ইতিহাস, দর্শন, শিক্ষা কারিকুলাম নারীর প্রতিকূলে। রাজনীতির দুর্বৃত্তায়নও নারীর প্রতি সহিংসতার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে। রাষ্ট্র আপসহীন না হলে এবং নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে 'জিরো টলারেন্স' নীতি গ্রহণ না করলে সমাজের ভেতরে এই অবক্ষয় রুখে দাঁড়ানো যাবে না। সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করা। নারীর প্রতি পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি কেবলই ভোগবাদী। তারা নারীকে সবসময় ভোগের বস্তু হিসেবেই গণ্য করে থাকে। অথচ নারী-পুরুষ উভয়েই পরিবার ও সমাজের জন্য অনিবার্য। নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ প্রতিরোধে ব্যাপকভাবে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সামাজিক সচেতনা বৃদ্ধিসহ পুরুষের মানসিকতার পরিবর্তন এবং নারী অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা অর্জন করলে কিছুটা পরিবর্তন সূচিত হতে পারে, সে জন্য আমাদের নারীদের আরও দীর্ঘ পিচ্ছিল ও ঝুঁকিপূর্ণ পথ পাড়ি দিতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে