মানব উন্নয়ন সূচক : অগ্রগতির বাংলাদেশ

আশার কথা, মানুষের গড় আয়ু ও সাক্ষরতার হারে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। এখন মানুষের গড় আয়ু বাংলাদেশে ৭২.৮ বছর, ভারতে ৬৮.৮ বছর. পাকিস্তানে ৬৬.৬ বছর। অন্যদিকে সাক্ষরতার হারে বাংলাদেশ ৭২.৮%, ভারত ৬৯.৯%, পাকিস্তান ৫৭%। তবে মাথাপিছু আয় বাংলাদেশের অনেক কম। ইতিবাচক ও উজ্জ্বল দিক হচ্ছে, বাংলাদেশ অনেক দক্ষতার সঙ্গে তার আয়কে অন্য দেশের তুলনায় সামাজিক উন্নয়নে রূপান্তর করতে পেরেছে।

প্রকাশ | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

সালাম সালেহ উদদীন
বাংলাদেশের মানব উন্নয়ন সূচকে তিন ধাপ এগিয়েছে। ১৯৯০ থেকে পরবতীর্ ২৭ বছরে এ সূচকের মান বেড়েছে ২৭ শতাংশ। এটা বাংলাদেশের জন্য গৌরবজনক দিক। উল্লেখ্য, প্রতিটি দেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আয় ও সম্পদের উৎস, বৈষম্য, লৈঙ্গিক সমতা, দারিদ্র্য, কমর্সংস্থান, নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও আথির্কপ্রবাহ, যোগাযোগ, পরিবেশের ভারসাম্য ও জনমিতির তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রতিবছর মানব উন্নয়ন সূচক তৈরি করে (ইউএনডিপি) জাতিসংঘের এই সংস্থাটি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, নাগরিকদের প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল ৭২ দশমিক ৮ বছর; শিশুদের স্কুলে কাটানোর প্রত্যাশিত সময় গড়ে ১১ দশমিক ৪ বছর এবং মাথাপিছু আয় (জিএনআই) ৩ হাজার ৬৭৭ ডলার নিয়ে বাংলাদেশের এবারের এইচডিআই স্কোর হয়েছে শূন্য দশমিক ৬০৮। সূচকের অন্যান্য পরিসংখ্যানও সন্তোষজনক। আশার কথা, মানুষের গড় আয়ু ও সাক্ষরতার হারে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। এখন মানুষের গড় আয়ু বাংলাদেশে ৭২.৮ বছর, ভারতে ৬৮.৮ বছর. পাকিস্তানে ৬৬.৬ বছর। অন্যদিকে সাক্ষরতার হারে বাংলাদেশ ৭২.৮%, ভারত ৬৯.৯%, পাকিস্তান ৫৭%। তবে মাথাপিছু আয় বাংলাদেশের অনেক কম। ইতিবাচক ও উজ্জ্বল দিক হচ্ছে, বাংলাদেশ অনেক দক্ষতার সঙ্গে তার আয়কে অন্য দেশের তুলনায় সামাজিক উন্নয়নে রূপান্তর করতে পেরেছে। স্বাধীনতা লাভের ৪৭ বছর পর উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার যোগ্যতার স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বেরিয়ে আসার স্বীকৃতি পেল। এর ফলে জাতিসংঘের বিবেচনায় উন্নয়নশীল দেশের পথে যাত্রা শুরু করল বাংলাদেশ। এটি বাংলাদেশের একটি অনন্য অজর্ন। তবে চ‚ড়ান্তভাবে এই যোগ্যতা অজর্ন করতে আরও ছয় বছর উন্নতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। এরপর ২০২৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি মিলবে। এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের জন্য মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ সূচক এবং অথৈর্নতিক ভঙ্গুরতা সূচক এই তিনটির যে কোনো দুটি অজের্নর শতর্ থাকলেও বাংলাদেশ তিনটি সূচকের মানদÐেই উন্নীত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্ব, দীঘের্ময়াদি পরিকল্পনা, এমডিজি অজর্ন, এসডিজি বাস্তবায়নসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গসমতা, কৃষি, দারিদ্র্যসীমা হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, রপ্তানিমুখী শিল্পায়ন, ১০০টি বিশেষ অথৈর্নতিক অঞ্চল, পোশাকশিল্প, ওষুধশিল্প, রপ্তানি আয় বৃদ্ধিসহ নানা অথৈর্নতিক সূচকে উন্নতি ঘটেছে। এ ছাড়াও পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, ঢাকা মেট্রোরেলসহ দেশের মেগা প্রকল্পগুলো বতর্মান সরকারের সময়ের উদ্যোগ। বিশেষজ্ঞদের মতে কোনো দেশ এলডিসি থেকে বের হওয়ার পর বেশ কয়েকটি ধাপ রয়েছে। যে ধাপগুলো বাংলাদেশকেও তা অনুসরণ করতে হবে। আমরা আশা করছি বাংলাদেশ তা পারবে। কারণ বাংলাদেশ অপার সম্ভাবনাময় একটি দেশ। ১৯৭৫ সাল থেকে স্বল্পোন্নত দেশের অন্তভুর্ক্ত বাংলাদেশ। নানা প্রতিক‚লতা ও ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে এই পযাের্য় আসতে বাংলাদেশের ৪৩ বছর লেগেছে। অথচ পাকিস্তান তার আগের জায়গাতেই পড়ে রয়েছে। পাকিস্তান অনেক দিন থেকেই এলডিসিতে তিন থেকে চারের মধ্যে পড়ে আছে। আর বাংলাদেশ ছয়-এ ছিল। এখন সাতে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে এটা কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না। সাধারণত স্বল্পোন্নত দেশ অল্প সুদে কিংবা বিনা সুদে ঋণ পেয়ে থাকে। বিশেষ করে পৃথিবীর বহুদেশে গুরুত্বপূণর্ অনেক পণ্য বিনা শুল্কে রপ্তানি করা যায়। এতে ওই সব দেশে পণ্যের দাম কম থাকে। প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে বেশ সুবিধা পাওয়া যায়। বাংলাদেশও এই সুবিধা পেয়ে আসছিল। উল্লেখ্য, আমাদের রপ্তানি আয় ৩৪ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ২৭ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে ওই সুবিধা থেকে। জাতিসংঘের অথৈর্নতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের (ইকোসক) মানদÐ অনুযায়ী এ ক্ষেত্রে এই বছরে একটি দেশের মাথাপিছু আয় হতে হবে কমপক্ষে ১২৩০ মাকির্ন ডলার, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বতর্মানে ১৬১০ মাকির্ন ডলার। মানবসম্পদ সূচকে ৬৬ প্রয়োজন হলেও বাংলাদেশ অজর্ন করেছে ৭২.৯। অথৈর্নতিক ভঙ্গুরতা সূচক হতে হবে ৩২ ভাগ বা এর কম যেখানে বাংলাদেশের রয়েছে ২৪.৮ ভাগ। দেখা যাচ্ছে সব সূচকেই বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে। বিশ্ব ব্যাংকের বিবেচনায় বাংলাদেশ ২০১৫ সালের জুলাই মাসে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়। বাংলাদেশ এখন যোগ্যতা অজর্ন করল, ২০২৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উত্তরণ ঘটবে। স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের মযার্দা পাওয়ায় বাংলাদেশের সামনে যেমন নতুন সম্ভাবনা ও সুযোগ তৈরি হবে তেমনি নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হলে রপ্তানি আয়, বৈদেশিক ঋণ ও প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পরিবতর্ন আসার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে, বিশেষ তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা কমে যাওয়ার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে পোশাকশিল্পের ওপর। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে গামের্ন্ট ছাড়াও আরও অনেক রপ্তানি পণ্য তৈরি করতে হবে। শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হলে আগের মতো সহজ শতের্ বৈদেশিক ঋণ ও সাহায্য পাবে না বাংলাদেশ। ২০২১ সালে এক দফা পযের্বক্ষণের পর ২০২৪-এ জাতিসংঘের সাধারণ সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়নশীল দেশের মযার্দা পাবে বাংলাদেশ। একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উন্নয়ন এখন দৃশ্যমান। দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, বেড়েছে শিক্ষা ও সচেতনতার হার। অভ্যন্তরীণ অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। পরিকল্পিত অথৈর্নতিক কাযর্ক্রম, সামাজিক নিরাপত্তা কমর্সূচি যেমন, ভিজিডি, ভিজিএফ, জিআর, ওএমএস, টেস্ট রিলিফ, কাবিখা ইত্যাদি, সামাজিক ও অথৈর্নতিক স্থিতিশীলতা, জিডিপি প্রবৃদ্ধির উচ্চ হার, বাংলাদেশের অনন্য অজর্ন। গ্রামীণ এলাকায় সড়ক ও জনপথের ব্যাপক উন্নয়ন এবং সংযুক্তি, গ্রামীণ অকৃষি কমর্সংস্থান, প্রবাসী আয় অব্যাহতভাবে বাড়া ও ব্যাপক বিদ্যুতায়নসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নের কারণেই দেশের এই সাফল্য এসেছে। ১০ বছরের তুলনায় প্রবাসী আয় বেড়েছে প্রায় চারগুণ। তথ্য মতে, ২০০৮-০৯ অথর্বছর থেকে বিদায়ী ২০১৭-১৮ অথর্বছর পযর্ন্ত ১০ অথর্বছরে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৩ হাজার ১৮৫ কোটি ৬২ লাখ ডলার। যে করেই হোক এই অগ্রগতি ধরে রাখতে হবে। এ কথা সত্য, স্বাধীনতার পরে যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ পুনগর্ঠনে অনেক বেগ পেতে হয়। স্বাধীনতার পরপরই দুভিের্ক্ষর কবলে পড়ে দেশ। ভঙ্গুর অথর্নীতি নিয়ে যাত্রা শুরু হয় একটি স্বাধীন দেশের। এ সময় বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে তিরস্কার করেছিল বিশ্বের অনেক দেশই। যুক্তরাষ্ট্র বলেছিল তলাবিহীন ঝুড়ি। আর এখন স্বাধীনতার ৪৭ বছরে বাংলাদেশ আর তলাবিহীন ঝুড়ি নেই। ১৯৭১ সালে দেশে ৬০ ভাগ খাদ্য উৎপাদিত হতো। বাকি খাদ্য আমদানি করতে হতো। আর এখন বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূণর্। আগের মতো মানুষ আর না খেয়ে মরে না। উপরন্তু তারা সঞ্চয় করতে শিখেছে। আমাদের যা কিছু অজর্ন তা আমাদেরই চেষ্টা আর সংগ্রামের ফল। আথর্-সামাজিক ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার যোগ্যতা অজর্ন করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে। বাংলাদেশের জনগণের যে কমোর্দ্দীপনা সংগ্রাম ও বেঁচে থাকার স্বপ্ন, এই সম্মিলিত প্রচেষ্টাই আমাদের আজকের সাফল্য। আজ আমরা যে জায়গায় এসে দঁাড়িয়েছি এটা একাত্তরে স্বাধীনতা অজর্ন করতে না পারলে কিছুতেই সম্ভব হতো না। নানা সংকট আর সীমাবদ্ধতার মধ্যে, দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে পায়ে পায়ে অনেক পথ পেরিয়ে এসেছি আমরা। আমাদের স্বপ্ন ছিল, এ দেশের মানুষ যাতে না খেয়ে কষ্ট না পায়, আমাদের দেশের মানুষ যাতে অশিক্ষিত না থাকে, তার ব্যবস্থা করা। আমরা ধীরে ধীরে সেদিকে অগ্রসর হচ্ছি। বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে এই আশাবাদ দেশের সচেতন মানুষের। আমাদের ২০৪১ সালের মধ্যে দঁাড়াতে হবে উন্নত দেশের কাতারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। বিদেশ থেকে যারাই এ দেশে বেড়াতে আসেন, প্রত্যেকেই এ দেশ দেখে মুগ্ধ হন। এ দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দযর্, মানুষের মন হরণ করা ব্যবহার, অতিথিপরায়ণতা এবং আহার-বিহার সবই নজরকাড়া। সবদিক দিয়েই পরিপূণর্ এ বাংলা। বাংলার সম্পদ, এর সবুজ-শ্যামলী, নদ-নদী, পাহাড়-হ্রদ-জলের প্রপাত, সমুদ্রের ঢেউয়ের গজর্ন সবই সৃষ্টিকতার্র অশেষ দান। এমন একটি দেশ এগিয়ে যাবেই। সাফল্যের পাশাপাশি কিছু নেতিবাচক দিকের প্রতিও আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে। খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশের শীষের্ বাংলাদেশ। বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের হার ৯.৩১% চিনে ১.৭০% ভারতে ৯.৩০% আর ফিলিপাইনে ১.