বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
স্বচ্ছতা থাকতে হবে

জব্দ করা অর্থ

নতুনধারা
  ১৮ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

নানা অনিয়ম প্রতারণা ও দুর্নীতির কারণে দেশে প্রচুর পরিমাণ অর্থ জব্দ হচ্ছে। অবাক ব্যাপার যে, জব্দ হওয়া অর্থের প্রকৃত পরিমাণ সম্পর্কে একটি বিস্তারিত চিত্র কারও কাছেই নেই। বিষয়টি নিয়ে সরকারের কয়েকটি সংস্থা কাজ করে, সঙ্গত কারণে এ ব্যাপারে সম্মিলিত তথ্য পাওয়া যায় না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। অর্থ জব্দের পর যখন মামলা হয়, তখন দুদক, ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট কিংবা অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এই অর্থের তথ্য আদালতে উপস্থাপন করতে হয়। নগদ অর্থ জব্দ করার ক্ষেত্রে আদালত নির্ধারণ করে যে ওই অর্থ কোথায় এবং কার জিম্মায় রাখা হবে।

সম্প্রতি অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত পি কে হালদারের মালিকানাধীন চারটি প্রতিষ্ঠানের ৯৬০ কোটি টাকা জব্দ করা হয়েছে। এর আগে দুর্নীতি এবং ক্যাসিনোবিরোধী আলোচিত অভিযান এবং আরও কিছু অপরাধের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিপুল পরিমাণ অর্থ জব্দ করেছে। সেই সঙ্গে জ্ঞাতউৎস বহির্ভূত আয়, দুর্নীতি কিংবা মানিলন্ডারিংয়ের মতো অপরাধে জড়িত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অর্থও জব্দ করা হয়। কিন্তু এই যে অর্থ বা টাকা জব্দ করা হয়, কী কারণে তা করা হয়? আর শেষ পর্যন্ত জব্দ টাকার গন্তব্যই বা কোথায়? হাইকোর্টে উপস্থাপিত তথ্যের বরাত দিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান আইনজীবী জানান যে, ২০২০ সাল পর্যন্ত নগদ অর্থ এবং সম্পত্তি মিলিয়ে দুদকের কাছে ৬০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকার জব্দকৃত অর্থ রয়েছে। সাধারণভাবে বলা যায়, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নগদ অর্থ কিংবা ব্যাংকে থাকা অর্থ বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিংবা দুর্নীতি দমন কমিশন জব্দ করতে পারে। সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো না কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ থাকতে হবে। আইন বহির্ভূত কর্মকান্ডের অভিযোগে মামলা দায়েরের পরে অর্থ জব্দ করা হতে পারে, আবার কোনো ক্ষেত্রে মামলা দায়েরের আগেও অভিযান চালানোর সময় অর্থ জব্দ করা হয়। কিন্তু দ্বিতীয় ক্ষেত্রে অর্থ জব্দ করার সঙ্গে সঙ্গে অবশ্যই মামলা দায়ের করা হয়।

তবে যতদিন পর্যন্ত মামলার সুরাহা না হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত ওই জব্দকৃত অর্থ কেউ ব্যবহার করতে পারবে না। জব্দ করা টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হলেও রাষ্ট্র সেই অর্থ খরচ করতে পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আদালত এ ব্যাপারে রায় দেয় এবং রাষ্ট্রকে জব্দ করা অর্থ ব্যবহারের অনুমতি দেয়। অনেক ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি প্রমাণ করতে পারে যে, তারা নির্দোষ, সেক্ষেত্রে আদালতের রায় সাপেক্ষ তারা জব্দ অর্থ ফেরত পেতে পারে। মানিলন্ডারিং বা টেরর ফাইন্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে যদি অভিযোগ আদালতে প্রমাণিত হয়, তাহলে আইন অনুযায়ী অপরাধীর শাস্তি হয়। এক্ষেত্রে কারাদন্ডের শাস্তি হলে অপরাধীর ৪-১২ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। তবে মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ প্রমাণিত হলে জব্দ করা অর্থের দ্বিগুণ পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। ওয়ান ইলেভেনের সময় প্রচুর পরিমাণ অবৈধ অর্থ জব্দ করা হয়েছিল। ওই অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।

আমরা মনে করি, জব্দ হওয়া অর্থ রাষ্ট্রীয় কর্মকান্ডে ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকতে হবে। পাশাপাশি দুদকসহ সরকারের অন্যান্য সংস্থাকে অবৈধ অর্থ উদ্ধারের ব্যাপারে আরো সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। সচেতন মানুষ মনে করে দেশের ব্যাংকগুলোতে যে পরিমাণ অর্থ রয়েছে, অবৈধ অর্থ তার চেয়ে বেশি। সুতরাং সরকারের কার্যকর পদক্ষেপই এ ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে