শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাভাবিকের চেয়ে ৬ গুণ বেশি বায়ুমান

দূষণ রোধে পদক্ষেপ নিন
নতুনধারা
  ১২ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

কিছুতেই যেন নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না দেশের বায়ুদূষণ পরিস্থিতি। যা স্বাভাবিকভাবেই অত্যন্ত আশঙ্কাজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, আবারও চরম অস্বাস্থ্যকর মাত্রায় পৌঁছেছে ঢাকার বায়ুমান। রোববার সকাল থেকে স্বাভাবিকের তুলনায় ৬ গুণ বেশি দূষিত বায়ুগ্রহণ করতে হচ্ছে রাজধানীবাসীকে! যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বায়ুমান যাচাইয়ের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এয়ার ভিজুয়াল একিউআইর বায়ুমান সূচক অনুযায়ী, ১০ জানুয়ারি ২০২১ সকাল ১০টা ২০ মিনিটের তথ্যে জানা যাচ্ছে, ঢাকায় বায়ুদূষণের মাত্রা হচ্ছে গড়ে ৪৩৯। এ ক্ষেত্রে মনে রাখা দরকার, এর আগে ২১ নভেম্বর ঢাকায় সর্বোচ্চ বায়ুদূষণের মাত্রা ছিল ৩১৫। যেটা দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত নগরীর তালিকায় এক নম্বরে উঠে এসেছিল ঢাকা। সে থেকে ক্রমাগত বায়ুদূষণের মাত্রা শুধু বাড়ছেই। যার সর্বশেষ পরিস্থিতি গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫০-এর কাছাকাছি। সঙ্গত কারণেই রাজধানী ঢাকার বায়ুমান আমলে নিতে হবে এবং এ ভয়াবহ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়।

বলার অপেক্ষা রাখে না, এর আগে রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণসংক্রান্ত কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন- পুরানো যানবাহনের আধিক্য, অপরিকল্পিতভাবে শহরের যেখানে-সেখানে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও উন্নয়ন কাজ, শহরের আশপাশের ইটভাটা ও শিল্প কলকারখানার দূষণ। শহরের ভেতরে যে ময়লা-আবর্জনা জমে সেগুলো পোড়ানোর ধোঁয়া- এসব কারণেই বায়ুদূষণ হচ্ছে। ফলে এ বিষয়গুলো আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়নে কাজ করা। উলেস্নখ্য, এয়ার ভিজুয়ালের একিউআই সূচকে ঢাকার প্রতি ঘনমিটার বাতাসে সূক্ষ্ণ ধূলিকণার (পিএম ২.৫) উপস্থিতি পাওয়া গেছে ৩৭৯.৪ মাইক্রোগ্রাম। যা মানবস্বাস্থ্যের জন্য চরম হুমকি বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি আমেল নিয়ে দ্রম্নত প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।

উলেস্নখ্য, ঢাকার মধ্যে আবার সবচেয়ে বেশি দূষিত এলাকা হচ্ছে এখন বারিধারা-আমেরিকান অ্যাম্বাসির কাছাকাছি এলাকা। যেখানে বায়ুমান পাওয়া গেছে ৫০০'রও বেশি। আর তথ্য মতে, বিশ্বর্ যাংকিংয়ে ঢাকার অবস্থান প্রথম। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা নেপালের কাঠমান্ডুর সূচকের চেয়ে ঢাকার মাত্রা দ্বিগুণেরও বেশি। কাঠমান্ডুর একিউআই মাত্রা হচ্ছে মাত্র ১৯৫। তৃতীয় স্থানে আফগানিস্তানের কাবুল, তাদের বাতাসের মান ১৭৭ একিউআই এবং পাকিস্তানের লাহোরের বাতাসের মানও ১৭৭ একিউআই।

\হআমরা বলতে চাই, এয়ার ভিজুয়াল বাতাসের মানকে মোট ৬টি স্কেলে পরিমাপ করে থাকে। এগুলো হচ্ছে- গুড, মডারেট, আনহেলদি ফর সেনসেটিভ গ্রম্নপস, আনহেলদি, ভেরি আনহেলদি এবং হেজার্ডাস (বিপজ্জনক)। ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রাকে হেজার্ডাস বলেই অভিহিত করা হয়েছে। ফলে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার এ বিপজ্জনক পরিস্থিতি আমলে নেওয়া। এখনই এ দূষণ কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে আগামী তিন মাসে ঢাকার পরিস্থিতি হবে আরও ভয়াবহ হবে এমন আশঙ্কাও আলোচনায় এসেছে। এছাড়া এমন তথ্যও উঠে আসছে যে, মোট ৬টি উৎস থেকে ঢাকায় বায়ুদূষণের মাত্রা মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। এছাড়া আগে মনে করা হতো ইটভাটার কারণে বায়ুদূষণ বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে ঢাকায় স্ট্রিট বেজড বায়ুদূষণের মাত্রাই বেশি- এ বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, বায়ুদূষণের ভয়াবহতা এড়ানোর সুযোগ নেই। এর আগেও এমন খবর সামনে এসেছে যে, বায়ুদূষণজনিত রোগে দেশে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। চিকিৎসকরাও বলেছেন, বায়ুদূষণজনিত রোগ বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে আরও উদ্বেগের বিষয় হলো- এতে বেশি ঝুঁকির শিকার গর্ভবতী মা ও শিশুরা। অটিস্টিক শিশুর জন্ম হওয়ার একটি কারণও দূষিত বায়ু। বাচ্চাদের জন্মকালীন ওজন কম হওয়ার একটি কারণও বায়ুদূষণ। আবার বায়ুদূষণের কারণে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়। সঙ্গত কারণেই বায়ুদূষণ রোধে সর্বাত্মক উদ্যোগ নিতে হবে। ভুলে যাওয়া যাবে না, বায়ুদূষণের কারণে বাচ্চাদের স্বল্প ও দীর্ঘস্থায়ী রোগব্যাধি হয়। বায়ুদূষণের ফলে ফুসফুসে ক্যান্সার, হৃদরোগ, লিভার ও কিডনিতে জটিলতা বাড়তে পারে এমন বিষয়ও এর আগে খবরে উঠে এসেছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে দ্রম্নত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে