বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষিত বেকার বাড়ছে

কর্মসংস্থানে গুরুত্ব দিতে হবে
নতুনধারা
  ১২ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

করোনাকালে দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়েছে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ প্রায় বন্ধ থাকায় শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনাকালের আগে সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) গবেষণায় দেশে মাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীদের এক-তৃতীয়াংশ বেকার বলে যে তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। করোনাকালে এই বেকারের সংখ্যা আরো বেড়েছে। স্নাতক ডিগ্রিধারী বেকার প্রায় ৩৭ শতাংশ। স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী বেকার ৩৪ শতাংশ। এ ছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাস করা তরুণ-তরুণীর মধ্যে বেকারের হার যথাক্রমে ২৭ ও ২৮ শতাংশ। অর্থাৎ, বাংলাদেশে যার শিক্ষার ডিগ্রি যত বড়, তার বেকার হওয়ার বা থাকার আশঙ্কাও তত বেশি। দেশে শিক্ষার হার বাড়ছে, এটি আনন্দের খবর। কিন্তু সেই আনন্দ মুহূর্তে হাওয়ায় মিলিয়ে যায়, যখন তাদের বড় একটি অংশই বেকার অবস্থায় থাকে। দেশের ভবিষ্যতের জন্য এ অবস্থা অত্যন্ত ভীতিকর।

আমরা জানি, জাতিসংঘ উন্নয়ন সংস্থা (ইউএনডিপি) এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মানব উন্নয়ন সূচক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বর্ধিত জনসংখ্যাকে সম্পদ হিসেবে অভিহিত করেছিল। সংস্থাটির মতে, ২০৩০ সালে বাংলাদেশে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা ১২ কোটি ৯৮ লাখে পৌঁছাবে- যা হবে জনগোষ্ঠীর ৭০ শতাংশ। কিন্তু জনমিতির এই সুফল কাজে লাগাতে হলে প্রত্যেক নাগরিককে যেমন দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে, তেমনি তাদের উপযুক্ত কাজের সংস্থানও করতে হবে।

আমরা মনে করি, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার ভিত ও মান শক্ত না করেই একের পর এক উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি হচ্ছে- যা সনদ বিতরণ করলেও দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে ব্যর্থ হচ্ছে। আর এ কারণে বাংলাদেশে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর বেকার থাকা সত্ত্বেও অনেক খাতে উচ্চ বেতন দিয়ে বিদেশি কর্মীদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। তাদের যুক্তি, দেশে দক্ষ জনশক্তির অভাব রয়েছে। এর অর্থ দাঁড়ায় আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা সময়ের চাহিদা মেটাতে পারছে না। ফলে এ অবস্থার অবসানের দিকেই সংশ্লিষ্টদের জোর দিতে হবে।

বিআইডিএসের প্রতিবেদনের সূত্র ধরে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, অর্থনীতিবিদ ও শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতাসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রধানত শিক্ষার নিম্নমানই এর জন্য দায়ী। তারা বলছেন, উচ্চশিক্ষার মান তলানিতে পৌঁছেছে। মানহীনতার পাশাপাশি প্রশিক্ষণের অভাব, দক্ষ জনবলের ঘাটতি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চাহিদা অনুযায়ী উপযুক্ত শিক্ষা দিতে না পারা ও শিক্ষায় কম বিনিয়োগ ইত্যাদি এর কারণ হিসেবে আলোচিত হচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা বলেন, বর্তমানে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তথা জিডিপি যে হারে বাড়ছে, সে অনুযায়ী দেশে কর্মসংস্থান হচ্ছে না। শ্রমবাজারের তুলনায় চাকরির বাজার ছোট হওয়ায় সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারীরাও চাকরি পাচ্ছেন না। তাদের মতে, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বেকারত্ব কমাতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশের চিত্র অনেকটাই বিপরীত। এ দেশে শিক্ষিতের বেকার হওয়ার আশঙ্কা অশিক্ষিতদের তুলনায় বেশি। বিষয়টি নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক।

শিক্ষা পদ্ধতি এমন হওয়া জরুরি যেখানে, প্রযুক্তিগত জ্ঞান, কারিগরি দক্ষতা বা ভাষাগত যোগাযোগে পর্যাপ্ত দক্ষতা অর্জন সম্ভব হবে। মনে রাখা দরকার, দেশের মেরুদন্ড হলো শিক্ষা তথা শিক্ষিত জনশক্তি। এদের দমিয়ে রাখলে, কর্মহীন ও সুযোগবঞ্চিত রাখলে দেশের মেরুদন্ড দুর্বল হয়ে পড়বে। তাই সময়োপযোগী শিক্ষা পদ্ধতির প্রসার ঘটিয়ে বেকারত্ব কমাতে সংশ্লিষ্টরা কার্যকর উদ্যোগ নেবে- এটাই প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে