শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
পাঠক মত

সড়ক দুর্ঘটনামুক্ত বাংলাদেশ চাই

নতুনধারা
  ১৭ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

সড়ক দুর্ঘটনা বর্তমান সময়ের আলোচিত ও মর্মস্পর্শী ঘটনা। এ দুর্ঘটনায় প্রতিনিয়ত হারিয়ে যাচ্ছে হাজারো মানুষ, ধূলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে হাজারো স্বপ্ন। পত্রিকার পাতা খুললেই এ সভ্যতার প্রমাণ মেলে। সড়ক দুর্ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে আজ আমাদের নিরাপত্তার প্রধান হুমকি। প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। ফলে অনেকেই পঙ্গুত্ববরণ করে পরিবার ও সমাজের বোঝা হয়ে দূর্বিষহ জীবনযাপন করাছে। দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটছে কিন্তু দুর্ঘটনা কমছে না।

সড়কপথ হয়ে উঠেছে বিপজ্জনক। সড়ক দুর্ঘটনা কিছুতেই কমছে না, বরং দিন দিন তা বেড়েই চলেছে। সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা মহামারি রূপ নিয়েছে। বলা চলে এটি একটি জাতীয় দুর্যোগ। একটি ঘটনার রেশ না কাটতেই আরেকটি ঘটনা ঘটছে।

প্রতিটি জীব বা প্রাণীকে মৃতু্যর স্বাদ ভোগ করতে হবে। কিন্তু নিশ্চয়ই পথের বলি হয়ে কেউ মরে চায় না। এদেশে এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে সড়ক-মহাসড়কের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া নিরাপদ নয়। কেননা কখন চাকার নিচে চাপা পড়ে সে শঙ্কায় থাকতে হয়। নিজের সচেতনতা নিজেরই হওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। বাস, ট্রাক দুর্ঘটনার পাশাপাশি বাইক দুর্ঘটনাও ব্যাপকহারে বেড়ে গেছে। বিশেষ করে তরুণ, যুবকদের অনেকে শখের বশে বেপরোয়া হয়ে বাইক চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পতিত হতে হয়। আর প্রতিনিয়ত অসংখ্য মানুষকে নানা কাজে বাইরে যেতে হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে হয় শিক্ষার্থীদের। পথে দুর্ঘটনার ভয় থাকলেও এক প্রকার জানবাজি রেখেই চলতে হয়। কোনো উপায় নেই। গাড়িচালকদের কথা আর কী বলব? যেভাবেই হোক অপর গাড়িকে ওভারটেক করে এগুতে হবে'- এমন মানসিকতা নিয়েই তারা গাড়ি চালান অনেক চালক।

অপ্রশস্ত পথ ব্যবস্থাও বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। দেশে মানুষের প্রয়োজনে বাড়ছে যানবাহনের সংখ্যা। প্রতিদিনই বহুসংখ্যক নতুন গাড়ি রাস্তায় নামছে। পালস্না দিয়ে বাড়ছে দুর্ঘটনাও। এসব দুর্ঘটনায় মৃতু্যর পাশাপাশি অসংখ্য মানুষ সারাজীবনের জন্য পঙ্গুত্ববরণ করছে। সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতু্য শুধু একটি পরিবারে গভীর শোক, ক্ষত সৃষ্টি করে না, আর্থিকভাবেও পঙ্গু করে ফেলে ওই পরিবারকে। কোনো কোনো দুর্ঘটনায় পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি প্রাণ হারান। তখন ওই পরিবারের যে কী অবস্থা হয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর যারা পঙ্গুত্ববরণ করে তাদের পরিবারের অবস্থা আরও করুণ, আরও শোচনীয়। বিষয়গুলো আমাদের ভাবা উচিত বলে আমি মনে করি। সরকারি, বেসরকারি সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট যানবাহন কর্তৃপক্ষকে নিহত ও আহত হওয়া পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। করতে হবে সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা। আমরা সড়ক দুর্ঘটনামুক্ত একটি বাংলাদেশ প্রত্যাশা করি। সড়কে এই মৃতু্যর মিছিল কবে থামবে? আর কত প্রাণ ঝরবে? মৃতু্যফাঁদে পরিণত হওয়া সড়কগুলোকে যেভাবেই হোক নিরাপদ করতে হবে সবার জন্য।

বিশেষ করে গাড়িচালকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরির পদক্ষেপ নিতে হবে। নিষিদ্ধ করতে হবে গাড়ি চালানোর সময় চালকদের মোবাইলে কথা বলাকে। আইনে পরিবর্তন এনে অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃতু্যদন্ড বিধান কার্যকর করতে হবে। রাস্তায় যেন কোনো ধরনের দুর্বল ইঞ্জিনের যান চলাচল করতে না পারে সে ব্যাপারে কঠোর হতে হবে। রাস্তার মধ্যে গাড়ি ঘোরানোর মতো অন্যায়কে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। নিয়ন্ত্রণ করতে হবে যানবাহনের বেপরোয়া গতি। নেশা করে যেন কোনো চালক গাড়ি চালাতে না পারে সেদিকেও দৃষ্টি রাখতে হবে। পালস্না দিয়ে 'ওভারটেকিং' করা বন্ধ করতে হবে। চোখে ঘুম নিয়ে গাড়ি চালানো থেকে বিরত থাকতে ড্রাইভারদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। কোনো অযোগ্য ও অদক্ষ চালক যেন লাইসেন্স না পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি গাড়িচালকদের জন্য নূ্যনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করা গেলে ভালো হয়। সবচেয়ে জরুরি হলো কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারি বৃদ্ধি।

সড়ক দুর্ঘটনা হয় না এমন দেশ নেই। কিন্তু দুর্ঘটনার সংখ্যা এবং ক্ষয়ক্ষতি যত কমিয়ে আনা যায় সেটিই লক্ষ্য হওয়া উচিত। আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে, সময়ের সমষ্টি হলো জীবন। সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। একটি দুর্ঘটনা সারাজীবনের কান্না। আসুন সড়ক আইন মেনে চলি, নিরাপদে গন্তব্যে ফিরি। দুর্ঘটনামুক্ত নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হোক- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

\হ

সিনথিয়া সুমি

শিক্ষার্থী

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে