বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
পাঠক মত

বাঙালি জাতির প্রাপ্তির সাল হয়ে উঠুক ২০২১

নতুনধারা
  ১৭ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

কালের পরিক্রমায় হারিয়ে গেল আরও একটি বছর। গুনে গুনে ৩৬৫ দিন শেষ করে ফেললাম। কী পেলাম আর কী পেলাম না সে হিসাব আর করতে চাই না। চাই না প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির হিসাব মেলাতে। এবার চাইব নতুনের কেতন ওড়াতে। নতুন বছর অর্থাৎ একুশ সালটা যেন একটি প্রত্যাশাপূর্ণ বছর হয় সেই স্বপ্ন বুনতে চায় পুরো বাঙালি জাতি। নতুন এই বছর নিয়ে স্বপ্ন দেখার কারণও আছে। এই সালটা আসলেই প্রাপ্তির সাল। হয়তো প্রাপ্তিতে প্রাপ্তিতে ভরে উঠবে ২০২১। মানুষের মন থেকে বিশের বিষ নামানোর জন্য এসব প্রাপ্তি আসলেই জরুরি।

করোনার ভ্যাকসিন

২০২১ সালের মধ্যে করোনার ভ্যাকসিন আসবে বলে বিশ্বের অনেক দেশ বলেছিল। তবে সেটা বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলা দিয়ে গেছে সবার কাছে। সেই সবকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ঠিকই ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়েছে। যা ইতোমধ্যে মানবশরীরে প্রয়োগও করা হয় সফলভাবে। আর এই ভ্যাকসিন ২০২১ সালের জানুয়ারি-ফেব্রম্নয়ারির মধ্যেই বাংলাদেশের মানুষ পাবে। এটা সত্যিই একটি বিরাট প্রাপ্তির খবর। এই প্রাপ্তি বড্ড প্রয়োজনীয় প্রাপ্তি। এই ভ্যাকসিন আবারও মানুষের চাপাকান্না বন্ধ করে মুখে হাসি ফোটাতে পারবে।

ভিশন-২১

ভিশন ২০২১-এর প্রধান লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হলো নির্ধারিত সময়ে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করা, যেখানে চরম দারিদ্র্য সম্পূর্ণভাবে বিমোচিত হবে। সেজন্য একগুচ্ছ সহায়ক কাজ নিশ্চিত করতে হবে। যেমন- গণতন্ত্র ও কার্যকর সংসদ প্রতিষ্ঠা, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ এবং জনপ্রতিনিধিত্বমূলক রাজনৈতিক অবকাঠামো বিনির্মাণ, রাজনৈতিক পক্ষপাতবিবর্জিত আইনের শাসন নিশ্চায়ক সুশাসন প্রতিষ্ঠা, রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নয়ন, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ে তোলা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং সমঅধিকার নিশ্চিতসহ এমনভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের রূপরেখা প্রণয়ন করা যাতে মৌলিক চাহিদাসমূহ পূরণের নিশ্চয়তা থাকে। জনগণ ও শ্রমশক্তির সুরক্ষার বন্দোবস্ত, দারিদ্র্য দূরীকরণ ব্যবস্থা, খাদ্য, পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাব্যবস্থা, জ্বালানি ও বিদু্যতের নিশ্চয়তা, ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন, আবাসন, পরিবেশ, পানিসম্পদের নিরাপত্তা এবং সার্বিকভাবে জনজীবন ও সম্পদের সুরক্ষা, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় করা (যাতে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত থাকে, জাতীয় সংস্কৃতি ও পররাষ্ট্রনীতি দৃঢ়তর হয়)। ভিশন-২০২১ বাস্তবায়ন সম্ভব হলে সত্যিকার অর্থে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নে সোনার বাংলা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

স্বাধীনতার ৫০ বছর

২০২১ সালের সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। বাঙালি জাতির জন্য এর চাইতে বড় আনন্দের দিবস কী হতে পারে! এটা শুধু বাঙালি জাতির জন্য নয়, প্রতিটি জাতির জন্যই প্রত্যাশিত আনন্দের বিষয়। স্বাধীনতার ৫০তম বছরে এসে বাংলাদেশ একটি আধুনিক দেশের রূপ নিয়েছে এটাও অনেক বড় প্রাপ্তি এ জাতির জন্য। ১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর একটি স্বাধীন মানচিত্র পেলেও এই দেশ ছিল একটি গরিব দেশ। এক সময়েরে তলাবিহীন ঝুড়ির মতো এই দেশ আজ কতটা সমৃদ্ধ তা নিজ চোখেই উপলব্ধি করতে পারবে যে কোনো নাগরিক। তাই নিঃসন্দেহে এটা ২১ সালের অন্যতম একটি প্রাপ্তি।

