পরিবেশ দূষণে আথির্ক ক্ষতি

প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে

প্রকাশ | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশে পরিবেশ সংকট দিন দিন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। পরিবেশ দূষণে নানামাত্রিক ক্ষতির বিষয়টিও সবর্জনবিদিত। পরিবেশ দূষণের ফলে একদিকে যেমন জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে, অন্যদিকে পরিবেশ দূষণের ফলে আথির্ক ক্ষতির পরিমাণও অঁাতকে ওঠার মতো। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, পরিবেশ দূষণের ফলে বাংলাদেশে বছরে ৬.৫ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হচ্ছে। দেশি মুদ্রায় হিসাব করলে এই ক্ষতির পরিমাণ ৫২ হাজার কোটি টাকা। এই অথর্ ২০১৫ সালে বাংলাদেশের অজির্ত জিডিপির প্রায় ৩ দশমিক ৪ শতাংশের সমান বলেও উল্লেখ করা হয়। বৈশ্বিক সংস্থাটি তাদের ‘ইনহ্যান্সিং অপরচুনিটিজ ফর ক্লিন অ্যান্ড রেসিলেন্ট গ্রোথ ইন আরবান বাংলাদেশ, কান্ট্রি এনভায়রমেন্ট অ্যানালাইসিস ২০১৮’ শীষর্ক প্রতিবেদন এই উদ্বেগজনক তথ্য তুলে ধরেছে। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, রোববার রাজধানীর সোনারগঁা হোটেলে এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর শহর অঞ্চলে যেসব মানুষ মারা যায় তার ২৮ শতাংশই মারা যায় পরিবেশ দূষণের কারণে। আর সারাবিশ্বের হিসেবে ১৬ শতাংশ। চলতি বছরের জুন মাসে বিশ্বব্যাংকের জলবায়ুবিষয়ক অন্য একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বিশ্বের দূষণগ্রস্ত দেশের মধ্যে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। ভবিষ্যতে বিশ্বের জলবায়ু পরিবতের্নর কারণে বাংলাদেশের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলেও সতকর্ করা হয়েছিল। বলাই বাহুল্য, বৈশ্বিক এবং দেশীয় নানা জরিপে বাংলাদেশে বিপজ্জনক হারে পরিবেশ দূষণ বাড়ছে বলে দাবি করা হলেও পরিবেশ দূষণ রোধে সরকার তথা সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষের উদ্যোগ আশানুরূপ দৃশ্যমান নয়। সঙ্গত কারণে বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে ভাবনার যথেষ্ট অবকাশ থাকে। এবারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিবেশ দূষণে বাংলাদেশে অনেক বেশিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, পরিবেশ দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ শিল্পায়ন। অপরিকল্পিত শিল্পায়নের কারণে নানাভাবেই বায়ুদূষণ, পানিদূষণ, মাটিদূষণ ও শব্দদূষণ ঘটছে। যেখানে সেখানে ইটের ভাটা তৈরি, যথাযথ পরিবেশ ছাড়পত্র না নিয়েই শিল্প-কারখানা স্থাপন, ট্যানারি ও গামের্ন্ট বজর্্য পানিতে মিশে একই সঙ্গে বায়ুদূষণ, পানিদূষণ ও মাটিদূষণ ঘটাচ্ছে। অন্যদিকে গাড়িতে হাইড্রোলিক হনের্র ব্যবহার এবং বিপুল পরিমাণ যানবাহনের কালোধেঁায়া পযার্য়ক্রমে শব্দদূষণ এবং বায়ুদূষণে ভ‚মিকা রাখছে। যদিও এই দূষণের পরিমাণ গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরাঞ্চলে বেশি। তথ্য মতে, ২০১৫ সালে বাংলাদেশের শহর অঞ্চলে ৮০ হাজার মানুষ পরিবেশ দূষণের কারণে মারা যান। বস্তুত এসব তথ্য পরিবেশ দূষণ নিয়ে বাংলাদেশের বতর্মান বাস্তবতাকেই স্পষ্ট করে। ফলে পরিবেশ দূষণ রোধে সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষের কঠোর হওয়ার কোনো বিকল্প থাকা উচিত হতে পারে না। আমরা বলছি না, পরিবেশ দূষণ রোধে সরকার তৎপর নয়। জানা যায়, সরকার ২১০০ সালের ডেল্টা প্ল্যান হাতে নিয়েছে। অথৈর্নতিক উন্নয়নের পাশাপাশি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য পরিবেশ সৃষ্টির কথা বিবেচনায় রেখে সরকার পরিবেশ দূষণ রোধে নানামুখী কমর্কাÐ চালাচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্যেও স্পষ্ট লাইসেন্স না নিয়েই অনেকে ইটভাটা তৈরি করছে। ঢাকা শহরের বায়ু দূষণের ৫৮ শতাংশ ইট ভাটা থেকে হয় বলেও শনাক্ত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা পরিবেশ দূষণের কারণ সম্পকের্ও ওয়াকিবহাল, তাহলে দূষণ রোধে কেন সোচ্চার নয়Ñ এটাও প্রশ্ন হতে পারে। পরিবেশ দূষণের কারণে নানামাত্রিক ক্ষতির পাশাপাশি যেহেতু মোটা অঙ্কের আথির্ক ক্ষতির বিষয়টিও সামনে এসেছে, তখন সংশ্লিষ্টদের কতর্ব্য হওয়া দরকার পরিবেশ দূষণের উৎসগুলো বন্ধের কাযর্কর উদ্যোগ নিশ্চিত করা। সবোর্পরি বলতে চাই, বাংলাদেশের উন্নয়ন তখনই টেকসই হতে পারে, যখন অথৈর্নতিক উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবেশের উন্নয়নসহ সাবির্ক বিষয়ের উন্নয়ন নিশ্চিত করা যাবে। তথ্য অনুযায়ী, পরিবেশ দূষণের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন শহর অত্যন্ত ঝুঁকিতে রয়েছে, এ জন্য সেসব এলাকায় বসবাসরতদেরও চরম মূল্য দিতে হচ্ছে। আমরা মনে করি, বিশ্বব্যাংকে প্রতিবেদনটি আমলে নিয়ে, পরিবেশ দূষণ রোধে কাযর্কর উদ্যোগ নেয়ার বিকল্প নেই। ফলে পরিবেশ দূষণ থেকে মুক্তি পেতে সঠিক নীতিমালা প্রণয়নের পাশাপাশি গণসচেতনতা বাড়াতেও উদ্যোগ নেয়া অপরিহাযর্।