ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন

অপপ্রয়োগ রোধ করতে হবে

প্রকাশ | ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
জাতীয় সংসদের ভেতর-বাইরে বিভিন্ন পক্ষের আপত্তি, উদ্বেগ ও মতামতকে উপেক্ষা করে শেষ পযর্ন্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস করা হয়েছে। তথ্য মতে, বুধবার জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের আপত্তির মুখে বিলটি পাস হয়। উল্লেখ্য, গত ২৯ জানুয়ারি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া অনুমোদন করেছিল মন্ত্রিসভা। তখন থেকে এই আইনের বেশ কয়েকটি ধারা নিয়ে সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পক্ষ আপত্তি জানিয়ে আসছিল। এমনকি সম্পাদক পরিষদ এই আইনের ৮টি (৮,২১, ২৫,২৮, ২৯,৩১, ৩২ ও ৪৩) ধারা নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আপত্তি জানিয়েছিল। এ ছাড়া ১০টি পশ্চিমা দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক‚টনীতিকরা এই আইনের ৪টি ধারা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ৯টি ধারা পুনবিের্বচনার আহŸান জানিয়েছিল। এ ক্ষেত্রে আমরা উল্লেখ করতে চাই, আপত্তির মুখে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে। এই প্রেক্ষাপটে ৯ এপ্রিল বিলটি পরীক্ষার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠায় সংসদ। সাংবাদিকদের তিনটি সংগঠন সম্পাদক পরিষদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) এবং অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনাসের্র প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বিলটি নিয়ে দুই দফা বৈঠক করে সংসদীয় কমিটি। প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার আশ্বাসও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পযর্ন্ত আইনে বড় কোনো পরিবতর্ন আনা হয়নি বলেই প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে। আর যে ধারাগুলো নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের আপত্তি ছিল, তার কয়েকটিতে কিছু জায়গায় ব্যাখ্যা স্পষ্ট করা, সাজার মেয়াদ কমানো এবং শব্দ ও ভাষাগত কিছু সংশোধনী আনা হয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই আইনে বলা হয়েছে, আইনটি কাযর্কর হলে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা বাতিল হবে। তবে এই আইনটিতেই বিতকির্ত ৫৭ ধারার বিষয়গুলো চারটি ধারায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা হয়েছেÑ এমন বিষয় সামনে এসেছে। এ ছাড়া পুলিশকে পরোয়ানা ও কারও অনুমোদন ছাড়াই তল্লাশি ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এই আইনে ঢোকানো হয়েছে ঔপনিবেশিক আমলের সমালোচিত আইন ‘অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট’। আইনের ১৪টি ধারার অপরাধ হবে অজামিনযোগ্য। বিশ্বের যে কোনো জায়গায় বসে বাংলাদেশের কোনো নাগরিক এই আইন লঙ্ঘন বা এমন অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে এই আইনে বিচার করা যাবে। প্রসঙ্গত আমরা বলতে চাই, আইনটি পাসের পর বিশিষ্টজনদের প্রতিক্রিয়াতে উদ্বেগ লক্ষ্য করা গেছে। সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেছেন, মুক্ত সংবাদিকতার ক্ষেত্রে এক ভয়ঙ্কর বাধা। এমনকি একাডেমিক গবেষণার ক্ষেত্রেও এই আইন বিঘœ সৃষ্টি করবে বলে তিনি মনে করেন। টিআইবির নিবার্হী পরিচালক, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে সব নাগরিকের বাক্স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতের সাংবিধানিক অঙ্গীকার ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী বলে মনে করছেন। এ ছাড়া বিরোধী দলের সদস্যদের বক্তব্যে উদ্বেগ প্রকাশ পেয়েছে। বিরোধী দলের সদস্য ফখরুল ইমাম বলেছেন, অংশীজনদের আপত্তি ও বিতকির্ত ধারাগুলো অপরিবতির্ত রেখে সংসদীয় কমিটির প্রতিবেদন চ‚ড়ান্ত করা খুবই উদ্বেগজনক। বিরোধী দলের সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেছেন, সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে মতামত ও চিন্তার স্বাধীনতার যে কথা বলা হয়েছে, এই আইন হবে তার সঙ্গে সাংঘষির্ক। সবোর্পরি আমরা বলতে চাই, আইনটি কাযর্কর হলে ৫৭ ধারা বাতিল হবে, কিন্তু এই আইনটিতেই বিতকির্ত ৫৭ ধারার বিষয়গুলো চারটি ধারায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা হয়েছে বলেই প্রকাশিত খবরে উঠে এসেছে, পুলিশকে পরোয়ানা ও কারও অনুমোদন ছাড়াই তল্লাশি ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। ফলে আইনের অপপ্রয়োগ যেন না হয় সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদের। এটা মনে রাখা দরকার, আইনের অপ্রয়োগ অত্যন্ত আশঙ্কাজনক বাস্তবতাকে নিদের্শ করে যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।