অবকাঠামোগত উন্নয়ন

স্বাধীনতার ৫০ বছরে এই বাংলাদেশে অনেক ইতিহাস তৈরি হয়েছে। সেসব ইতাহসের সঙ্গে এই বাংলাদেশও পরিবর্তন হয়েছে। বিগত দশ বছর এদেশে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ছিল দৃশ্যমান। যার মধ্যে পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, বঙ্গবন্ধু টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদু্যৎকেন্দ্র, মিরসরাই ইকোনমিক জোন ছিল উলেস্নখযোগ্য। এ ছাড়া আরও অনেক প্রকল্প বর্তমান সরকার হাতে নিয়েছে। পদ্মা সেতু গত বছরের শেষদিকে দৃশ্যমান হলেও মূলত এ বছরই পদ্মা সেতুর সুফল পাবে মানুষ। তাই এটাও একুশ সালের একটি বড় প্রাপ্তি। সেই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু টানেলের কাজও এই সালে সমাপ্ত হওয়ার স্বপ্ন দেখা যায়। সুতরাং বলা যায় অবকাঠামোগত অনেক অনেক উন্নয়ন কাজ ২০২১ সালে সমাপ্ত এবং শুরু হবে।

বেকারত্ব

বাংলাদেশে বেকারত্ব বর্তমানে একটি জাতীয় সমস্যা। এই সমস্যা সমাধান অতীব জরুরি। নিকট অতীতে প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেছেন বেকারত্ব দূর করতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন। এটা যদি বাস্তবায়ন হয় তবে এদেশের লাখ লাখ বেকার তরুণের ভাগ্য খুলবে। ফিরবে হাসির জোয়ার। স্বাধীনতার ৫০ বছরের এই সালটি যেন বেকারদের জন্য আশীর্বাদ হয় সেই কামনা করছি।

দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠন

বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশের দুর্নীতি ছিল দৃশ্যমান। এই দুর্নীতি ছিল ছোট থেকে বড় বড় সেক্টরেও। করোনার সময় মাস্ক, পিপিই নিয়ে ছিল দুর্নীতি, ছিল করোনার সার্টিফিকেট নিয়ে দুর্নীতি, ছিল পাপিয়া-সম্রাটদের দুর্নীতির গল্প। শুধু তা-ই নয়, বালিশকান্ড, পর্দা কান্ডও এদেশের মানুষ ভুলতে পারেনি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই দুর্নীতির উৎসব থামবে কবে? নতুন বছর সরকার যেন এই বিষয়ে আরও নজর দেয় সেই প্রত্যাশা রইল।

দারিদ্র্য

বাংলাদেশ আজ দারিদ্র্যের চরম শিখর থেকে উঠে আসতে পেরেছে। এদেশে এখন না খেয়ে মারা যায় না। যদিও দরিদ্র জনগোষ্ঠী এখনও এদেশে বিদ্যমান। কিন্তু দারিদ্র্য বিমোচনে শেখ হাসিনার সরকার বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। যা সত্যি প্রশংসনীয়। তবে সরকারের কাছে প্রত্যাশা দেশের খাবার বিক্রি করার ধরনে পরিবর্তন আনবে। দরিদ্র জনগোষ্ঠী যেন সব খাবার তাদের স্বল্প মূল্যের মধ্যে সংগ্রহ করতে পারে সে-ব্যবস্থা করতে হবে। খাদ্য মজুত করা থেকে বিরত থাকতে হবে সবার। ফ্রিজে মাছ-মাংস জমিয়ে না রেখে সবাই যাতে স্বল্প দামে অল্প অল্প পায় সে-ব্যবস্থা নিতে হবে। আপনার আমার সবার প্রয়োজন একটি সুন্দর উন্নত দেশ গঠনে এমন ভূমিকা রাখা। তবেই এদেশ হবে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ। ২০২১ সালের সরকার অবশ্যই এই দিকটির প্রতি নজর দেবে এমন প্রত্যাশা রাখা দোষের কিছু নয়।

শিক্ষা

পুরো বিশ্বের মতো বাংলাদেশও করোনার কঠিন সময় পার করেছে। করোনায় সবকিছু যেমন থমকে গেছে তেমনি থমকে গেছে শিক্ষা-ব্যবস্থা। কিন্তু দুঃখের বিষয় সবকিছু আবার শুরু হয়েছে। যেখানে থমকে ছিল সেখান থেকেই সবাই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। অথচ শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান এখনো খোলার নাম নেই। তাই বলা যায় ২০২০ শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অভিশপ্ত বছর। সেই অভিশাপ কাটিয়ে নতুন বছরে শিক্ষার আলো যেন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে সেই প্রত্যাশা রাখা যায়। এবং এই প্রত্যাশা প্রাপ্তিতে রূপ নেবে এটা নিশ্চিত। '২১ সাল যেন শিক্ষর্থীদের জন্য ঘুরে দাঁড়ানোর সাল হয় সেই কামনা করছি।

সুশাসন প্রতিষ্ঠা

একটি রাষ্ট্র এগিয়ে যাওয়ার পেছনে সর্বপ্রথম যে বিষয়টি প্রয়োজন সেটা হচ্ছে সুশাসন প্রতিষ্ঠা। আমি অকপটে বলতে পারি বাংলাদেশে সুশাসন এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তাই সরকারের কাছে প্রথম এবং প্রধান দাবি হিসেবে এদেশের মানুষ প্রত্যাশা করে সুশাসন এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। যদিও সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বেশকিছু ন্যায়বিচারের নিদর্শন দেখিয়েছেন। এখনো অনেক মা তার সন্তান হত্যার বিচার পায়নি, অনেক মা তার ধর্ষিতা মেয়ের বিচার পায়নি। অনেক ভাই তার বোন হত্যার বিচার পায়নি, অনেক বোন তার গুম হয়ে যাওয়া ভাইকে ফেরত পায়নি। এমন অনেক অনেক বিচার নিয়ে শত শত মানুষ রোজ কান্নার মিছিলে যোগ দেয়। আধুনিক দেশের মানুষের চোখে যদি এখনো জল পড়ে তবে সে-দেশ প্রকৃত অর্থে আধুনিক হতে পারে না। তাই সরকারের কাছে প্রত্যাশা এদেশে ন্যায়বিচার এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। মুজিববর্ষের সার্থকতা এবং স্বাধীনতার ৫০ বছর স্মরণীয় হয়ে উঠবে।

নারীর ক্ষমতায়ন ও সমধিকার প্রতিষ্ঠা

বাঙালি জাতি নারীকে কী মনে করে সেটা আমার এখনো বোধগম্য নয়। কারণ এ জাতি নারীকে না পারে সম্মান দিতে, না পারে সমান অধিকার দিতে। যদিও নারী জাতিকে সমান অধিকার দেওয়ার আমরা কেউ নই। নারীর অধিকার নারীকেই আদায় করতে হবে। কিন্তু পেশিশক্তির কাছে নারী প্রতিদিন প্রতি রাত হেরে যাচ্ছে। নারীর প্রতি ধর্ষণ, নির্যাতন, হত্যা এসব রোজই চলছে। নারীকে এ জাতি ভোগ্যপণ্য করে তুলছে। বাস-টেম্পো কিংবা সিএনজি কোথাও নারী নিরাপদ নয়। স্কুল, কলেজ, মাদ্রসা সেখানেও নারী আজ অনিরাপদ। এই ক্রান্তিকাল থেকে নারী জাতি মুক্তি কবে পাবে? সরকার নতুন আইন করেছে, নারীর প্রতি আরও সহনশীল এবং সহমর্মী হয়েছে। নারীবান্ধব এই সরকারপ্রধানও নারী। নারীদের জন্য এই সরকার সবসময় আন্তরিক। কিন্তু দিনশেষে নারীরা কি নিরাপদ? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর পাই না। আশা রাখছি একুশ সালে নারীর প্রতি সহিংসতার মাত্র কিছুটা সহনশীল হবে। বলতে লজ্জা লাগছে, তবুও বলতে হয় এদেশে নারীর মুক্তি মিলছে না। কেন বলছি সেটা প্রতিদিন পত্রিকা আর খবর দেখলেই বুঝবেন। এতো কিছুর মধ্যেও অনেক প্রাপ্তি দিয়ে '২১ সাল রং ছড়াবে বাংলাদেশে। তাই আসুন আমরা প্রত্যেকে যার যার অবস্থান থেকে এই দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করি। একটি সুন্দর চমৎকার আধুনিক দেশ গড়তে সহযোগিতা করি। ২০২১ সালকে রাঙিয়ে তুলি আলোয় আলোয়।

আজহার মাহমুদ

চট্টগ্রাম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে