মানব উন্নয়ন সূচকে অগ্রগতি ধারাবাহিকতা বজায় থাক

প্রকাশ | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
জাতিসংঘ উন্নয়ন কমর্সূচির ‘মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন-২০১৮’-এ বাংলাদেশের তিন ধাপ অগ্রগতির খবরটি আমাদের সবার জন্য নিঃসন্দেহে আনন্দদায়ক। ২০১৭ সালের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ইউএনডিপি গত শুক্রবার এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এবারের প্রতিবেদনে ১৮৯ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৩৬তম অবস্থানে। ২০১৭ সালে ১৮৮টি দেশের মধ্যে পরিচালিত জরিপে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৩৯; এর আগের বছর ছিল ১৪২তম অবস্থানে। প্রতিটি দেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আয় ও সম্পদের উৎস, বৈষম্য, লৈঙ্গিক সমতা, দারিদ্র্য, কমর্সংস্থান, নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও আথির্কপ্রবাহ, যোগাযোগ, পরিবেশের ভারসাম্য ও জনমিতির তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রতিবছর মানব উন্নয়ন সূচক তৈরি করে জাতিসংঘের এই সংস্থাটি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, নাগরিকদের প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল ৭২ দশমিক ৮ বছর; শিশুদের স্কুলে কাটানোর প্রত্যাশিত সময় গড়ে ১১ দশমিক ৪ বছর এবং মাথাপিছু আয় (জিএনআই) ৩ হাজার ৬৭৭ ডলার নিয়ে বাংলাদেশের এবারের এইচডিআই স্কোর হয়েছে শূন্য দশমিক ৬০৮। সূচকের অন্যান্য পরিসংখ্যানও আমাদের জন্য মোটামুটি সন্তোষজনক। তবে সবোর্চ্চ স্কোর অজর্নকারী নরওয়ের সঙ্গে তুলনা করলে আমাদের সন্তুষ্টি ফিকে হয়ে আসে। এবার নরওয়ের স্কোর শূন্য দশমিক ৯৫৩। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বৈশ্বিক এই সূচকে নেপাল (১৪৯) ও পাকিস্তানের (১৫০) চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকলেও শ্রীলংকা (৭৬), মালদ্বীপ (১০১), ভারত (১৩০) ও ভুটানের (১৩৪) চেয়ে পিছিয়ে আছে। তবে বাংলাদেশের তিন ধাপ এগিয়ে আসার কৃতিত্বও খাটো করে দেখার নয়। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দেশের নানান স্তরে দুনীির্তসহ বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা সত্তে¡ও জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি এ কথাই বলে যে, দেশে গণতন্ত্রের সুষ্ঠু চচার্ ও সুশাসন নিশ্চিত করা গেলে আমরা আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারি। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, দুনীির্ত বহুলাংশে ব্যাহত করে আমাদের উন্নয়ন-অগ্রগতি। জাতিসংঘের উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের তিন ধাপ এগিয়ে যাওয়ার ঘটনায় দেশের সাধারণ মানুষের ভ‚মিকাও অপরিসীম। রাজনীতি বলয়ের বাইরে থাকা বিশাল এই জনগোষ্ঠী, দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে নিঃসন্দেহে। অন্যদিকে লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ, সাক্ষরতার হার বাড়ানো, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, দারিদ্র্য বিমোচনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যে অজর্ন, সেজন্য বতর্মান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কৃতিত্ব উল্লেখ করার মতো। আমরা চাইব মানব উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রেই রাজনীতিকরা তাদের ভ‚মিকা স্পষ্ট করবেন। তাহলে বৈশ্বিক এ সূচকে আমাদের দেশ আরও এগিয়ে যাবে। এবারের বৈশ্বিক মানব উন্নয়ন সূচকের তথ্যে দেখা যায়, নাগরিকদের প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল ৮২ দশমিক ৩ বছর, শিশুদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাটানোর প্রত্যাশিত সময় গড়ে ১৭ দশমিক ৯ বছর এবং মাথাপিছু আয় (জিএনআই) বছরে ৬৮ হাজার ১২ ডলার নিয়ে নরওয়ে শীষের্ আছে। আর বাংলাদেশ সূচকে তিনধাপ এগিয়ে এলেও নরওয়ের সঙ্গে তুলনা করলে হতাশ হওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। বাংলাদেশ কতদিনে সম্মানজনক একটি অবস্থানে পেঁৗছতে পারবে- এমন প্রশ্নও অমূলক উঠে আসে। এবারের সূচকে আসা দেশগুলোকে অতি উন্নত, উন্নত, মধ্যম ও নিম্ন মানব উন্নয়নের চারটি স্তরে ভাগ করে এই অবস্থান নিণর্য় করেছে সংস্থাটি। বাংলাদেশ যে এখনো ‘নিম্ন মানব উন্নয়নের’ দেশের স্তরে অবস্থান করছে তা বলাই বাহুল্য। দেখা গেছে, যেসব দেশের নাগরিকদের প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল বেশি, শিক্ষাব্যবস্থা উন্নত এবং মাথাপিছু আয় বেশি, সেসব দেশই তালিকায় সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে। ফলে এবারের প্রতিবেদনটি আমলে নেয়া গেলে, আমাদের সাবির্ক উন্নয়নে করণীয় কী সে সম্পকের্ স্পষ্ট একটি ধারণা পাওয়া যেতে পারে। সবোর্পরি বলতে চাই, বৈশ্বিক এসব সূচকে দ্রæত ও টেকসই অগ্রগতি চাইলে সবর্স্তরে গণতন্ত্রায়ন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দিতে হবে। দ্রæত এগিয়ে চলা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের নাম আছে, এটা আশার কথা। যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আমাদের অবস্থান আরও এগিয়ে আসতে পারে বলেই আমরা বিবেচনা করি। এ জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছাও অত্যন্ত গুরুত্বপূণর্।