কোটা না রাখার সুপারিশ

সুষ্ঠু বাস্তবায়ন হোক

প্রকাশ | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষাথীর্ ও চাকরিপ্রত্যাশীদের আন্দোলন, পুলিশি হামলা, জনভোগান্তি এবং কয়েকটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা দেশব্যাপী আলোচনার শীষের্ ছিল। সে সময় দেশের বিশিষ্টজনরা অনেকেই কোটাপ্রথা সংস্কার জরুরি বলে মন্তব্য করে শিক্ষাথীের্দর আন্দোলনে সমথর্নও দিয়েছিলেন। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন। পরবতীের্ত কোটা সংস্কারে সরকার কমিটি গঠন করে। আর সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল যে, নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) সরকারি চাকরিতে কোনো কোটা না রাখার সুপারিশ করেছে সরকার গঠিত কমিটি। এ সংক্রান্ত কমিটির প্রতিবেদন সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জমা দিয়েছে কমিটি। মূলত এই কমিটি নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের সব পদে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের সুপারিশ করেছে। আমরা বলতে চাই, যেহেতু এই কমিটি নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের সব পদে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের সুপারিশ করেছে। ফলে এর সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরকেই। উল্লেখ্য, আন্দোলনকারীরা কমিটির এই সুপারিশকে ইতিবাচক বলেছেন। যদিও প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পযর্ন্ত আন্দোলন চলবে এমনটিও জানা গেছে। এ ছাড়া সুপারিশের বিষয়ে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, ‘কমিটি সুচিন্তিত মতামত দিয়েছে’ এ ছাড়া এই সুপারিশ দ্রæত বাস্তবায়ন করার বিষয়টিও তিনি উল্লেখ করেছেন। প্রসঙ্গত বলা দরকার, মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানিয়েছেন যে, এ বিষয়ে আইন বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়েছেন। তারা বলেছেন, এটা যেহেতু সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়, এটা আদালতের রায়কে স্পশর্ করবে না, কোনো সমস্যা হবে না। মানে কোনো কোটাই থাকবে না। আর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের কোটার বিষয়ে বলেছেন, ‘আমরা এগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখেছি, দেখেই বলেছি, এখন কোটা না থাকলেও চলতে পারবে।’ এ ছাড়া নিচের পদের কোটার বিষয়ে জানা গেছে, আগে যা ছিল তাই, এগুলো তাদের কমর্পরিধিতেও ছিল না। সুপারিশ-পরবতীর্ প্রক্রিয়ায় সম্পকের্ এমন বিষয় সামনে এসেছে যে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে। পরবতীর্ মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়তো আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে হবে। মন্ত্রিসভা পাস করলে প্রজ্ঞাপন জারি হবে। আমরা বলতে চাই, কোটা সংস্কারের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে যে সুপারিশের বিষয়টি সামনে এলো, এখন তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত হোক। লক্ষ্যণীয় যে, বতর্মানে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৫৫ শতাংশ নিয়োগ হয় অগ্রাধিকার কোটায়। বাকি ৪৫ শতাংশ নিয়োগ হয় মেধা কোটায়। সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান এই কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষাথীর্ ও চাকরিপ্রাথীর্রা দীঘির্দন ধরে আন্দোলন করে আসছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে সরকার। কমিটিতে সদস্য ছিলেন ছয়জন সচিব। কোটা সংস্কারের দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বজর্ন করে শিক্ষাথীর্ ও চাকরিপ্রত্যাশীরা দেশজুড়ে বিক্ষোভ-অবরোধসহ লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন আর তাদের দাবি ছিল, কোটার পরিমাণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। আর কোটায় প্রাথীর্ পাওয়া না গেলে মেধা তালিকা থেকে তা পূরণ করতে হবে। আমরা বলতে চাই, সময়ের পরিক্রমায় পরিস্থিতির পরিবতর্ন ঘটেছে। বিশ্বের সবর্ত্র এখন মেধাকে সবাির্ধক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আমাদের দেশেও প্রশাসনসহ সরকারি কমর্কাÐে দক্ষতা বাড়াতে মেধার প্রতি গুরুত্ব বাড়ানোর বিকল্প থাকা উচিৎ নয়। সঙ্গত কারণেই আমরা মনে করি, যেহেতু কোটা সংক্রান্ত সুপারিশের বিষয়টি সামনে আসছে, ফলে সংশ্লিষ্টদের কতবর্্য হওয়া দরকার পরবতীর্ প্রক্রিয়াগুলো যথাযথভাবে সম্পন্ন করে এর সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। সবোর্পরি বলতে চাই, বাংলাদেশের অথৈর্নতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়েছে। মাথাপিছু আয় বেড়েছে, দেশের অথার্য়নে বড় বড় অবকাঠামো নিমির্ত হচ্ছে। সুতরাং পরিস্থিতি পযের্বক্ষণ সাপেক্ষে দেশের সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে মেধার মূল্যায়ন জরুরি। ফলে কমিটির সুপারিশের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন হোক। যত দ্রæত সম্ভব এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবেÑ এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।