বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
পাঠক মত

গ্রামীণ কুটির শিল্প ও বাঙালির ঐতিহ্য

নতুনধারা
  ১৭ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

কোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধনের জন্য শিল্পের ব্যাপক সম্প্রসারণ প্রয়োজন। আর এই শিল্পের মধ্যে অন্যতম হলো কুটির শিল্প। প্রাচীনকাল থেকেই বাংলার মানুষ এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত ছিল। যেহেতু এই শিল্পগুলোয় ভারী যন্ত্রপাতি প্রয়োজন হয় না। ঘরোয়া পরিবেশে এই শিল্প তৈরির উপকরণ সংগ্রহ করা যায়। এই উপকরণগুলো দিয়ে শিল্পী সুন্দর সুন্দর শিল্প তৈরি করে। বাংলাদেশ গ্রামপ্রধান দেশ হওয়ায় ফলে এখানকার অধিকাংশ মানুষ গ্রামে বসবাস করে। আর যারা গ্রামে বসবাস করে তাদের অধিকাংশ মানুষই কৃষিকাজ করে। আর এসব কৃষক তাদের কৃষি কাজের পাশাপাশি নানা রকম সৌখিন জিনিস তৈরি করে। যা তাদের বাড়তি আয়ের একটা মাধ্যম হিসেবে পরিগণিত হয়। আর এসব কুটির শিল্পে তারা সাধারণত মৃৎশিল্প বাঁশ-বেত ঝুড়ি ইত্যাদি তৈরি করে। এবং এর পাশাপাশি অনেকে ঘরোয়া পরিবেশে তাঁত দিয়ে কাপড় তৈরি করে। কিন্তু বর্তমানে দুঃখের বিষয় হচ্ছে এসব শিল্প গ্রাম থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। আগের মতো এখন আর গ্রামের মানুষ এসব শিল্পে কাজ করে না। তারা কৃষি কাজের পাশাপাশি বিকল্প হিসেবে নানারকম কলকারখানায় কাজ করে অনেকে বাড়ি-ঘর নির্মাণে কাছে কাজ করে। যার ফলে এসব কুটির শিল্পগুলো কালের অতল গহ্বরে হারিয়ে যাচ্ছে। একটা সময় ছিল যখন এই বাংলার মুসলিম কাপড় ইউরোপ এবং আরব বিশ্বে সমাধিক পরিচিত। ইংল্যান্ডের শিল্প বিপস্নবের ফলে এসব মসলিন কাপড় জায়গা দখল করে নেয় তাদের তৈরি করা রং-বেরঙের চিকন মিহি কাপড়। যার ফলে মুসলিম কাপড়ের শিল্প হারিয়ে যায়। আগের দিনে মানুষ নিজের বাড়িতেই তারা তাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় সব উপকরণ তৈরি করত। কিন্তু এখন এসব কালের অতল গহ্বরে হারিয়ে যাচ্ছে। বাঁশ এবং বেতের জায়গা দখল করে নিয়েছে পস্নাস্টিক সামগ্রী। যার ফলে শিল্পগুলো গ্রামবাংলায় আর তেমন চোখে পড়ে না। এবং এসব পণ্য আমদানি করার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা খরচ করতে হয়। যা দেশের অর্থনৈতিক বিপর্যয় কারণ হিসেবে পরিগণিত। আমরা চাইলেই কুটির শিল্পের মাধ্যমে ঘরোয়া পরিবেশে পণ্য উৎপাদন করে ব্যবহার করতে পারি। আমদানিনির্ভর অর্থনীতি থেকে মুক্তি লাভ করতে পারে। যা দেশের অর্থনৈতিক দিক দিয়ে সফল করার ক্ষেত্রে অনেকটাই কার্যকরী হিসেবে বিবেচিত। বিসিকের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশ কুটির শিল্পে বছরে ৩৯ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকার পণ্য উৎপন্ন হয়। মূল্য সংযোজন হয় ৩১ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা। যা দেশের জিডিপিতে যোগ হয়। আর বাংলাদেশে প্রতিবছর কুটিরশিল্পে ১৭ লাখ কর্মক্ষম লোক যোগ হয়। যা বেকার সমস্যা সমাধানের অন্যতম একটা মাধ্যম বলে বিবেচিত। তাই সরকারকে কুটির শিল্প রক্ষায় সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে।

জাফর ইসলাম

শিক্ষার্থী

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে