শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
পাঠক মত

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণার অনুকূল পরিবেশ জরুরি

নতুনধারা
  ১৭ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষার উন্নয়ন দিয়ে একটি জাতি সব দিক থেকে এগিয়ে যেতে পারে। একটি অন্ধকার ভূখন্ডে থাকা জাতিকে শিক্ষাই দেখাতে পারে সোনালি সুন্দর সকাল। সেজন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণে প্রতিষ্ঠা করা হয় স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মাপকাঠি বলা হয় এর শিক্ষার পরিবেশ, গবেষণাগার ও পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা। বর্তমানে সময়ের সঙ্গে পালস্না দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়লেও, বাড়ছে না গুণগতমান। একটি জাতিকে এগিয়ে নিতে যেমন বিশ্ববিদ্যালয় প্রয়োজন, তেমনি এর গুণগত মানকে এগিয়ে নিতে প্রয়োজন শিক্ষার পরিবেশ, গবেষণাগারসহ পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষা ও গবেষণার পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা তৈরি করতে না পারায় বিশ্বর্ যাঙ্কিংয়ে ১ হাজারের মধ্যে ও স্থান পায় না। আমরা যদি একটু সুক্ষ্ণভাবে নজর দিই তাহলে বুঝতে পারব, বিশ্ব মানের একটা বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে আমাদের বাধা কোথায়। আমরা প্রতিবন্ধকতার দিকে তাকালে কিছু কারণ দেখতে পাই তা হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বাজেট, শিক্ষা ও গবেষণার প্রতিকূল পরিবেশ, হরহামেশাই নিত্যনতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, গবেষণায় জবাবদিহিতা না থাকা, অন্যের কপি করা গবেষণাপত্র, দুর্নীতিসহ সর্বশেষ ছাত্র ও শিক্ষকদের কালো রাজনীতি। বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষনীয়। ছাত্র ও শিক্ষকরা যতটা না গবেষণার পিছনে ছুটছেন তার চেয়ে বেশি ছুটছেন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের পেছনে। কারণ আজ পদমর্যাদা বৃদ্ধি যতটা গবেষণার ওপর নির্ভর করে তার চেয়ে বেশি নির্ভর করে রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ডের ওপর। এমন অশুভ রাজনীতির হিংস্র ছোবল থেকে রক্ষা করা না গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা যত বাড়ানো হোক না কেন গুণগতমান কমতে থাকবে দিনকে দিন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার বাজেটও এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। মোট বাজেট অধিকাংশই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সৌন্দর্য বৃদ্ধি প্রকল্পে বরাদ্দ দিয়ে মাত্র সামান্য গবেষণার জন্য বরাদ্দ করা হয়। আবার সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও গবেষণা প্রকল্পে যা বরাদ্দ রাখা হয় তাও শেষ হয় দুর্নীতির মাধ্যমে। অথচ উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে গবেষণার ওপর বেশি জোর দেওয়া উচিত। প্রতিবছর নিয়ম করে বৃদ্ধি পাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা। একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার পর তার অবকাঠামো, শিক্ষা ও গবেষণার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত না করতেই আরও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার অনূকূল পরিবেশ তৈরিতে বিঘ্ন ঘটে। আমাদের দেশের আরও একটি অসুস্থ সংস্কৃতি বিদ্যমান তা হলো জবাবদিহিতা না থাকা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মানোন্নয়নে পথে বর্তমানে এটি প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষকরা বর্তমানে তাদের পদোন্নতির জন্য যতটা গবেষণার করা দরকার ততটুকুই করে থাকে। পদোন্নতি হলে গবেষণাকে তারা ঐচ্ছিক বিষয় মনে করে। একটি দেশের উন্নয়নের স্বার্থেই যে গবেষণা সেটা শিক্ষকদের নিশ্চিত করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় একটি দেশকে ধারণ করে। বিশ্বের বুকে দেশের প্রতিনিধিত্ব করে। তাই দেশ ও জাতির অগ্রগতির জন্য শিক্ষা ও গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা ও যথোপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

আরিফুল ইসলাম

শিক্ষার্থী

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে