শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সিলিন্ডার লিকেজ হয়ে অগ্নিকান্ড

কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে
নতুনধারা
  ১৩ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

প্রায়ই গ্যাস সিলিন্ডার থেকে দুর্ঘটনা ঘটে এবং হতাহতের খবর গণমাধ্যমে আসে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এ ধরনের দুর্ঘটনা অহরহই ঘটছে এবং এতে হতাহতের সংখ্যাও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। সঙ্গত কারণেই সৃষ্ট এ পরিস্থিতি এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় রান্না করার সময় গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজ হয়ে এক ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে স্বামী-স্ত্রীসহ চারজনের মৃতু্য হয়েছে। এছাড়া এ ঘটনায় অর্ধশতাধিক বসতঘর ও ঘরে থাকা মালামাল পুড়ে গেছে। তথ্য মতে, সোমবার ভোর ৫টার দিকে উপজেলার কালামপুর পূর্বপাড়া নব্বই কলোনিতে এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে।

ঘটনাটির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে চাই, এ ধরনের দুর্ঘটনা এবারই প্রথম নয়, এর আগেও বিভিন্ন সময়ে গ্যাস সিলিন্ডার থেকে দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং মৃতু্য হয়েছে। ফলে এসব ঘটনা পর্যবেক্ষণ করলে যে চিত্র পরিলক্ষিত হয় তা ভীতিপ্রদ বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। সঙ্গত কারণেই এর পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। এবারের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জানা যাচ্ছে, রান্নার সময় গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল। পরে তা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে দ্রম্নত আশপাশে থাকা বাড়িঘরে ছড়িয়ে পড়ে। কালিয়াকৈর ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিটের কর্মীরা ঘটনাস্থলে যায় এবং প্রায় দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণ করেন। অগ্নিকান্ডের সময় অধিকাংশই ঘুমিয়ে ছিলেন। অন্যরা বেরোতে পারলেও চারজন বেরোতে পারেননি। পরে তারা দগ্ধ হয়ে কক্ষের ভেতরেই মারা গেছেন।

বলা দরকার, বিভিন্ন সময়েই সিলিন্ডার লিকেজ হয়ে অগ্নিকান্ড কিংবা বিস্ফোরণের কারণে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। আমরা বলতে চাই, এ ধরনের ঘটনার মধ্যদিয়ে গ্যাস সিলিন্ডারগুলো নাগরিকদের জীবনের জন্য কতটা হুমকির হয়ে উঠেছে তা আমলে নেওয়া জরুরি। বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, নিম্নমানের সিলিন্ডার ও কিটস ব্যবহার এবং পাঁচ বছর পর পর গ্যাস সিলিন্ডার রিটেস্ট করার নিয়ম না মেনে যানবাহন, গৃহস্থালি কিংবা অন্য কাজে গ্যাস সিলিন্ডারের নামে জীবন্ত বোমা বহন করা হচ্ছে। আর প্রায়ই এসব গ্যাস সিলিন্ডারের কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। আর এতে হতাহতের সংখ্যাও নিতান্ত কম নয়। আমরা মনে করি, এ পরিস্থিতি অত্যন্ত আতঙ্কজনক। সঙ্গত কারণেই, সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, গ্যাস সিলিন্ডার থেকে যেভাবে দুর্ঘটনা ঘটছে তা আমলে নেওয়া এবং গ্যাস সিলিন্ডারের সঠিক মান রক্ষা করাসহ কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করা। মনে রাখতে হবে, বিভিন্ন সময়ে গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত এলপিজি সিলিন্ডার এবং যানবাহনের সিলিন্ডার থেকে দুর্ঘটনা ঘটছে। মানহীন সিলিন্ডার ব্যবহার করায় নিরাপদ রান্নাঘর যেমন হয়ে উঠেছে বিপজ্জনক স্থান, তেমনি যানবাহনের নিরাপত্তাও হুমকিতে পড়েছে। ফলে এ পরিস্থিতির অবসানই প্রত্যাশিত।

প্রসঙ্গত বলতে চাই, সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়টি এড়ানো যাবে না যে, অভিযোগ রয়েছে, বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও যানবাহনে ব্যবহৃত সিলিন্ডারগুলো পাঁচ বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও পুনঃপরীক্ষায় কেউ উদ্যোগী হয় না। এছাড়া সিলিন্ডার দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে বিপুলসংখ্যক সিএনজিচালিত যানবাহন চলাচল করছে এমন অভিযোগও বিদ্যমান। আর শুধু যানবাহনে নয়, বাসাবাড়িতেও গ্যাস সিলিন্ডারের কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। ফলে সিলিন্ডার ব্যবহারে সতর্ক ও সচেতন থাকার বিকল্প থাকতে পারে না। এছাড়া অবৈধ গ্যাস সংযোগ, গ্যাস লাইনের ছিদ্র থেকে গ্যাস ছড়িয়ে পড়াসহ নানাভাবে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। নির্দিষ্ট সময়ের পর গ্যাস সিলিন্ডার পরীক্ষা করা হয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা জরুরি। মনে রাখা দরকার, ভয়াবহ বিপর্যয় থেকে নিজেদের রক্ষা করতে হলে নজর থাকতে হবে এবং সচেতনতা বাড়াতে হবে। সচেতনতাবোধই পারে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে রক্ষা করতে।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, এবারের ঘটনাটি আমলে নিয়ে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে উদ্যোগ নিতে হবে। একই সঙ্গে সিলিন্ডার থেকে ঘটা দুর্ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি অবৈধ গ্যাস সংযোগের ক্ষেত্রেও ব্যবস্থা নিতে হবে। গ্রাহক ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে গ্যাস ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতকর্তা ও সচেতনতার পরিচয় দিতে হবে। গ্যাস সিলিন্ডার থেকে যে কোনো ধরনের দুঘর্টনা এড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে