বন্যপ্রাণী রক্ষার জন্য গণসচেতনতা ও আইনের সঠিক প্রয়োগ অত্যন্ত জরুরি

প্রকাশ | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

জোবায়ের মাছুম ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগ নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
কচ্ছপ এক ধরনের সরীসৃপ যারা পানি এবং ডাঙা দুই জায়গাতেই বাস করে। এদের শরীরের উপরিভাগ শক্ত খোলসে আবৃত থাকে যা তাদের শরীরকে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে রক্ষা করে। কচ্ছপ পৃথিবীতে এখনো বতর্মান এমন প্রাচীন প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম। বতর্মানে কচ্ছপের প্রায় ৩০০ প্রজাতি পৃথিবীতে রয়েছে, এদের মধ্যে কিছু প্রজাতি মারাত্মকভাবে বিলুপ্তির পথে রয়েছে। কচ্ছপ বিভিন্ন পরিস্থিতিতে তার নিজের শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা পরিবতর্ন করতে পারে, সাধারণত এ ধরনের প্রাণীদের ঠাÐা-রক্তের প্রাণী বলে অভিহিত করা হয়। অন্যান্য প্রাণীর মতো এরা নিঃশ্বাস গ্রহণ করে। কচ্ছপের অনেক প্রজাতি পানিতে বা পানির আশপাশে বাস করলেও এরা ডাঙায় ডিম ছাড়ে। কচ্ছপ (ঞড়ৎঃড়রংব) ঞবংঃঁফরহবং বগের্র অন্তগর্ত ডাঙ্গায় বসবাসকারী সরীসৃপ। এদের দেহ খোলসদ্বারা আবৃত থাকে। খোলসের উপরের অংশকে ঈধৎধঢ়ধপব (ক্যারাপেস) এবং নিচের অংশকে চষধংঃৎড়হ (প্লাসট্রন ) বলে। এরা কয়েক সে.মি. থেকে ২ মিটার পযর্ন্ত বড় হতে পারে। এরা সাধারণত দিবাচর প্রাণী তবে তাপমাত্রার উপর নিভর্র করে তারা গোধূলিতেও সক্রিয় হয়ে থাকে। তারা সাধারণত দলবদ্ধ প্রাণী নয় এবং একাকী জীবনযাপন করে থাকে। যদিও ‘ঞড়ৎঃড়রংব’ শব্দটি জীববিজ্ঞানীরা ঞবংঃঁফরহরফধব গোত্রের প্রাণীদের বোঝাতে ব্যবহার করে থাকেন তবে সাধারনভাবে ডাঙ্গায় বসবাসকারী ঞবংঃঁফরহবং-দের বোঝাতে শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। প্রতিবছর শীত মৌসুমে (ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পযর্ন্ত) মা কচ্ছপ গভীর সমুদ্র থেকে ডিম পাড়তে উপক‚লের বালুচরে আসে। কিন্তু উপক‚লে পুঁতে রাখা জেলেদের জালে আটকা পড়ে মা কচ্ছপ মারা যাচ্ছে। কিছু কচ্ছপ সঁাতরে ক‚লে উঠলেও ডিম ছাড়তে পারছে না। ক্লান্ত কচ্ছপগুলো উপক‚লে এসেই কুকুরের আক্রমণের শিকার হচ্ছে, তারপর মারা যাচ্ছে। মানুষের বেশি আনাগোনা, লাইটিং ইত্যাদি কারণে যথা সময়ে ডিম পাড়তে বিঘœ সৃষ্টি হলেও মারা যেতে পারে। মানুষের খাদ্য হিসাবে কচ্ছপের ব্যবহার দিন দিন বাড়তে থাকায় অতিরিক্ত আহরণ ও পরিবেশের বিপযের্য়র দরুন বাংলাদেশে কচ্ছপের জীববৈচিত্র্য আজ হুমকির সম্মুখীন। তা ছাড়াও কচ্ছপ রপ্তানিপণ্য বিধায় প্রতিবছর এর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। উপরন্তু জলবায়ু পরিবতের্নর বিষয়টিও রয়েছে। মূলত ভারত মহাসাগর ও দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে এদের অবস্থান। তবে এদের প্রধান বাসস্থান হলো বাংলাদেশের সেন্ট মাটির্ন দ্বীপ, সুন্দরবন এবং অন্যান্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত দ্বীপসমূহে। কচ্ছপের বাসস্থানের বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা ও ভারসাম্যপূণর্ আহরণ নিশ্চিত করতে না পারলে শিগগিরই এদের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে পড়বে। উল্লেখ্য, সারা বিশ্বে যেখানে মাত্র ৩০০ প্রজাতির কচ্ছপ রয়েছে তারমধ্যে শুধু আমাদের দেশেই আছে ২৮ প্রজাতির কচ্ছপ। জীববৈচিত্র্যের দিক থেকে যা খুবই গুরুত্বপূণর্ অথর্ বহন করে। সচেতনতার অভাবে আমরা ইতোমধ্যেই অনেক প্রজাতির বন্যপ্রাণী প্রকৃতি থেকে হারিয়ে ফেলেছি। এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে সব প্রজাতির বন্যপ্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তাই বন্যপ্রাণী রক্ষার জন্য গণসচেতনতা ও আইনের সঠিক প্রয়োগ অত্যন্ত জরুরি।