৯০%। এ ছাড়া বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। বিবিএসের জরিপে বতর্মানে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৭ লাখ। কমর্ সংস্থানের দিকে সরকারকে বিশেষ নজর দিতে হবে। কারণ দেশে যেভাবে শিল্পায়ন হওয়ার কথা ছিল ঠিক সেভাবে হয়নি। ব্যাংকিং খাতে লুটপাট বন্ধ করা যায়নি। অথৈর্নতিক ঝুঁকির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ জাতিসংঘের সন্তুষ্টি অজর্ন করলেও দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে আমরা আশানুরূপ জায়গায় পৌঁছতে পারিনি। তবে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সাড়া পাওয়া যাবে। পাশাপাশি উদ্বেগের বিষয়ও রয়েছে, সম্প্রতি প্রকাশিত একটি বৈশ্বিক প্রতিবেদনেও উদ্বেগের এই তথ্য উঠে এসেছে। মাকির্ন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ওয়েলথ-এক্স এর মতে, গত পঁাচ বছরে ১৭ শতাংশ হারে বাংলাদেশে ধনকুবেরের সংখ্যা বেড়েছে। ওয়াল্ডর্ আলট্রা ওয়েলথ রিপোটর্-২০১৮ শীষর্ক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অবস্থান ‘আশ্চযর্জনক’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে সংস্থাটি। বিষয়টি নিয়ে চিন্তার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ‘ওয়াল্ডর্ ইকোনমিক ফোরাম’-এর (ডাবিøউইএফ) তালিকা অনুযায়ী, লিঙ্গসমতার ক্ষেত্রে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন দ্বিতীয়। আর পুরো বিশ্বের মধ্যে অবস্থান ৪৭তম। বিবিএসের খানা আয়-ব্যয় জরিপ-২০১৬ অনুযায়ী, ২০১০ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে দেশে সবচেয়ে ধনী ৫ শতাংশ পরিবারের আয় প্রায় ৫৭ শতাংশ বেড়েছে। তাদের মাসিক আয় দঁাড়িয়েছে ৮৮ হাজার ৯৪১ টাকায়। বিপরীতে একই সময় সবচেয়ে দরিদ্র ৫ শতাংশ পরিবারের আয় কমেছে ৫৯ শতাংশ। তাদের মাসিক আয় দঁাড়িয়েছে ৭৩৩ টাকায়, যা ২০১০ সালে ১ হাজার ৭৯১ টাকা ছিল। এই তথ্য হতাশাজনক। বাংলাদেশে দুনীির্তর বিপজ্জনক বিস্তার এবং পুঁজির অসম বিকাশের কারণে ধনিক শ্রেণির সংখ্যা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং গরিব আরও গরিব হচ্ছে। ব্যাপকভাবে বাড়ছে আয় বৈষম্য। এই বিষয়টিও রাষ্ট্রকে নজরে আনতে হবে। বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নিধার্রণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই সম্ভাবনার পূণার্ঙ্গতা পাবে বা পুরোপুরি বাস্তবায়ন ঘটবে তার শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি, শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন প্রচেষ্টা, নারীর অধিকার সংরক্ষণ, মানবিক মূল্যবোধের ও সামাজিক অবক্ষয় রোধ এবং দেশে রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলাসহ সংসদীয় গণতন্ত্রের বিকাশ ও প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করার মধ্যদিয়ে। দারিদ্র্যদূরীকরণ ও দেশ থেকে দুনীির্তর মূলোৎপাটন করে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। বাংলাদেশ যখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পেঁৗছেছে তখন এ দেশের পক্ষে অনেক কিছুই সম্ভব। আমাদের আথর্-সামাজিক পরিবতের্নর সঙ্গে সঙ্গে মানসিকতার পরিবতর্নও দরকার। মানসিকভাবেও আমার উন্নত হতে হবে। বাংলাদেশ আর কারও দয়ায় ও অনুগ্রহে চলবে না। একটি আত্মনিভর্রশীল দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দঁাড়াবে। জয় আমাদের হবে-ই। সালাম সালেহ উদদীন: কবি, কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক ও কলাম লেখক