মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক

বৈষম্য কমাতেও উদ্যোগ জরুরি

প্রকাশ | ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
দেশের মানুষের গড় আয় বাড়ছে। গত বছরের ১ হাজার ৬১০ ডলার থেকে এ বছর গড় আয় উন্নীত হয়েছে ১ হাজার ৭৫১ ডলারে। অথার্ৎ গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের মাথাপিছু আয় বেড়েছে ১৪১ ডলার। এ ছাড়া জিডিপি প্রবৃদ্ধি টানা তিন বছর ধরে ৭ শতাংশের বেশি। ২০১৭-১৮ অথর্বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অজির্ত হয়েছে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। গত মঙ্গলবার একনেকের নিবার্হী পরিষদের বৈঠক শেষে এসব তথ্য জানান পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি এবং মাথাপিছু আয়ের ঊধ্বর্গতি খুবই আশাপ্রদ খবর। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে মাথাপিছু আয় ও মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধি রেকডর্ পরিমাণে অজির্ত হয়েছে বতর্মান সরকার আমলে। এমন অজর্ন সরকারের মুকুটে সাফল্যের পালক যোগ করেছে। এ জন্য সরকারের অভিনন্দন প্রাপ্য। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অথর্বছরের বাজেটের আগে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাময়িক হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ হয়েছিল। বাস্তবে যা বেড়ে হয়েছে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। ফলে জিডিপির আকার বেড়ে দঁাড়িয়েছে ২২ লাখ ৫০ হাজার ৪৭৯ কোটি টাকায়। দেশ স্বাধীনের প্রথম ৩৪ বছরে জিডিপি ছিল ১০০ বিলিয়ন মাকির্ন ডলার, যা বতর্মানে উন্নীত হয়ে ২৭ হাজার ৪১১ কোটি ডলারে দঁাড়িয়েছে। মূলত, জিডিপির প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির কারণেই মানুষের গড় মাথাপিছু আয়ও বেড়েছে। গুরুত্বপূণর্ ৩টি খাত কৃষি, শিল্প ও সেবা খাত ধরেই জিডিপি গণনা করা হয়। বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী, গত অথর্বছরে শিল্প খাতে সবচেয়ে বেশি ১২ দশমিক ০৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কৃষি খাতে ৪ দশমিক ১৯ আর সেবা খাতে ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। জনগণের সবের্মাট ব্যক্তিগত আয়কে জনপ্রতি ভাগ দিয়ে মাথাপিছু আয় নিধার্রণ হয়ে থাকে। তবে প্রকট বৈষম্যের এ সমাজে মাথাপিছু আয়বৃদ্ধির সুফল সবাই পাচ্ছেন কি-না, সেটা বড় প্রশ্ন। বিশ্লেষকদের মতে, মাথাপিছু আয় বাড়লেও ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করেছে। ধনীরা সম্পদের পাহাড় গড়লেও সুযোগ-সুবিধার অভাবে দরিদ্ররা দরিদ্রই থেকে যাচ্ছে। সামাজিক বৈষম্যের এই দুষ্টচক্র ভাঙতে না পারলে সংকট আরও তীব্র হতে পারে, এমন সতকর্তাও রয়েছে বিশ্লেষকদের। একদিকে দারিদ্র্য কমছে, অন্যদিকে ধনী-গরিবের মধ্যে আয়ের ক্ষেত্রে বৈষম্য বাড়ছে। এটি খুবই উদ্বেগের বিষয়। মূলত সম্পদের অসম বণ্টন এবং অবৈধ আয়ের উৎসের কারণে আয় বৈষম্য প্রকট হচ্ছে। মাথাপিছু আয়ের ঊধ্বর্গতির সুফল সমাজের সবর্স্তরের মানুষের মধ্যে পেঁৗছে দেয়ার জন্য ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য কমিয়ে আনতে উদ্যোগ নেয়ার প্রতি জোর দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। এ জন্য ঘুষ, দুনীির্ত, কর ফঁাকির মতো বিষয়গুলো কঠোরভাবে প্রতিরোধ করার ওপরও গুরুত্বারোপ করতে হবে। দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা গেলে ঘুষ, দুনীির্ত কমে আসবে বলেও মনে করা অযৌক্তিক নয়। বতর্মান সরকার যে দারিদ্র্য বিমোচনে তৎপর সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। নানা বাধা-বিপত্তি সত্তে¡ও অথর্নীতির ক্ষেত্রগুলোতে উন্নতির ধারা অব্যাহত আছে। জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধিসহ কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো, বাণিজ্য, বৈদেশিক আয় ইত্যাদি খাতেও ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। তথ্য অনুযায়ী, জিডিপির অনুপাতে বিনিয়োগ এখন ৩১ দশমিক ২৩ শতাংশ। এর মধ্যে বেসরকারি বিনিয়োগ ২৩ দশমিক ২৬ শতাংশ। ২০১৬-১৭ অথবর্ছরে জিডিপির অনুপাতে বেসরকারি বিনিয়োগ ছিল ৩০ দশমিক ৫১ শতাংশ। এ ছাড়া গত অথবর্ছরে জিডিপির অনুপাতে সরকারি বিনিয়োগ ৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ। আর ২০১৭-১৮ অথবর্ছরে এর অংশ ছিল ৭ দশমিক ৪১ শতাংশ। অপরদিকে মানুষের সচেতনতাও বেড়েছে আগের তুলনায়। মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পথে হঁাটছে দেশ। প্রত্যাশা থাকবে, অথৈর্নতিক অগ্রগতির এই ধারা অব্যাহত থাক। সবোর্পরি বলতে চাই, সংশ্লিষ্টরা যেহেতু বলছেন জিডিপির অনুপাতে বেসরকারি বিনিয়োগে বতর্মানে খুব বেশি অগ্রগতি নেই। এখনো সরকারি বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধিই প্রধান চালিকাশক্তি। সেহেতু আমরা মনে করি, বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর কৌশলপত্রও প্রণয়ন জরুরি। গড় আয় বৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক হলেও এর পাশাপাশি জরুরি হচ্ছে, বৈষম্য বিলোপে টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন। বৈষম্য নিরসন সম্ভব হলেই মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির শতভাগ সুফল দেশবাসী পেতে পারে বলে আমরা মনে করি; যা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকেই।