সংঘাত-সহিংসতা রোধ করতে হবে

পৌর নির্বাচন

প্রকাশ | ১৬ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে এবং নিয়ম-নীতি মেনে যথাযথ প্রচার-প্রচারণা চালানো হবে এমনটি প্রত্যাশিত হলেও, নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতার ঘটনা বিভিন্ন সময়েই ঘটে যা অত্যন্ত উৎকণ্ঠার। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশজুড়ে কয়েকধাপে দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে পৌরসভা নির্বাচন। জানা যাচ্ছে, করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও এ নির্বাচন দিন দিন সহিংস হয়ে উঠছে যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলেই প্রতীয়মান হয়। এ ক্ষেত্রে বলা দরকার, প্রথম ধাপের ভোট সুষ্ঠু হলেও এরপর সহিংসতায় একাধিক ব্যক্তি নিহত ও অনেকে আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে খবরে উঠে এসেছে, যা সামগ্রিক অর্থেই আশঙ্কাজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। আমরা বলতে চাই, যখন পৌর নির্বাচনকে ঘিরে দেশে সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা হঠাৎ বাড়ছে- তখন এটি এড়ানোর সুযোগ নেই। নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, সহিংস ঘটনা রোধে কঠোর উদ্যোগ গ্রহণ করা। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, সহিংসতার ঘটনা ঘটছে- বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা লক্ষণীয়। তথ্য মতে, এতে অন্তত তিন জনের প্রাণহানিসহ দুই শতাধিক ব্যক্তি হতাহত হয়েছে। এছাড়া প্রচার-প্রচারণায় বাধা, প্রতিপক্ষের নির্বাচনী ক্যাম্পে অগ্নিকান্ড-ভাঙচুর, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে হামলা ও লুটপাটের ঘটনাও ঘটেছে। আমরা বলতে চাই, নির্বাচনকেন্দ্রিক এ ধরনের ঘটনা ঘটলে তা স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচনী উৎসবের আমেজকে স্তব্ধ করে দেয়। তার বদলে চরম উদ্বেগ-আতঙ্ক দেখা দেয়, যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। জানা যাচ্ছে, সহিংসতা, সংঘাত পরিস্থিতিতে প্রার্থীদের একনিষ্ঠ নেতাকর্মী ও ঘনিষ্ঠ স্বজনরা প্রচার-প্রচারণার মাঠে থাকলেও সাধারণ ভোটারদের বেশিরভাগই নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। নির্বাচনী সভা-সমাবেশে যোগ দেওয়া দূরে থাক, প্রার্থীরা ভোট চাইতে দুয়ারে গেলেও অনেকে সরে থাকছেন। এমনকি পক্ষপাতিত্বের অজুহাতে প্রতিপক্ষের ক্যাডাররা ভোটারদের ওপর চড়াও হয় কিনা এ ভয়ে ভোট দিতে যাওয়া ঠিক হবে কিনা তা নিয়েও অনেকে সংশয়ে রয়েছেন বলেও খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে। আরর্ যাব-পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এ উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টির কথা নিঃসংকোচে স্বীকার করেন। তারা জানিয়েছেন, ভোটের মাঠের পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে তারা প্রাণান্তকর চেষ্টা চালাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে উৎকণ্ঠার বিষয় হলো, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে উপেক্ষা করেই একপক্ষ অন্যপক্ষের সঙ্গে সংঘাত-সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থীদের সঙ্গে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা বেশি ঘটছে বলে জানা যাচ্ছে। আমরা বলতে চাই, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংস পরিস্থিতি কিংবা সংঘাতের ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সঙ্গত কারণেই সংশ্লিষ্টদের সৃষ্ট পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনে কঠোর হতে হবে। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে- এ ধরনের বিষয়গুলো এড়ানোর সুযোগ নেই। এছাড়া রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নির্বাচনকে ঘিরে পৌর এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানো হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। আর রাজনৈতিক দলগুলো তাদের বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে বেশিরভাগ নির্বাচনী এলাকায় ভোটের প্রচার-প্রচারণার উৎসব সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। আমরা মনে করি, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের পর্যবেক্ষণ আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরকেই। সর্বোপরি বলতে চাই, এ ধরনের সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে নির্বাচনী উৎসবে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এমনিতেই করোনার কারণে ভোটারদের ভোটকেন্দ্র বিমুখ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে, আবার যদি নির্বাচনকেন্দ্রিক এ ধরনের সংঘাত-সহিংসতা অব্যাহত থাকে তবে ভোটারদের উপস্থিতি উদ্বেগজনক হারে কমে যাওয়া এবং ভোটারদের উপস্থিতি কম হলে ভোট ডাকাতি ও জাল ভোটের সংখ্যা ভয়াবহভাবে বাড়বে এমন আশঙ্কার বিষয়ও উঠে এসেছে। যার ফলে ভোটারদের প্রকৃত ভোটে সৎ ও যোগ্য জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ পুরোপুরি হারিয়ে যেতে পারে। যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। সঙ্গত কারণেই সংশ্লিষ্টরা সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সহিংসতা-সংঘাতের মতো ঘটনা রোধে যেমন উদ্যোগী হবে, তেমনি পৌর নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত করবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।