বাল্যবিবাহ

সাবর্জনীন আইন প্রণয়নের পরিকল্পনা

প্রকাশ | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বাল্যবিবাহ একটি অভিশাপ কথাটি পুরনো হলেও বতর্মান সমাজে এই কথার উপযোগিতা এখনো শেষ হয়ে যায়নি। গ্রামীণ জনপদে এখনো এই অভিশাপ বয়ে বেড়াচ্ছে একশ্রেণির মানুষ। যার প্রধান শিকার সংশ্লিষ্ট নারী এবং তার পরিবার। বাল্যবিবাহ ঠেকানোর ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন নানা উদ্যোগ গ্রহণ করলেও কিংবা তৎপরতা দেখালেও প্রশাসনের ফঁাক গলে গ্রামেগঞ্জে প্রায়ই বাল্যবিবাহ ঘটনা ঘটছে। দরিদ্র পরিবারে এই প্রবণতা বেশি হলেও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারেও এর আধিক্য রয়েছে। তারা স্কুলগামী মেয়েদের অবলীলায় অতি উৎসাহে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। ফলে যে মেয়ে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখেছিল, তার সে স্বপ্ন মুহূতের্ ধূলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে। এর জন্য অভিভাবকদের রক্ষণশীল মানসিকতাও কম দায়ী নয়। এর পাশাপাশি দারিদ্র্য ও নিরাপত্তাহীনতাও রয়েছে। দারিদ্র্য ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে দেশে অধিকাংশ বাল্যবিবাহ সংঘটিত হয় বলে অভিজ্ঞজনেরা মন্তব্য করেছেন। আশার কথা, বাল্যবিবাহ বন্ধে একটি সাবর্জনীন আইন প্রণয়নের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে বলে জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি জানান, বাল্যবিবাহ বন্ধে প্রচলিত বতর্মান আইনকে যথাযথভাবে কাযর্কর করার জন্য সরকার নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মন্ত্রী আরও জানান, বাল্যবিবাহমুক্ত বাংলাদেশ গঠনের স্বাথের্ বিবাহ নিবন্ধনের সময় সংশ্লিষ্ট মুসলিম নিকাহ রেজিস্টার ও হিন্দু পুরোহিতগণকে বতর্মান প্রচলিত আইনের বিধি-বিধান যথাযথভাবে প্রতিপালনের জন্য নিদের্শ প্রদান করা হয়েছে। পাশাপাশি বাল্যবিবাহ নিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এটা সত্য, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের খবর আসছে। স্কুলে বাল্যবিবাহের কুফল, উত্ত্যক্তকরণ ও প্রজনন স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে পাঠদান করা হচ্ছে। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্য অজর্ন করেছে। ২০১৪ সালে ১৩ হাজার ৩৩৪টি, ২০১৫ সালে ১৫ হাজার ৭৭৫টি এবং ২০১৬ সালে ৬ হাজার ৩৮৯টি বাল্যবিবাহ বন্ধের ঘটনা ঘটেছে। এটা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। এ জন্য সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ। উল্লেখ্য, দেশে ৬০ থেকে ৬৬ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয় ১৮ বছরের আগে। এর ফলে তাদের মানসিক, শারীরিক, অথৈর্নতিক ও পারিবারিক সমস্যা দেখা দেয়। তার প্রভাব পড়ে সমগ্র জাতি ও রাষ্ট্রের ওপর। এ দেশের দরিদ্র পরিবার মনে করে মেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়ে লাভ নেই। যত দ্রæত বিবাহ দেয়া যায় ততই মঙ্গল। এতে পরিবারের ওপর থেকে চাপ কমে যাবে। তাদের এই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। কারণ বাল্যবিবাহের শিকার মেয়েটি অল্প বয়সে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে হয় মারা যায়, না হয় জন্মদান পরবতীর্ সময়ে অপুষ্টিতে ভুগে মৃতপ্রায় অবস্থায় জীবনযাপন করে। আবার অনেকেই স্বামীর ঘর করতে পারে না অত্যাচার-নিযার্তনের কারণে। দেখা যায় বাল্যবিবাহ হওয়ার কয়েকদিনের মাথায় স্বামীর পক্ষ থেকে যৌতুক দাবি করা হয়। সময়মতো যৌতুক না পেলে স্ত্রীকে পিটিয়ে বাপেরবাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়, কেউ কেউ মৃত্যুর শিকারও হয়। যাদের বাপেরবাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয় তারা পরিবারের বোঝা হয়ে থাকে। বাল্যবিবাহ যে অভিশাপ তখন ওই পরিবারটি উপলব্ধি করতে পারে। অথচ মেয়েকে আত্মনিভর্রশীল করে গড়ে তুলতে পারলে এই অবস্থার সৃষ্টি হতো না। অন্যদিকে নিরাপত্তার বিষয়টি অতীব গুরুত্বপূণর্। নিরাপত্তাহীনতার কারণে গ্রামাঞ্চলে অনেক মেয়ে বখাটে কতৃর্ক যৌন হয়রানি নিযার্তন অপহরণ ও ধষের্ণর শিকার হয়। কাউকে কাউকে মেরেও ফেলা হয়। সুতরাং স্থানীয় প্রশাসনকে এ ব্যাপারে কঠোর হতে হবে।