পাঠক মত

স্বণাির্ল ইতিহাস ভোলা স্বাথির্সদ্ধির বাংলাদেশ থেকে আমরা ফিরব কবে?

প্রকাশ | ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

আশরাফুল ইসলাম সাইম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় লাভ করার পর এগোতে এগোতে আমরা আজ ২০১৮-তে এসে পেঁৗছেছি। তবুও কেন প্রশ্ন যে আমরা ফিরব কবে? আসলেই কি ফেরাটা খুব দরকার? যুদ্ধে জয় লাভ বা স্বাধীন রাষ্ট্র হওয়ার পর অন্য কোনো দেশ আমাদের মতো এত মুখ থুবড়ে পড়েছে কিনা আমার জানা নেই। স্বাধীনতার আজ ৪৭ বছর পেরিয়েও আমরা কি সত্যিই পুরোপুরি স্বাধীন? আমাদের দেশের একটি প্রধান সমস্যা হলো গুণের কদর না করতে পারা। স্বাধীনতার এত দিন পরেও আমাদের এমন কিছুই নেই যা নিয়ে আমরা বিশ্বদরবারে নিজেদের মেরুদÐ উঁচু করে দঁাড়াতে পারি। আজ একমাত্র ক্রিকেট দল, তাও উত্তম পরিচচার্র অভাব পরিলক্ষিত হয় বারবার। অন্যদিকে ফুটবল দল। আজ কোথায়? কালের বিবতের্ন যেন হারিয়ে গেছে। দিনকে দিন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) অবহেলা এবং অপরিচচার্য় ফুটবল না যেন একদিন মিথ হয়ে দঁাড়ায়। সাহিত্যে আমাদের একটা স্বণর্যুগ। সাহিত্যের এক গভীর সম্পকর্ ভাষার সঙ্গে। আর বাংলাদেশে পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর ভাষার একটি। ভাষা যে মধুর, তার সবচেয়ে বড় নিদশর্ন বোধহয় আমাদের সাহিত্য। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, বিভ‚তিভ‚ষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বিনয় মজুমদার, প্রমথ চোধুরী, বুদ্ধদেব গুহ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার, জহির রায়হান, আবু ইসহাকরা আজ কোথায়? সাহিত্যের স্বণাির্ল যুগের সে অলঙ্কাররা কোথায়? আহমদ ছফা, আবুল হাসান, হুমায়ূন আহমেদ, সুফিয়া কামাল, বেগম রোকেয়ারাও আজ আর নেই। নতুন করে সাহিত্যের বীজ আর রোপিত হয়নি। তাই হয়তো আমরা এখন আর কোনো ফলবান গাছ পাই না সাহিত্যে। কিন্তু একটি দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদের একটি যে তার সাহিত্য, শুধু সাহিত্য পিছিয়ে যাওয়ার ফলেই পশ্চিমাদের চেয়ে শত শত বছর পিছিয়ে আমরা তা কে বোঝাবে। আগের মতো সাহিত্যের লালন আর করা হয় না। একটি দেশ বঁাচে তার বতর্মানে। ইতিহাসকে পঁুজি করে। আমাদের ইতিহাস অনেক অনেক উন্নত হওয়ার পর ও আমাদের মধ্যে তার কোনো চচার্ নেই। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন। শুধু ভাষার জন্য প্রাণ দেয়ার ইতিহাস পৃথিবীতে আর নেই। আমরা আমাদের ভাষাকে কতটা ভালোবাসি যার জন্য নিজের জীবন দিতেও এটুকুন কুণ্ঠাবোধ করিনি। ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, যা আমাদের দেশকে স্বাধীনতার দিকে ঠেলে দিয়েছিল পূণর্ভাবে। এবং ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ। আমাদের নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, রক্ত আর সম্ভ্রমের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীনতা, যাকে পুঁজি করে রোজ সকালে আমরা গাই, ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।’ ইতিহাস নিয়ে লেখালিখি করার মানুষ বাংলাদেশেই খুবই কম। তার মধ্যে দলীয়করণে বেশিরভাগই বিকৃত হওয়ার পর তা বাদ দিয়ে যা গ্রহণযোগ্য তা পড়ার জন্য পাঠক নেই। যে দেশে আগে প্রতি সন্ধ্যায় চায়ের সঙ্গে ঝড় উঠত সাহিত্যালাপের, দেশের প্রতিটি স্থানে হতো সাহিত্য নিয়ে কথা, সে দেশ আজ শুধুই ডুবে আছে রাজনীতিতে। রাজনীতি একটি দেশের অবশ্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূণর্ অধ্যায়, কিন্তু দেশের শিক্ষিত সমাজের যদি স্বপ্ন হয়ে ওঠে রাজনীতিবিদ হওয়া। অন্য সবকিছুকে ছাপিয়ে স্বাথির্চন্তা যদি মাথার মধ্যে পাকাপাকিভাবে স্থান করে নেয়, তবে সে দেশ মুখ থুবড়ে পড়বে বারবার, এই তো স্বাভাবিক। আমাদের সিনেমা আজ কোথায়। বাংলা সিনেমার স্বণাির্ল যুগ আর নেই। রুপালিপদার্য় আজ আর নেই সেই তেজ। বাংলাভাষার সিনেমার কথা বলতে গেলে পশ্চিমবঙ্গ কিছুটা সম্মান ধরে রাখতে পারলেও বাংলাদেশে নেই তার মান। পাঠকের মতো দশর্ক রুচিও পেঁৗছে গেছে একেবারেই নিম্নস্তরে। ব্যবসায়িক সিনেমার গ্যঁাড়াকলে আটকে গেছে ভালো সিনেমা। সিনেমাওয়ালাদের উদ্দেশ্য আটকে গেছে অথোর্পাজের্ন। তাই নিয়ম করে অথোর্পাজর্ন হলেও মাথা উঁচু করে দঁাড়াতে পারছে না সিনেমা। আমাদের পাশ্বর্বতীর্ দেশের দিকে তাকালেই স্পষ্ট করে দেখা যায় তাদের সিনেমাভাবনা। সিনেমাকে তারা একটি অন্যপযার্য় নিয়ে গেছে। তারা বুঝছিল যে, ইতিহাস না জেনে একটি জাতিকে কখনো সোজা করে দঁাড় করানো যাবে না। সুখের ইতিহাস, কষ্টের ইতিহাস, জয়ের ইতিহাস, হারার ইতিহাস, বেদনার ইতিহাস সব জানাতে হবে। কিন্তু ইতিহাস জানবে কীভাবে? ইতিহাস নিয়ে লেখে না তো তেমন। আর লিখলেও পাঠক তা গিলছে না। তবে পাঠকের তুলনায় দশের্কর পরিমাণ অনেক অনেক গুন বেশি। তাই তারা সিনেমার মাধ্যমেই মানুষের মনে ইতিহাস ঢুকিয়ে দেয়া কাজ ছিল। প্রতিবছর তাদের সিনেমার দিকে তাকালেই দেখা যায় এক-তৃতীয়াংশ সিনেমা হচ্ছে ইতিহাসনিভর্র। ইতিহাসের কোনো উল্লেখযোগ্য ঘটনা, আসলেই যা জানা উচিত সবার তার ওপর নিভর্র করে বানানো হচ্ছে সিনেমা, যার ফলে ইতিহাস জানছে মানুষ। অনুপ্রাণিত হচ্ছে দিনকে দিন। জীবনমুখীর সিনেমার নিমার্ণ, প্রচার, প্রসার চলছে নিয়ম করে। কিন্তু আমাদের দেশে সিনেমাওয়ালা কই। জহির রায়হানের মতো সাহসী পরিচালক তো চিরুনি অভিযানেও খুঁজে পাওয়া যায় না। মিশুক মুনীর, তারেক মাসুদরা সে পথে এগিয়েছেন কিছুদূর। কিন্তু জীবনপ্রদীপ থমকে গিয়েছে তাদের। তবে এ সিনেমা ধরবে কে? যদিও কিছু পরিচালক সাহস করে এগোতে চায়, কিন্তু প্রযোজনার অভাবে তারাও হারিয়ে যায়। মান যেখানে তুচ্ছ, আয়ের ইচ্ছাই যেখানে মুখ্য সেখানে ভালো কাজ পালিয়ে বেড়ায়, হারিয়ে যায়। একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে মেরুদÐ উঁচু করে বিশ্ব দরবারে দঁাড়াতে হলে আমাদের সবার আগে মনকে স্বাধীন করতে হবে। ব্যক্তিগত স্বাথের্ক তুচ্ছজ্ঞান করে যদি কোনোদিন দেশের স্বাথের্ক মুখ্য করতে পারি সেদিন থেকে আমাদের দেশ সত্যিকারের স্বাধীন হবে, আমরা মুক্তি পাবো। আমরা সেদিন সঠিক পথে ফিরতে পারব।